শুক্রবার ৩১ মার্চ ২০২৩
Online Edition

৫টি যুগান্তকারী আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব আনতে যাচ্ছে

মুহাম্মদ নূরে আলম :

॥ দ্বিতীয় কিস্তি ॥

৩. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: সারা বিশ্বে শুরু হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়জয়কার। বিশেষ করে, চাকরির নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ একটি আবশ্যিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ফরচুন-এ প্রকাশিত বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় অটোমেশন পদ্ধতির ব্যবহার শুরু করেছে বলে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, চাকরিপ্রত্যাশীদের সিভি থেকে বিভিন্ন শব্দ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে বের করছে রোবট! রোবট ছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং টুল ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের পদ্ধতি বিশ্বের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। যেমন সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যক্তির চরিত্র ও বুদ্ধিমত্তা নির্ধারণপূর্বক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপক নিয়োগ দেয় ডিপসেন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সানফ্রান্সিসকো ও ভারতভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি জানাচ্ছে, তারা ব্যক্তির ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণের কাজে ডেটা সায়েন্স ব্যবহার করে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি কী ধরনের ছবি পোস্ট করছেন, কী লিখছেন, কী ধরনের খবর শেয়ার করছেন, আপনার প্রোফাইলের ছবিটা কেমন ইত্যাদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে আপনার আচরণগত দক্ষতা নির্ণয় করা সম্ভব। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এর বদৌলতে অভাবনীয় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে সামনের বছরগুলোতে। বর্তমানে স্মার্টফোনগুলোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন অ্যাসিস্ট্যান্ট আমাদের জীবনকে করেছে অনেক সহজ। ঠিক এভাবেই আগামী দিনগুলোতে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে রাখবে অনন্য ভূমিকা। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন? জ্বর, সর্দিকাশি কিংবা ছোটখাটো কোনো অসুখ হয়েছে? ভবিষ্যতে হয়তো আপনাকে আর এসব কারণে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। বাড়িতে বসেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে সহজেই আপনি পাবেন স্বাস্থ্যসেবা। এছাড়াও সম্প্রতি গুগল এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নের জন্য গঠন করেছে গুগল ব্রেইন, যাদের কাজ এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নতুন নতুন ও আরো উন্নত ক্ষেত্রে কাজে লাগানো। এই প্রজেক্টের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রে কার্জওয়েল নামের বিশ্ববিখ্যাত একজন অও এক্সপার্ট। হয়তো খুব শীঘ্রই আমরা আমাদের মস্তিষ্কভিত্তিক ডিজিটাল স্টোরেজ দেখতে পাবো। অর্থাৎ আমরা আমাদের মস্তিস্কের তথ্যগুলোকে আপলোড করতে পারবো কম্পিউটারে!

৪. পরীক্ষাগারে তৈরি অঙ্গ: কোনো কারণে টিকটিকির লেজ খসে পড়লে কিংবা কেটে গেলে ধীরে ধীরে তা আবার গজায়। কিন্তু মানুষের বেলায় এমনটা হয় না। তবে আমাদের শরীরেও এমন কিছু কোষ রয়েছে যা প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে, আবার নতুন তৈরি হচ্ছে। যেমন আমাদের চামড়ার বহিরাবরণের কোষগুলো। আমাদের চামড়ার বহিরাবরণটি প্রতি দুই থেকে চার সপ্তাহ অন্তর অন্তর একবার সম্পূর্ণরূপে উঠে যায়। এরপর আবার নতুন কোষ জন্মায়। চামড়ার ক্ষেত্রে এমনটা হলেও শরীরের কোনো একটি অঙ্গ কিন্তু একবার হারিয়ে ফেললে পুনরায় জন্মায় না।

কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে শরীরের কোষ থেকে কান, নাক প্রভৃতি অঙ্গ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এক্ষেত্রে যার জন্য অঙ্গটি তৈরি করা হবে তার দেহ থেকে কিছু কোষ নেওয়া হয়। এরপর উপযুক্ত পরিবেশে কোষটির বিকাশ ঘটিয়ে একটি কোষ থেকে অনেকগুলো কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ অঙ্গটি গঠিত হয়। এরপর এই কৃত্রিম অঙ্গটি স্থাপন করা হয় রোগীর শরীরে। কৃত্রিম অঙ্গটি জীবিত কোষ দ্বারা তৈরি বলে আস্তে আস্তে অঙ্গটির মধ্যে শরীরের শিরা-উপশিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। ফলে কৃত্রিম এই অঙ্গটি হয়ে ওঠে দেহের একটি অংশ।

বর্তমানে এই প্রযুক্তিতে ছোটো ছোটো কিছু অঙ্গ তৈরি করা সক্ষম হলেও ভবিষ্যতে এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে আনতে যাচ্ছে ব্যাপক এক পরিবর্তন। ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে এই পদ্ধতিতে হৃদপেশী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে আগামী বছরগুলোতে এই হৃদপেশীর মাধ্যমে তৈরি করা হবে একটি সম্পূর্ণ হৃদপিন্ড! অর্থাৎ হৃদপিন্ড প্রতিস্থাপনের জন্য আর অন্য কোনো দাতা খোঁজার প্রয়োজন হবে না। হৃদপিন্ড ছাড়াও এ পদ্ধতিতে ভবিষ্যতে তৈরি হবে শরীরের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।

৫. পোর্টেবল ডায়াগনস্টিক ডিভাইস: বর্তমানে রক্তের ব্লাড সুগার বা ডায়াবেটিক টেস্ট, রক্তচাপ নির্ণয় ইত্যাদি আমরা ঘরে বসেই করতে পারি। কিন্তু কয়েক দশক আগেও এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আমাদেরকে ডাক্তারের কাছে এবং বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দৌড়াদৌড়ি করতে হতো। বর্তমানে আমরা ইসিজি, এক্স-রে ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের শরণাপন্ন হই। কিন্তু আগামী বছরগুলোতে আমাদের আর এসবের জন্য বাইরে যেতে হবে না। ঘরে বসেই আমরা এসব পরীক্ষা করতে পারবো পোর্টেবল ডিভাইসের মাধ্যমে। সম্প্রতি গবেষকরা পোর্টেবল ইসিজি মেশিন উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়াও কয়েক বছর আগে ইউজিন চ্যান নামক একজন ডাক্তার ও তার দল মিলে তৈরি করেছিলেন এমন একটি বহনযোগ্য যন্ত্র যেটিতে শুধু এক ফোটা রক্ত প্রবেশ করালেই কয়েকশ রোগ নির্ণয় করা যাবে। ডিভাইসটি এতই ছোট যে তা পকেটে করে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায়। ভবিষ্যতেও আসতে যাচ্ছে ঠিক এমনই অনেক যন্ত্র। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নয়নের সাথে সাথে ভবিষ্যতে নতুন অনেক অজানা রোগেরও জন্ম হবে। এসব রোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের হতে হবে আরো স্বাস্থ্য সচেতন। পরিবেশকে রাখতে হবে দূষণমুক্ত। তবেই আগামীর পৃথিবীতে আমরা বিভিন্ন শারীরিক বিপর্যয় থেকে বেঁচে থাকতে পারবো।  [সমাপ্ত] 

 

 

 

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ