নির্বাচন তিন সপ্তাহ পেছানোর দাবি বিবেচনার আশ্বাস ইসির

স্টাফ রিপোর্টার: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তিন সপ্তাহ পেছানো, প্রতি কেন্দ্রে সেনা মোতায়েন ও ইভিএম একেবারে ব্যবহার না করাসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সেই সাথে খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছে তারা। তবে নির্বাচন কমিশন আলোচনা করে ঐক্যফ্রন্টের দাবির বিষয়গুলো বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা এসব কথা জানান। ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের পরই ইসিতে গিয়ে বৈঠক করে এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠক থেকে বের হয়ে প্রথমে কথা বলেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের যে প্রশ্নগুলো ছিল, অভিযোগগুলো ছিল, সেগুলো আমরা তুলে ধরেছি। ইসি এ ব্যাপারে সাহায্য-সহযোগিতা করবেন। যাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেশে হতে পারে।
নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে ব্যবস্থা নেবে বলে সতর্কতা দিয়েছে মঙ্গলবার। এর পরদিন রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ব্যাপারে কামাল হোসেন বলেন, ইসি এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে ইসি কী বলেছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইসি এ বিষয়ে বিবেচনা করবে। এই বৈঠকের ফলটা কী- এই প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, আমরা যেসব কথা বলেছি সেগুলোর সবগুলোর নোট নিয়েছেন তারা। অনেক কথার জবাবে বলেছেন, বিবেচনা করে আলোচনা করে কী করা যায় সেটা তারা করবেন। পরে আমরা তা বুঝতে পারব।
বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তিন সপ্তাহ পেছানোর দাবি করেছি আমরা। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও করা হয়েছে। দাবিগুলো নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিবেচনা করবে বলে আমাদের জানিয়েছে। এরপর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা নির্বাচন তিন সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছি। তারা (ইসি) বলেছেন, তারা এটা বিবেচনা করে দেখবেন। কমিশন আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা নির্বাচনে একেবারেই ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছিলাম। তাঁরা বলেছেন- তারা সব কেন্দ্রে বা বড় পরিসরে ব্যবহারের কথা চিন্তা করছেন না। তারা শুধু সিটি কর্পোরেশনগুলোতে সীমিতসংখ্যক ইভিএম ব্যবহার করার চিন্তা করছেন। তারা এটাও বলেছেন, আমরা যদি তাদের বোঝাতে পারি ইভিএম পদ্ধতি পুরোপুরি নিরাপদ নয়, তাহলে তারা সেটাও বিবেচেনা করবেন।
বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, আমরা নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছিলাম। তারা বলেছেন, এটা আমরা ইতোমধ্যে চিন্তা করে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রতি কেন্দ্রে ব্যবহার করা যাবে কি না এ ব্যাপারে তারা বিবেচনা করবেন।
জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রসাশনে রদবদল, হয়রানিমূলক ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, কারাবন্দী নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির ব্যাপারে ইসি তালিকা চেয়েছে বলে দাবি করেন ফখরুল।
এখন পুলিশ যাতে রাজনৈতিকভাবে কাউকে গ্রেফতার না করে সে বিষয়ে ইসির নির্দেশনা চেয়েছেন বলেও তিনি জানান। ফখরুল বলেন, এ ছাড়া নির্বাচনী এজেন্টদের নিরাপত্তা, পর্যবেক্ষকদের বাধা থাকবে না বলে ইসি আমাদের জানিয়েছে। রিটানিং ও সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তাদের তালিকা সরকারি দল থেকে দেয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি বলেছে বিষয়টি চেক করবেন।
তিনি বলেন, মোটকথা তারা সবই শুনেছেন, প্রত্যেকবারই শোনের কিন্তু কতটুকু বাস্তবায়ন করবেন তা জনগণ ও সাংবাদিকরা দেখবেন। তারা যদি সত্যিকারের দায়িত্ব পালন করেন তাহলে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। আর আমাদের বিরোধী পক্ষের নির্বাচনে টিকে থাকাটা তাদের আচরণের ওপর নির্ভর করছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, টিকে থাকার প্রথম ধাপটা একেবারেই ভালো নয়। একেবারেই নয়। শুভলক্ষণ নয়।
খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলেছি। তাকে ছাড়া এটা ফলপ্রসূ হবে না। তারা (কমিশন) বলেছেন, তারা বিষয়টা দেখবেন। এর চাইতে বেশি কিছু তারা বলেননি।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, বিষয়টি আমরা বৈঠকে তুলেছি। এ বিষয়টিও তারা দেখবে বলে জানান। এ সময় সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ভাই সামিগ্রিকভাবে কথা বলে দিই, আমাদের থাকা না থাকাটা নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশন ও বর্তমানে যে নির্বাচনকালীন সরকার রয়েছে তাদের আচরণের ওপর।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেয়। অপর দিকে কমিশনের পক্ষে বৈঠকে সিইসি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা ছিলেন।
বৈঠকে ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ছাড়াও অংশ নেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, কাদের সিদ্দিকী, সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, মোকাব্বির খান, মাহমুদুর রহমান মান্না, এসএম আকরাম, আবদুল মালেক রতন, সুলতান মো. মনসুর আহমদ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, পুনঃনির্ধারিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর এবং ভোটের দিন ৩০ ডিসেম্বর।