আ’লীগ এমপির স্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় অপর গাড়িচালক নিহত
স্টাফ রিপোর্টার : কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাজধানীর সড়কে এক সংসদ সদস্যের স্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্য এক গাড়িচালক। নিহতের নাম সেলিম বেপারী (৫৫)। তিনি মহাখালীরই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক ছিলেন। তাকে ধাক্কা দেয়া গাড়িটি নোয়াখালী সদরের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরীর স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলীর বলে জানা গেছে। নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিউলী গাড়িটি তার বলে গনমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন।
মঙ্গলবার রাতে মহাখালীতে বিমানবন্দর সড়কে গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলে সেলিমের মৃত্যু হয় বলে কাফরুল থানার এসআই নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন। নিহতের জামাতা আরিফ ভূঁইয়া অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।
আরিফ ভূঁইয়া বলেন, রাতে নিজের প্রতিষ্ঠানের গাড়ি জমা দিয়ে উত্তর খানের বাসায় ফিরতে বাসে উঠতে অপেক্ষা করছিলেন তার শ্বশুর। ওই সময় একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি গাড়ির নম্বর প্লেট উদ্ধার করেছে। গাড়ির মালিক কে- তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান এসআই নাসির।
তবে এরই মধ্যে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে দাবি করেন, একরাম চৌধুরীর ছেলে শাবাব চৌধুরী গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। যোগাযোগ করা হলে তা অস্বীকার করেন একরাম চৌধুরীর স্ত্রী শিউলী। তিনি বলেন, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন নুরুল আলম নামে তাদের গাড়িচালক। উত্তরায় এক বান্ধবীর কাছে একটি পার্সেল পাঠিয়েছিলেন তিনি, সেটা নিয়ে যাচ্ছিলেন নুরুল আলম।
নুরুল আলম এখন কোথায়- তা জানতে চাইলে শিউলী বলেন, তারাও ওই গাড়িচালককে এখন ‘খুঁজে পাচ্ছেন না’।
এদিকে, বনানীতে এমপি পুত্রের গাড়ি চাপায় সেলিম ব্যাপারী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ঘটনায় তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী । তাদের বর্ণনা রেকর্ড করেছে কাফরুল থানা পুলিশ। তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী গতকাল বুধবার কাফরুল থানায় গিয়ে ঘটনার বর্ণনা দেন। তাতে বলা হয়, বনানী ফ্লাইওভারে গাড়িচালক সেলিম ব্যাপারীকে প্রথমে দ্রুতগতিতে প্রাইভেটকার দিয়ে ধাক্কা দেয় নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল হক কবির চৌধুরীর ছেলে শাবাব চৌধুরী। এরপর ব্যাক গিয়ার দিয়ে আবারও সেলিমকে গাড়িচাপা দিয়ে পালিয়ে যান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে নিহত সেলিম ব্যাপারীর জামাতা আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরাম কবির চৌধুরীর ছেলে শাবাব চৌধুরী গাড়ি চালাচ্ছিলেন। মঙ্গলবার রাতে তার শ্বশুর প্রাইভেটকার চালক সেলিম ব্যাপারী ডিউটি শেষ করে বনানী সেতু ভবন সংলগ্ন ফ্লাইওভার পার হচ্ছিলেন। এ সময় সেলিম ব্যাপারীর দুই পায়ের ওপর গাড়ি তুলে দেন শাবাব চৌধুরী। এ সময় চাপা খেয়ে গাড়ির বাম্পার চেপে ধরেন সেলিম ব্যাপারী। তখন গাড়ি ব্যাক গিয়ারে দিয়ে আবারও সেলিমকে চাপা দেওয়া হয়। সাবাব চৌধুরী গাড়ি ব্যাক গিয়ারে নিলে সেলিম ব্যাপারী ফ্লাইওভারের গার্ডারে ধাক্কা খান। সেখানে তার মগজ বের হয়ে যায়। এরপর গাড়িটি টান দিয়ে পালিয়ে যান এমপি পুত্র সাবাব চৌধুরী।
কাফরুল থানার এসআই সুজন কর্মকার বলেন, ‘মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে সেলিম ব্যাপারীকে একটি গাড়ি চাপা দেয়। ঘটনাস্থলে ওই গাড়ির নম্বর প্লেট পাওয়া গেছে। ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৭৬৫৫ দিয়ে বিআরটিতে আবেদন করা হয়েছে। আশা করি, বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।’ তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার পর লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় এরপর ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে নেওয়া হয়। সেলিম ব্যাপারীর মেয়ের জামাই আরিফুল ইসলাম রাতেই বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলা নম্বর-১৮, ২০/০৬/২০১৮ইং। মামলার তদন্ত চলছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বলেন, ঘটনার সময় সাবাব চৌধুরী একাই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তিনি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তার পরনে এক কালারের শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা ছিল।
সেলিম ব্যাপারীর মেয়ে সাদিয়া আক্তার তামান্না বলেন, ‘রাত সাড়ে ৯টার দিকে সবশেষ বাবার সঙ্গে কথা হয়। মেয়ের বাসায় রাতে দাওয়াত খেতে যাওয়ার কথা ছিল। বাবা বলেন, ডিউটি শেষ করে গাড়ি জমা দিয়েছি। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি, তোমার বাসায় যাব। এরপর মাকেও ফোন করে জানিয়েছে, তোমরা ঘুমিয়ে পড়। আমি তামান্নার বাসায় যাব। এর কিছুক্ষণ পর রাত ১০টার দিকে আমার শ্বশুরের ফোনে কল করে কে যেন জানিয়েছে, বাবা অ্যাকসিডেন্ট করেছে, যেতে হবে।
মেয়ে তামান্না বলেন, ‘আমার বাবা নাওয়ার প্রপার্টিস নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে এমডির গাড়ি চালক ছিলেন। ওই এমডি রাজধানীর নাখালপাড়ায় থাকেন।’ তিনি জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বরিশালে নেওয়া হবে।
এমপি একরামুল কবির চৌধুরীর মোবাইল নম্বরে একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। তাই এ ঘটনার বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।