মিরপুর টেস্টে জয়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ
রফিকুল ইসলাম মিঞা : সিলেটে প্রথম টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে বড় ব্যবধানে হারলেও মিরপুর টেস্টে জয়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। মিরপুরে শেষ টেস্টে প্রথম চারদিনই নিয়ন্ত্রণ করেছে টাইগাররা। আজ টেস্টের শেষ দিনও টাইগার বোলাররা নিয়ন্ত্রণ করবে এটা বলাই যায়। শেষ দিনে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ৮ উইকেট। আর টেস্ট বাচাতে হলে জিম্বাবুয়ের দরকার সারাদিন ব্যাট করা। না হলে ৮ উইকেটে ৩৬৭ রান করে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ম্যাচ জিততে হবে দলটিকে। দু’টো কাজই কঠিন সফরকারীদের জন্য। ফলে এই টেস্টে বাংলাদেশ যে জয়ের দ্বারপ্রান্তে আছে তা বলাই যায়। জয়টা এখন বাংলাদেশের হাতের মুঠোই। প্রথম ইনিংসে মুশফিক করেছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি আর মুমিনুল সেঞ্চুরি। গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
প্রথম টেস্ট হেরে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া টাইগাররা মিরপুর টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৫২২ রান করেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে ৩০৪ রানে অলআউট হলে প্রথম ইনিংস বাংলাদেশ লিড পায় ২১৮ রানে। প্রথম ইনিংস শেষে জিম্বাবুয়ে ফলোঅনে পড়লেও গতকাল বুধবার টেস্টের চতুর্থ দিনে দলটিকে ফলোঅন না করিয়ে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ দল। লক্ষ্য ছিল দলটির সামনে বিরাট টার্গেট দেয়া। অবশ্য সেটা ভালো ভাবেই করতে পেরেছে টাইগাররা। প্রথম ইনিংস ৭ উইকেটে ৫২২ রান করে ইনিংস ঘোষণা করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ২২৪ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। ফলে জয়ের জন্য ৪৪৩ রানের বিশাল টার্গেট পায় সফরকারীরা। চতুর্থ ইনিংসে এতো বড় স্কোর তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড নেই ক্রিকেট বিশ্বে। তাই জিম্বাবুয়েকে জিততে হলে বিশ্বরেকর্ডই গড়তে হবে। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ডটিই ৪১৮ রানের। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই কীর্তি দেখিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে ম্যাচে যে বাংলাদেশ জয়ের প্রহর গুণছে তা বলাই যায়। কারণ অতিলৌকিক কিছু না হলে এই টেস্টে হারের কোনো সম্ভাবনা নেই বাংলাদেশের। তবে শেষ দিনে সারাদিন ব্যাট করে টেস্ট ড্র করার একটু সুযোগ আছে জিম্বাবুয়ের সামনে। অবশ্য চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা সে ভাবেই করেছিল জিম্বাবুয়ে। তবে শেষ বিকেলে এসে টাইগার বোলাররা কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়েছেন দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ আর তাইজুল ইসলাম। সেট দুই ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা আর ব্রায়ান চারিকে সাজঘরে ফিরিয়ে দিয়েছেন তারা। ফলে ৪৪৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে গতকাল ২ উইকেটে ৭৬ রান করেছে জিম্বাবুয়ে। আজ (বৃহস্পতিবার) হাতে ৮ উইকেট নিয়ে আরো ৩৬৭ রান করার টার্গেটে ব্যাট করতে নামবে দলটি। গতকাল অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ২৫ ও ব্রায়ান চারি ৪৩ রানে ফিরেন। ব্রেন্ডন টেইলর ৪ ও সিন উইলিয়ামস ২ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের তাইজুল ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন। গতকাল টেস্টের চতুর্থ দিনে জিম্বাবুয়েকে ফলোঅন না করিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আর দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে নিজেই সেঞ্চুরিসহ অপরাজিত ১০১ রান করেন। সেই সাথে মোহাম্মদ মিথুনের ৬৭ রানের সুবাদে ৬ উইকেটে ২২৪ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেন। ফলে জয়ের জন্য ৪৪৩ রানের টার্গেট পায় জিম্বাবুয়ে। গতকাল ব্যাটিং শুরু করেই বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ। কারণ ব্যাট করতে নেমে ৯, ১০, ১০ ও ২৫ রানে চারটি উইকেট হারায় টাইগাররা। সবার আগে ফিরেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। এরপর লিটন, মোমিনুল ও প্রথম ইনিংসের ডাবল- সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম। ইমরুল ৩, লিটন ৬, মোমিনুল ১ ও মুশফিক ৭ রান করেন। বাংলাদেশের চার ব্যাটসম্যানকে আউট করেছেন জিম্বাবুয়ের দুই পেসার কাইল জার্ভিস ও ডোনাল্ড তিরিপানো। ২৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে মহা চিন্তায় পড়ে স্বাগতিকরা। তবে মিঠুনের সাথে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দলের বিপর্যয় কাটান। উইকেটের সাথে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে বাংলাদেশের রানের চাকা সচল করছেন মিথুন ও মাহমুদুল্লাহ জুটি। ফলে শত রান পেরিয়ে দলীয় স্কোর দেড়শ’র দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এর মাঝে অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মিথুন। পরে হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মাহমুদুল্লাহও। তবে হাফ-সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংসটি বড় করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন মিথুন। জিম্বাবুয়ের অফ-স্পিনার সিকান্দার রাজাকে ছক্কা মারার পরের ডেলিভারিতেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ১১০ বলে ৬৭ রান করেন মিথুন। পঞ্চম উইকেটে ১৬৩ বল মোকাবিলা করে ১১৮ রান যোগ করেন মিথুন-মাহমুদুল্লাহ জুটি। মিথুন আউট হলেও মাহমুদুল্লাহ সফল হয়েছেন। দলকে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিও তুলে নেন তিনি। আট বছরের বেশি সময় পর দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তিনি। নিজের সেঞ্চুরির পরই বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের ঘোষণা দেন মাহমুদুল্লাহ। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ১২২ বলে অপরাজিত ১০১ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। মিরাজের সংগ্রহ ছিলো অপরাজিত ২৭ রান। সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৭৩ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ-মিরাজ। ৬ উইকেটে ২২৪ রানে ইনিংস ঘোষনা দেয়ায় ম্যাচ জয়ের জন্য ৪৪৩ রানের লক্ষ্য পায় জিম্বাবুয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৫২২/৭ডি, ১৬০ ওভার (মুশফিক ২১৯অপ:, মোমিনুল ১৬১, জার্ভিস ৫/৭১)।
জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস : ৩০৪/১০, ১০৫.৩ ওভার (টেইলর ১১০, মুর ৮৩, তাইজুল ৫/১০৭)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ২২৪/৬ ডি, ৫৪ ওভার ( মাহমুদুল্লাহ ১০১ অপ:,মিথুন ৬৭, মিরাজ ২৭, জার্ভিস ২/২৭, তিরিপানো ২/৩০)
জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংস : ৭৬/২, ৩০ ওভার।