বাড়ছে মানসিক রোগ
দেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে মানসিক রোগ। ১২ মে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রতি ১০০ জনের ৩৪ জনই মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত। ক্রমান্বয়ে এ হার বেড়েই চলেছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে তরুণের সংখ্যাই বেশি। বিষণ্ণতা ও অবসাদে ভোগা এসব রোগীর অনেকে একপর্যায়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। জড়িয়ে পড়ছেন মাদক, ধর্ষণ, জঙ্গীবাদসহ নানা অপরাধে। বেকারত্ব, পরিবার ও কর্মস্থলে অবহেলা, পারিবারিক অশান্তি, যৌথ পরিবার ভেঙে সম্পর্কের বন্ধন হালকা হওয়া, মাদকের আগ্রাসন, জীবনযাপনে প্রযুক্তির প্রতি অতি নির্ভরতাকে মানসিক রোগের কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ বুলেটিন-২০১৮ এর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ১৬ দশমিক ১ ভাগ মানসিক রোগে ভুগছেন। আর ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৪ ভাগই মানসিক রোগে আক্রান্ত। অন্যদিকে ২০০৯ সালে হওয়া সর্বশেষ জাতীয় সমীক্ষার ফলাফর অনুযায়ী প্রতি পাঁচজনের মধ্যে অন্তত একজন কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংখ্যা এখন কয়েকগুণ বেড়েছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতলের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেঘলা সরকার বলেন, বর্তমানে বাচ্চারাই আমাদের সবচেয়ে বড় ক্লায়েন্ট। পারিবারিক বন্ধর কমে যাওয়া ও প্রযুক্তিনির্ভরতায় মানসিক রোগ বাড়ছে। ১৮ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে একজন মানুষের মানসিক বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়ে যায়। জীবন দক্ষতা, চাপ নেয়ার ক্ষমতা, বড় হয়ে কতটা সমস্যা মোকাবিলা করে সামনে যেতে পারবে সেই সক্ষমমতা তৈরি হয় এই বয়সেই। তাই এই বয়সটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময় মাদক, পর্নোগ্রাফি, জঙ্গীবাদসহ নানা অপরাধ তাদের হাতছানি দেয়। এখন প্রশ্ন হলো এই হাতছানি থেকে কিশোর ও তরুণদের রক্ষার ব্যাপারে আমাদের পরিবার, সমাজ, শিক্ষাব্যবস্থা ও রাষ্ট্রনীতিতে যথাযথ আয়োজন আছে কী? আমাদের আয়োজন আশাপ্রদ নয়। তাই মানসিক রোগের বিরাজমান অবস্থায় নতুনরা যোগ হলে আমাদের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যের চিত্রটা কেমন দাঁড়াবে? বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবারই করণীয় ঠিক করা প্রয়োজন।