শনিবার ০২ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

পবিত্র  মৃত্যু

 

তাসনীম  মাহমুদ : হুইল চেয়ারটি অটোমেটিক। এই চেয়ারটি টেনে নিয়ে বেড়ায় ফরিদ উদ্দিনকে। সুইচের বাটন চাপলেই স্বয়ংক্রিয় চেয়ারটি গাড়ীর ছাদে উঠে যায় আর ফরিদ যেয়ে বসেন ড্রাইভিং সিটে। গাড়ী চালাতে থাকেন। গত বছরের আগে এক রোড এক্সিডেন্টে সে তার দুই পা হারান। গোলাপের মত সুবাসিত স্ত্রী পারভীন কখনোই স্বামীকে পঙ্গুত্বের অভাব বুঝতে দিতে নারাজ। তাদের সুখের সংসারে পনের বছরের একটি মাত্র মেয়ে শিপা উদ্দিন। 

 রোজ শনিবার ফরিদ মসজিদে কুরআনুল কারীমের ইংরেজি তরজমা পেশ করেন। সাদা-কালো চামড়ার মুসল্লী'রা একত্রে মিলেমিশে অতি আগ্রহের সাথে তার এ তরজমা শোনেন। মহিলাদের নামাজ ঘরে অপেক্ষায় থাকেন পারভীন। স্বামীকে মসজিদে আনা-নেয়ার কাজ তিনি নিজ হাতে করেন। প্রতিবেশীর জিজ্ঞাসার উত্তরে বলেন, স্বামীর খেদমতে সে বেহেশতের স্বাদ পান। 

পবিত্র জুমা'বার! স্বামীর সাথে মসজিদে পারভীন।  মুসল্লীগণ নিজ নিজ নামাজে ব্যস্ত। কেউ কিয়ামে, কেউ রুকুতে, কেউ কেউ সেজদায়! হঠাৎ বিদ্যুৎ চমক আলো আর মেঘে মেঘে সংঘর্ষের শব্দের মতো কতক বিকট বেনিয়া বুলেট মৃত্যুর মহড়া নিয়ে রক্তাক্ত করে দিলো জায়নামাজ? হতবিহ্বল গুলিবিদ্ধ মুসল্লীগণ আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে একে একে লুটিয়ে পড়ছে মেঝেতে। 

অচল-পঙ্গু স্বামীর জীবন বিপন্ন! মহিলা নামাজের ঘর থেকে ছুটে এলেন পারভীন। চিৎকার আর কান্নার রোলের মধ্যে দু' একজন মুসল্লী'র সহযোগীতায় জানালা দিয়ে স্বামীকে বের করে নিরাপদে বাসায় রেখে তিনি ছুটলেন, অন্যান্য অসহায় নারী-শিশুদের উদ্ধারে। হিংস্র মত্ততায় ঘাতক পীচলেপা রাস্তার মাঝ পথেই স্তব্ধ করে দিলো পারভীনের পদচারণ। নিথর পড়ে রইলো গোলাপগঞ্জের সুবাসিত গোলাপটি!

ফেরেশতারাই বুঝি মৃত্যুর সাথে সাথে স্ত্রীর পবিত্র দেহ-মোবারক উপুড় করে পর্দার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন? এমন ভাবছেন ফরিদ আর শিহরিত হচ্ছেন এ কেমন অসাধারণ মৃত্যু! ---কেনো এমন আগে চলে যাওয়া! অথচ; এক্সিডেন্টে তার নিজের মৃত্যু ছিলো অবশ্যম্ভাবী ----আল্লাহ কী না পারেন! 

ইতোমধ্যে, সাংবাদিক এসে কড়া নাড়ায় ফরিদের ভাবনায় বিরতি পড়লো। স্বাভাবিক কুশল বিনিময়ের পরে সাংবাদিক তার কাছে জানতে চাইলেনঃ আপনার স্ত্রীর মৃত্যুতে আপনার অনুভূতি?  তিনি বললেন, আলহামদুলিল্লাহ আমি খুশি। সাংবাদিক অবাক হয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনার স্ত্রীর মৃত্যু কি আপনাকে কোনো কষ্ট দেয়নি? তাছাড়া কিছু কাল পরে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেবেন আপনি একা হয়ে যাবেন, আপনাকে কে দেখভাল করবে কিছু ভেবেছেন?

কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফরিদ বললেন, আমার স্ত্রীর মৃত্যুতে আমি খুশি আলহামদুলিল্লাহ। মৃত্যু অবধারিত ভাবে সকলের দুয়ারে হানা দেবে কিন্তু এমন সৌভাগ্যের মৃত্যু কয়জনের হয় বলুন? ---আমি খুশি আলহামদুলিল্লাহ! তবে মেয়েকে যখন তার মায়ের মৃত্যুর সংবাদ জানাই তখন বুকটা...! একটু থামলেন তিনি। তারপর বললেন, মেয়ের বিয়ের পরে আল্লাহ আমাকে দেখবেন। 

যারপরনাই বিস্মিত সাংবাদিক শেষ প্রশ্ন করলেনঃ আপনার স্ত্রীর ঘাতকের কেমন শাস্তি আশা করছেন? তিনি মুচকি হেসে বললেন, তাকে মাফ করে দিয়েছি! হতভম্ব সাংবাদিক দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলেন। মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ভেসে এলো আজানের ধ্বনি আর ফরিদ উদ্দিন প্রস্তুতি নিলেন নামাজের।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ