২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার শেষপর্যায়ে -সংসদে প্রধানমন্ত্রী
সংসদ রিপোর্টার : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবহীন ভয়াবহ নিষ্ঠুর হামলা বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ভয়াবহতম নিষ্ঠুর হামলা। যেখানে ক্ষমতাসীন দল (বিএনপি-জামাত) রাষ্ট্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিরোধী দল (আওয়ামী লীগ) কে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করেছিল। শেখ হাসিনা বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার শেষপর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মামলাটি বর্তমানে যুক্তিতর্ক পর্যায়ে রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫২ জন আসামীর মধ্যে ১৮জনের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। বাকি আসামীর পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হলেই এই মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য হবে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাসিমা ফেরদৌসীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এই তথ্য জানান।
প্রধানমন্ত্রী জানান, খালেদা জিয়ার মন্ত্রী সভার একজন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও তার ভাই তাজউদ্দিন এই মামলার অন্যতম আসামী। গেনেড হামলা চলাকালে টিয়ার সেল ছুড়ে হামলাকারীদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করা হয়। তারা গ্রেনেড হামলার পরে যখন জানতে পারে আমি বেঁচে আছি, তখন সেই রাতেই তাজউদ্দিনসহ আরো কয়েকজনকে দেশ থেকে পালিয়ে বিদেশে যাবার সুযোগ করে দেয়া হয়। সেখানে হামলা হয় সে স্থানটির আলামত নষ্ট করার জন্য রাস্তা ধুয়ে মুছে সাফ করাও হয়।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, বিএনপি জামাত জোট সরকারে থাকাকালীন গ্রেনেড হামলা মামলার প্রকৃত আসামীদের আড়াল করার জন্য তথাকথিত জজ মিয়া নাটক সাজায়, তাকে বেশ কয়েকমাস ভাতাও দেয়া হয়। এ জোট সরকার যেন-তেন প্রকারে ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণও শেষ করে। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত শেষ করে ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সকল আসামীদের অন্তর্ভূক্ত করে চার্জশিট দেয় এবং আরো ১৬৪ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয়।
গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় নতুন ৬৮টি দেশসহ ১৬৫টি দেশে কর্মী পাঠানো হচ্ছে। বিগত ৯ বছরে ৫১ লাখ ৯৮ হাজার ৯১৪ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে ২০১৭ সালে গেছেন ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫জন। নতুনভাবে রাশিয়ায় লোক পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবেশীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব
ভারতের সঙ্গে ছিটমহল সমস্যা ও ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানার বিরোধ নিষ্পত্তির প্রসঙ্গ তুলে চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে আমরা দেখিয়েছি, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমস্যা যতই জটিল হোক না কেন আলোচনার মাধ্যমে তার শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্ক সম্পর্ক বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার একটি টেকসই ও নায্য সমাধান চাই।
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়া সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে এই সংসদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতন, ধর্ষণের শিকার হয়ে ব্যাপক হারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করলে আমরা আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে তাদের আশ্রয়, খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছি। আমরা সবসময়ই মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে আমরা দ্বিপাক্ষিত, আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিত কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি এর একটি টেকসই সমাধান হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ক্রমবর্ধমান কুটনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বের প্রেক্ষিতে পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় বাংলাদেশের কুটনৈতিক কর্মকাণ্ড এখন বহুমাত্রিক। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল, দায়িত্বশীল ও সক্রিয় রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ সমাধানে দেশে ব্লু ইকোনোমির বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হয়েছে। আমরা ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রিয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি।
উম্মে রাজিয়া কাজলের (মহিলা আসন-৪৩) এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বর্তমান সরকার নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ১০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৬১ জনকে ১০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। তিনি জানান, বিগত ১৯৯৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ পরিবার ও বীর শ্রেষ্ট শহিদ পরিবারের মাসিক রাষ্ট্রিয় খাতে ১ হাজার ১০১ কোটি ৮২ লাখ ২১ হাজার ৬৪১ টাকা ব্যয় হয়েছে।
সংসদ সদস্য মো. নুরুল ইসমলাম ওমরের (বগুড়া-৬) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে গ্যাসের উৎপাদন বেড়ে দাড়িয়েছে ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। যা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমান সরকারের সময়ে মোট ১৪ টি অনুসন্ধান কূপ, ৫২ টি উন্নয়ন কুপ খনন এবং ২৫ টি কুপের ওয়ার্কওভার সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া ১৬ হাজার ৬৬২ লাইন কিলোমিটার দ্বি-মাত্রিক সাইসমিক সার্ভে এবং ৪ হাজার ১০৬ বর্গ কিলোমিটার ত্রিমাত্রিক সাইসমিক সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় ৪টি নতুন সুন্দলপুর, শ্রীকাইল, রূপগঞ্জ এবং ভোলায় গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়।
রাঙামাটির সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিরাজমান পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে কয়েকদফা সংলাপের পরে সরকারের সাথে পার্বত্র্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্র চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সৃষ্টি হয় ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই এবং ১৯৯৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমাকে চেয়ারম্যান করে ২২ সদস্য বিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী তিন পার্বত্র জেলায় ৩টি পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করা হয়। এ অঞ্চলে শান্তি ফিরেছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরসহ গতকালের বৈঠকের প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।