হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকিংয়ের শিকার ২০টি দেশের ১৪শ কর্মকর্তা

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক: আমেরিকার একাধিক বন্ধুদেশ-সহ অন্তত ২০টি দেশের সরকারি কর্মকর্তারা হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেল। হোয়াটসঅ্যাপের নিজস্ব অনুসন্ধানেই বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য। অনুসন্ধানের সঙ্গে জড়িত একটি সূত্রের দাবি, হ্যাকিংয়ের শিকারদের মধ্যে পাঁচ মহাদেশের ২০টি দেশের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রয়েছেন।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এই মেসেজিং অ্যাপের সুরক্ষা কবচে ফাটল ধরিয়েছে ইসরায়েলি সংস্থা ‘এনএসও’ (NSO), , আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় যারা পরিচিত ‘সাইবার অস্ত্রের ডিলার’ হিসেবে। হ্যাকারদের নিশানায় রয়েছে ভারতের একাধিক নেতা-মন্ত্রী, সাংবাদিক, আইনজীবী, সমাজকর্মীদের মতো বিশেষ কিছু পেশার মানুষজন। মনে করা হচ্ছে, ‘ভয়েস কলিং’ ফিচার ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ব্যক্তির মোবাইল সেটে নজরদারি সফটওয়্যার ইনস্টল করে দিচ্ছে হ্যাকাররা। ফলে গোপন ও ব্যক্তিগত তথ্য নিমেষে চলে যাচ্ছে বিদেশি সংস্থার হাতে।
বুধবার ইজরায়েলের এই আইটি প্রতিষ্ঠানে এনএসও-র বিরুদ্ধে অবৈধ নজরদারির অভিযোগ এনে একটি মামলা রুজু করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। সেই মামলার শুনানিতে এক বিবৃতি দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ জানায়, ২০টি ভিন্ন দেশের প্রায় ১৪শো মোবাইল ফোনে ম্যালওয়্যার ভাইরাসটি পাঠিয়েছে এনএসও গ্রুপ। তাদের তালিকায় সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্তা, রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক ব্যক্তিত্বও রয়েছে।মনে করা হয়েছিল, এই সাইবার হামলায় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কারণ তথ্য বলছে, ২৯ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত– এই অল্প সময়ে অন্তত ১৪০০ গ্রাহকের মোবাইলের তথ্য হ্যাক করা হয়েছে। তবে মোট সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রযুক্তিবিদদের।
১ এপ্রিল লন্ডনের এক মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী তার ফোন হ্যাকিং হওয়ার ছবি পাঠিয়েছিলেন হোয়াটসঅ্যাপের কাছে। তবে এই হ্যাকিংয়ে কারা জড়িত, তা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। তবে জানা গেছে, এনএসও তাদের সফটওয়্যারটি সরকারি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেছিল।
জানা গেছে, হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র, ইউনাইটেড আরব এমিরেটাস, বাহরাইন, মেক্সিকো, পাকিস্তান এবং ভারতের নাগরিক। বেশ কয়েক জন ভারতীয় নাগরিক বিগত দিনগুলোতে প্রকাশ্যেই এটা নিয়ে অভিযোগ করে আসছিল।
হোয়াটস্অ্যাপের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, হামলার ধরন দেখে এটা নিশ্চিত, আড়ি পাতার সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে ইজ়রায়েলের সাইবার সুরক্ষা সংস্থা ‘এনএসও গ্রুপ’ এবং ‘কিউ সাইবার টেকনোলজি।’ সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই সংস্থাই একসময় বানিয়েছিল কুখ্যাত ‘পেগাসাস’ সফটওয়্যার, যা যে কোনও মোবাইলে আড়ি পাততে সক্ষম। নির্দিষ্ট মোবাইল সেটে একবার জমিয়ে বসতে পারলেই এই সফটওয়্যার সেই ব্যক্তির অবস্থান, তার যাবতীয় জরুরি ও ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে নিতে পারে নিমেষের মধ্যে। পেগাসাসের বৈষিষ্ট্য হল এরা গ্রাহককে ‘exploit link’-এ ক্লিক করতে বাধ্য করে। একবার এই লিঙ্কে ক্লিক করলে সেই গ্রাহকের মোবাইলের সুরক্ষা কবচ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। ছবি, অডিও-ভিডিও, লোকেশন তো বটেই গোপনীয় পাসওয়ার্ডও হাতে এসে যায় হ্যাকারদের।
এর আগে অ্যাপলের দুর্ভেদ্য সুরক্ষা বলয়ও ভেঙে ফেলেছিল ইজরায়েলি সাইবার হ্যাকারদের এই গোপন সংস্থা। বিভিন্ন দেশকে গোপনে ‘সাইবার অস্ত্র’ সরবরাহ করার অভিযোগও আছে এনএসও-র বিরুদ্ধে। এই সাইবার অস্ত্রের মাধ্যমে কোনও শত্রু দেশের সমস্ত পরিকাঠামো ধ্বংস করে দিতে পারে ইজরায়েলের এই সাইবার হ্যাকাররা। বিভিন্ন সময় তাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে অ্যামনেস্টি সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাও। আন্তর্জাতিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, এই দলের পিছনে রয়েছে ইজরায়েলি সেনার হাত। কয়েক বছর আগে ‘স্টাক্সনেট’ ভাইরাস দিয়ে সাইবার হামলা চালিয়ে ইরানের পরিকাঠামো ধ্বংস করতে অনেকটাই সফল হয়েছিল তারা।
তবে কীভাবে হোয়াটস্অ্যাপের সুরক্ষা বলয় ভাঙছে ইজরায়েলের ওই সংস্থা, সেটা এখনও স্পষ্ট নয় সাইবার বিশেষজ্ঞদের কাছে। তবে মনে করা হচ্ছে, হোয়াটস্অ্যাপের ‘ভয়েস কলিং’ ফিচার ব্যবহার করে সুরক্ষার বাঁধুনি ভেঙে চলেছে হ্যাকাররা। কোনও একটি নির্দিষ্ট মোবাইল সেটে ‘ভয়েস কল’ করে ওই নজরদারি সফটওয়্যার ‘ইনস্টল’ করে দিচ্ছে হ্যাকাররা। ফলে ওই নির্দিষ্ট মোবাইল সেট থেকে যাবতীয় গোপন ও ব্যক্তিগত তথ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে হ্যাকারদের কাছে।