যশোরের আহত কিশোর ভ্যানচালক শাহিনের দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী
চৌগাছা (যশোর) সংবাদদাতা : যশোরের কেশবপুর উপজেলার আহত কিশোর ভ্যানচালক শাহিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভ্যান চালাতে গিয়ে যাত্রীবেশের দুর্বৃত্তদের আঘাতে গুরুতর আহত কিশোর শাহীনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অপারেশন শেষে আইসিইউ’তে রাখা হয়েছে।
শনিবার দিবাগত রাত ৩ টায় অপারেশন শেষে আইসিইউ’তে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রাখা হয় তাকে। এদিকে তার চিকিৎসায় তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া এবং ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন। ঢামেকে অবস্থানরত ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, শাহীনের চিকিৎসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। রাত ১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন ঢামেকে এসে শাহীনের স্বজনের হাতে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে যান। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসা ব্যয়ের পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ছাত্র নেতারা।
জানা যায়, অভাবের সংসার ও পারিবারিক অবস্থানের কারণে বেশ কয়েকমাস আগে পড়াশোনা ছেড়ে ভ্যান চালানো শুরু করে শাহীন। একটি ভ্যান হওয়ায় বাবা-ছেলে দু’জনে শিফট মেনে ভাড়া চালায় তারা। পরিবারের অস্বচ্ছলতার কারণে মাত্র ১১বছর বয়সেই ব্যাটারি চালিত একটি ভ্যানগাড়ি চালিয়ে টাকা উপার্জন করতেন শিশু আবু শাহিন। তার বাবাও ওই ভ্যানটিই চালাতো। অভাব ঘুচাতেই বাবা-ছেলে সংগ্রাম করেছিলেন। এবার সেই উপার্জনের হাতিয়ারটিই কেড়ে নিল দুর্বৃত্তরা। কুপিয়ে জখম করেছে আবু শাহিনকে। শুক্রবার কেশবপুর থেকে সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়া গ্রামের মাঠে একটি পাটক্ষেতের পাশে দুর্বৃত্তরা শাহীনের মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ভ্যান ও তার ব্যবহৃত মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়।
কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে আবু শাহীন। তার রক্তাক্ত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। চলছে নানা গুজবও।
আবু শাহিনের চাচা মুনসুর আলী জানান, শুক্রবার সকালে তার মোবাইলে ফোন আসে ভ্যানগাড়িতে ভাড়ায় যাওয়ার জন্য। ভাত না খেয়েই সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ে অজ্ঞাত যাত্রীর ফোন পেয়ে। দুপুরের দিকে কয়েকজন ভদ্রবেশধারী দুর্বৃত্ত শাহীনের ভ্যানটি ভাড়া নেয়। শাহীন তাদের নিয়ে সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়ার দিকে রওনা হয়। ধানদিয়া গ্রামের মাঠে ঢুকে একটি পাটক্ষেতের পাশে ওই দুর্বৃত্তরা শাহীনের মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ভ্যান ও তার ব্যবহৃত মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল সে। পরে জ্ঞান ফিরে কান্না শুরু করলে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানায় খবর দেয়। পাটকেলঘাটা থানার ওসি রেজাউল হোসেন বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে শাহীনকে উদ্ধার করে খুলনার আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে বলেও তিনি।
তার চাচা মুনসুর আরও জানান,শাহীন যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে। বসতভিটে ছাড়া তাদের কোন জমিজমা নেই। সম্প্রতি একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিনি একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যানগাড়ি কেনেন। পিতা-পুত্র দুই শিফটে ওই ভ্যানটি চালিয়ে সংসারের হাল ধরে রেখেছিলেন। জীবিকার সেই শেষ সম্বলটিও নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা। এখন ছেলের বেঁচে থাকা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এর সাথে আছে এনজিওর ঋণের কিস্তি, মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানো, আর খাওয়া-পরার টেনশন।