মাত্র ১০ দিনেই দেশে ফিরেছেন ৫ শতাধিক
স্টাফ রিপোর্টার : গত ১০ দিনে প্রায় ৫০০ বাংলাদেশী দেশে ফিরে এসেছেন। এর মধ্যে গত ২৬শে সেপ্টেম্বর ৮০ জন, ৩রা অক্টোবর ১৪৪ জন, বৃহস্পতিবার ফিরেছেন ১৭০ জন। এছাড়া এর মধ্যেই বিভিন্ন ফ্লাইটে শ’খানেক কর্মী দেশে ফিরেছেন। আরো ১০০ জনের ফেরত আসার পথে রয়েছে। ফেরত আসা কর্মীরা বলছেন, সামনে তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। ধারদেনা করে বিদেশ যাওয়ায় অনেকে বাড়ি ফেরা নিয়েও দোটানায় রয়েছেন। তবে কি কারণে তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানা গেছে এত দিন নারীদের পাঠানো হলেও এখন পুরুষদেরও গণহারে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সৌদি ফেরত শাহ আলম জানান, তিনি গত বছরের ১৩ই এপ্রিল আপন ফুফাতো ভাইয়ের মাধ্যমে সৌদি আরব যান। তাকে ইলেক্ট্রিকের কাজ দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। বলেছিল, থাকা-খাওয়া খরচ বাদে তার আয়-রোজগার হবে মাসে ৮০-৯০ হাজার টাকা। এই চিন্তা করে তিনি সাড়ে ৬ লাখ টাকা ধারদেনা করে সে দেশে পাড়ি জমান। কিন্তু দেশটিতে যাওয়ার পর প্রথম ৪ মাস কাটে বেকার জীবন। ওই সময় তিনি কোনরকম একবেলা-আধাবেলা খেয়ে দিন পার করেছেন। এরপর তাকে মরুভূমির একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কাজ দেয়া হয়। সেখানে কাজ করেন ৪-৫ মাস। ওই সময় তিনি বাড়িতে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকাও পাঠিয়ে ছিলেন। এরপর আবারো বেকার হয়ে পড়েন। কোম্পানি তাকে দিয়ে কাজ করালেও আর বেতন দেয়নি। এক সময় পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েন। এর মধ্যে পেট চালানো এবং থাকার জন্য মাঝে মাঝে দু’একদিন এদিক-সেদিক কাজ করেন। কিন্তু তাও নিয়মিত না। এই অবস্থায় গত ১৯শে সেপ্টেম্বর কাজে যাওয়ার সময় সকালে পুলিশ তাকে কোনো কারণ ছাড়াই আটক করে। শাহ আলমের দাবি, তার ভিসার মেয়াদ, বৈধ আকামাসহ সবই ছিল। কিন্তু সেগুলো দেখালেও কোনো কাজ হয়নি বরং কাগজপত্র নিয়ে সফর জেলে পাঠিয়ে দেয়। এরপর সেখানে কাটে ১৬ দিন। ওই জেলেও ছিল কষ্টের জীবন। তিনি বলেন, এই ১৬ দিন এক কাপড়েই ছিলাম। ওই কাপড়েই ফেরত এসেছি। তিনি আরো বলেন, গাদাগাদি করে থাকতে হতো। ফলে পরদিনই অসুস্থ হয়ে পড়ি। তার মতো বেশিরভাগ লোকজনই অসুস্থ হয়ে পড়ে সফর জেলে।
একই ফ্লাইটে আসা বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উত্তরদাত গ্রামের শামীম হোসেন বলেন, তিনি মনজিল ভিসায় সৌদি আরব গিয়েছিলেন ৬ মাস আগে। খরচ হয়েছিল সাড়ে ৫ লাখ টাকা। কিন্তু যাওয়ার পর কপিল (মালিক) আকামা করে দেয়নি। পরে আকামার জন্য ওই কপিলকে আরো ২৪০০ রিয়াল (৫৩ হাজার টাকা) দেন তিনি। আকামাও পান। কিন্তু বৈধ সব কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে গত ২২ তারিখে ধরে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, আমি মদিনা এলাকার একটি দোকানে সাবান কিনতে গেলে পুলিশ ধরে। প্রথমে থানায় এরপর সফর জেলে পাঠায়। সেখান থেকে দেশে। তিনি বলেন, সফর জেলের ১৪ দিন তার জীবনের সবচেয়ে পীড়াদায় ছিল। বলেন, ১৫ জনের থাকার জায়গায় তারা ৯০-১০০ জন রাখে। একবেলা ডাল-ভাত, দুই বেলা ১টা করে রুটি দেয়া হয়। তিনি বলেন, এই ৬ মাসে তিনি ২৪০০ রিয়াল আয় করেছেন যার মধ্যে থাকা-খাওয়াতে প্রতি মাসে ৫০০-৬০০ রিয়াল খরচ হয়েছে। তিনি কাজি এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরব যান বলে জানান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার আখানগর গ্রামের বাদল মিয়ারও একই অভিযোগ।
চল্লিশোর্ধ নাটোরের জুবায়ের বিমানবন্দরের ২নং টার্মিনালে থেকে বের হয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, দেড় বছর আগে তিনি সৌদি গেছেন। তার আকামার মেয়াদ আছে এখনো ৭ মাস। এই অবস্থায় কোনো কারণ ছাড়াই তাকে আটক করে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, নারীকর্মীদের সঙ্গে গণহারে পুরুষকর্মী ফেরত আসা শুরু হয়েছে। শাহজালালের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ জানান, সৌদি থেকে ফেরত আসাদের মধ্যে ৬ বছর আগে যাওয়া লোকজন যেমন আছেন, তেমনি সম্প্রতি যাওয়া কর্মীরাও আছেন। তিনি বলেন, ফেরত আসা এসব কর্মী অভিযোগ করছেন, বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তাদের আটক করে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তবে আসল কারণ দূতাবাস বলতে পারবে। কি কারণে তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে- এ ব্যাপারে সরকারে দায়িত্বশীল পর্যায়ের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।