খুলনায় থামছে না কোচিং বাণিজ্য
খুলনা অফিস : নীতিমালা উপেক্ষা করেই খুলনা মহানগরীতে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে শহরজুড়ে কোচিং বিরোধী মনোভাব গড়ে উঠলে আশাবাদী হন সচেতন অভিভাবকরা। কিন্তু তথাকথিত কোচিং ব্যবসায়ীদের কৌশলের কাছে শেষ পর্যন্ত কোচিংবিরোধী অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে।
জানা যায়, খুলনার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় দুই ডজন শিক্ষক খোলাখুলিভাবেই কোচিং ব্যবসায় জড়িত। ওই সকল শিক্ষক কোচিং বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকায় স্কুলেও ঠিকমত ক্লাস করেন না। দরিদ্র শিক্ষার্থীরা উচ্চমূল্যে কোচিং করতে না পেরে শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছেন। আর নিম্ন মধ্যবিত্ত অভিভাবকরা প্রতিমাসে কোচিংয়ে শিক্ষকের খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অবাধে চলছে কোচিং বাণিজ্য। নগরীর বয়রা হাজী ফয়েজউদ্দিন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাচীর ঘেঁষে চলছে রমরমা কোচিং। এই বিদ্যালয়ের ইংরেজির সিনিয়র শিক্ষক মোশারেফ হোসেন, সহকারী শিক্ষক হামিম, অনুপ, দিপংকরসহ সকলেরই রয়েছে ব্যক্তিগত কোচিং ঘর। রায়েরমহল কলেজের গণিত শিক্ষক পরিতোষ তার বাড়ির নিচতলায় কোচিং চালাচ্ছেন। প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তিনি মাসিক ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা আদায় করেন। শিক্ষার্থীদের অগ্রিম টাকা দিয়ে তার কাছে পড়তে হচ্ছে। অথচ সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, মেট্রোপলিটন এলাকায় সর্বোচ্চ তিনশ’ টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ে দুইশ’ টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া যাবে। এবং ওই টাকার বিপরীতে তাদেরকে রশিদ দিতে হবে।
এদিকে খুলনার আরেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের গণিত শিক্ষক রোকন, আইসিটি শিক্ষক বিপ্লব, সহকারী শিক্ষক রাকেস, সুজাই, শংকর, প্রবির কুমার দে, মডেল স্কুল এন্ড কলেজের গণিত শিক্ষক কৃষ্ণ, সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান, ইশারত আলী কোচিং ব্যবসায় জড়িত।
অভিভাবকরা জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এইসব শিক্ষক নির্বিঘ্নে কোচিং ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে কৌশল বদলে গোপনে কয়েক শিক্ষার্থীকে একত্রিত করে বাসায় পড়াচ্ছেন।
ফিজা নামের এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘আমি সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য। আমার মেয়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। প্রতিটি বিষয় এর জন্য তাকে কোচিং করাতে হচ্ছে। স্কুলে ঠিকমতো পড়াশোনা হলে কোচিং সেন্টারের প্রয়োজন হতো না। পাবলিক কলেজের শিক্ষক রোকন জানান, ‘আগে পড়াতাম, এখন তেমন একটা পড়াই না।’ জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুচ্ছেদ ২ এর (ক) উল্লেখ আছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্কুলে ক্লাসের বাইরে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ক্লাস করানো যাবে। কিন্তু এসব নীতিমালা না মেনেই চলছে কোচিং বাণিজ্য।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা প্রশাসক আমিনুল আহসান বলেন, নতুন করে কোচিং বাণিজ্য চলার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।