যে পথে মানবিক সমাজ
বর্তমান সময়ে পৃথিবীর অনেক শাসকই উদার মানবিক সমাজ বিনির্মাণের পথে হাঁটছেন না। কিন্তু এটাই একমাত্র চিত্র নয়, এর বিপরীতে কোন কোন দেশের জনগণ শুধু মানবিক সমাজ বিনির্মাণের আকাক্সক্ষাই প্রকাশ করছে না, চ্যালেঞ্জও গ্রহণ করেছে। প্রসঙ্গত এখানে ভারতের জনগণের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ভারতের মুসলিম বিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছে দেশটির সচেতন জনতা। সদ্য ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, বিভেদাত্মক ওই আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত মুসলিম সম্প্রদায়ের নামাজ আদায়ের সময় সহযোদ্ধা হিন্দু ও শিখরা মানবশিকল রচনা করেছে। এর আগে কলকাতায় জনতার মিছিলে স্লোগান তোলা হয় : হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই, এক সঙ্গে থাকতে চাই। কেন্দ্রীয় সরকারের নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ভারত জুড়ে প্রতিবাদের আগুন জ¦লছে। বিরোধীদলতো বটেই, সব রাজ্যেই বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষও দাবি করছে যে, এই আইন মেনে নেয়া মানে সাম্প্রদায়িকতাকে মেনে নেয়া। উল্লেখ্য যে, দিল্লীর জামিয়া মিল্লিয়া এবং উত্তর প্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি আক্রমণের পর প্রতিবাদের ঢল নামে সারাদেশে।
ইন্দার নামের এক প্রতিবাদকারী বলেন, ভারত ধর্মনিরপেক্ষ তার সংবিধানের জন্য নয়, বরং এই দেশের মানুষের জন্য। গত ১৯ ডিসেম্বর কলকাতায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিবাদের এক অনন্য নজির লক্ষ্য করা যায়। সেখানে ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি পরিচয় ছাপিয়ে হাজার হাজার মানুষ হেঁটেছে এক মহামিছিলে। রাজনীতিক থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র নির্মাতা, বুদ্ধিজীবী, ছাত্রসমাজ, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ দাঁড়িয়েছে এক কাতারে। তারা সবাই দাঁড়িয়েছে বিজেপি সরকারের মুসলিমবিরোধী অবস্থানের বিরুদ্ধে। তারা স্লোগান তুলেছে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের পক্ষে। তাদের দাবি, গণবিরোধী ও বিভাজন সৃষ্টিকারী নাগরিকত্ব আইন বাতিল করতে হবে।
মানুষের সমাজ মানবিক হবে, এটাইতো স্বাভাবিক। ধর্ম-বর্ণ-ভাষার কথা বলে কোনো সমাজে ঘৃণা বা বিদ্বেষ ছড়ানো যাবে না। বরং ধর্ম-বর্ণ-ভাষার পার্থক্যকে বৈচিত্র্য বা সৌন্দর্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এমন উদার মানসিকতাই দেশে দেশে সৃষ্টি করতে পারে বৈচিত্র্যের ঐক্য। বর্তমান সময়ে বিশে^র শাসকরা এমন চেতনায় পরিশুদ্ধ হলে আমরা ফিরে পেতে পারি কাক্সিক্ষত মানবিক সমাজ।