মজুরি ও বোনাস পেলেন পাটকল শ্রমিকরা : অনিশ্চিত কর্মকর্তাদের
খুলনা অফিস : যশোর-খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ পাটকল শ্রমিক-কর্মচারীরা বকেয়া মজুরি ও ঈদ বোনাস হাতে পেয়েছেন। কিন্তু কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত কোনও বেতন পাননি। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ক্রিসেন্ট জুট মিল, সন্ধ্যায় খালিশপুর, প্লাটিনাম ও স্টার জুট মিলের শ্রমিকরা এটিএম বুথে দীর্ঘ লাইন দিয়ে টাকা তুলেছেন। তবে, ক্রিসেন্ট জুট মিলের তিনটি বুথের একটি বিকল থাকায় ঝামেলায় পড়তে হয়েছে শ্রমিকদের। তারা বুথটি সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন।
পাটকল শিল্প কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক কালাম মল্লিক বলেন, ‘আমরা ২০১৯ সালে এখন পর্যন্ত কোনও বেতনই পাইনি। শ্রমিক কর্মচারীদের টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড় দিলেও কর্মকর্তাদের অংশ ছাড় দেয়নি।’
স্টার জুট মিলের প্রকল্প প্রধান শাওন মাহমুদ জানান, তার মিলে শান্তিপূর্ণভাবে শ্রমিক কর্মচারীরা স্ব স্ব হিসাব থেকে টাকা নিয়েছে।
খালিশপুর জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মোস্তফা কামাল জানান, এটিএম বুথ থেকে শ্রমিকরা তাদের টাকা তুলেছে। তবে, টাকা হাতে পেয়ে শ্রমিকরা তেমন খুশি হতে পারেননি। তারা মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে সাংবাদিক সম্মেলনে খুলনা জোন অফিসে উপস্থিত কয়েকশ’ কর্মকর্তাকে চোখের পানি মুছতে দেখা গেছে। পরে তারা জোন অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর দফতর পাটকল করপোরেশনের সব শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তার জন্য ২৩২ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ার নির্দেশ দেয়। অথচ মাত্র ১৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে তারা রোববারের আগেই তাদের সব পাওনা পরিশোধ করার দাবি জানান। এ সময় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি নন্দন দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমূল কবির ও কামাল হোসেনসহ ৯ পাটকলের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজেএমসির একটি সূত্র জানায়, কর্মকর্তাদের বকেয়া বেতন ও বোনাসের ৩৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি বিজেএমসির নির্বাহীদের জানিয়েছেন, একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ফোনে বললে এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া সম্ভব। তবে, বিজেএমসিসহ পাট মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপই এখন পাটকল করপোরেশনের কর্মকর্তাদের পরিবারের ঈদের খুশি ফেরাতে পারে।
এটিএম বুথে টাকা নেই, ভোগান্তিতে পাটকল শ্রমিকরা : আন্দোলনের পর রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতার টাকা তাদের নিজ নিজ ব্যাংক একাউন্টে জমা হলেও অনেকে তা তুলতে পারছেন না। নির্দিষ্ট ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় ৪০ ভাগ শ্রমিক এখনও টাকা তুলতে পারেননি। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
পাটকল শ্রমিক নেতা মুরাদ হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার সকাল থেকে মিল এলাকার এসআইবিএল ও ইস্টার্ণ ব্যাংকের এটিএম বুথের টাকা শেষ হয়ে যায়। ফলে শ্রমিকরা টাকা তুলতে পারছেন না। বন্ধের দিন হওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষও বুথে টাকা সরবরাহ করতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘প্লাটিনাম ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের আড়াই হাজার শ্রমিক এখনও (সকাল ১১টা পর্যন্ত) মিল থেকে কোনও চেকই পাননি। ফলে শ্রমিকরা দুশ্চিন্তায় আছেন।’
শুক্রবার সকালে পাটকল শ্রমিকরা খুলনা সদরের এসআইবিএলের শাখায় টাকা তুলতে ভিড় জমান। এ সময় তারা এটিএম বুথে কার্ড চার্জ করলে কোনও টাকা পাননি। বুথে কোনও টাকা নেই। শ্রমিকরা এ সময় বুথের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও এসআইবিএলএর জিএম মো. মোসলেউদ্দিনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।