সুশীলদের আচরণ দেখে গাধার কথা মনে পড়ে -প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার : সুশীলদের আচরণ দেখে গাধার কথা মনে পড়ে যায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশের জনগণের কাছে যেতে পারেন না। ভোটের রাজনীতিতে তারা অচল। ভোটে রাজনীতি করতে হলে জনগণের ভোট পেতে হয়। ভোট পেয়ে এই সংসদে বসতে হয় ও সরকার গঠন করতে হয়। যদি আমরা গণতান্ত্রিক ধারা অনুসরণ করতে চাই। কিন্তু এই একটা শ্রেণী আমাদের আছে তারা কিন্তু জনগণের কাছে যেতে চায় না। তারা ক্ষমতার বাকা পথ খুঁজে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। বাপ্পি বলেন, দেশে অনেক উন্নয়ন হলেও এবং বিশ্ব তার স্বীকৃতি দিলেও সুশীল সমাজরা উন্নয়ন চোখে দেখে না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতামত জানতে চান তিনি।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের গতিধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্ব স্বীকৃতি দিচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের কিছু মানুষ তারা এই উন্নয়নটা চোখে দেখে না।
তিনি বলেন, বাংলায় তো একটা গান আছে- হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ। (এসময় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করেন)। যারা চোখ থাকিতে অন্ধ, কান থাকতে বধির। তাদের তো হাজার বলেও দেখানোও যাবে না, শোনানেও যাবে না। যারা দেখতে পায় না, শোনতেই পায় না তাদের তো আমাদের বোঝানোর কিছু নেই।
তিনি বলেন, আমার একটায় চিন্তা আমার বাংলাদেশের মানুষ কি পেল, তারা ভাল আছে কীনা, তারা খুশী আছে কীনা। তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারছি কীনা- এটাই আমাদের বিষয়। আমি জানিনা এই সুশীলের ব্যাখ্যাটা কি অর্থটা কি। কোন তত্ত্বের ভিত্তিতে তারা সুশীল সেটা প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয় যখন তারা কোন কিছু দেখনও না শুনেনও না। তারা সুশীল না অসুশীল আমি জানি না। তবে একটা শ্রেণী আছে যাদের খুব আকাক্সক্ষা ক্ষমতায় যাবার। তাদের আকাক্সক্ষা তাদের একটি পতাকা পাওয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই ধরনের কিছু মানুষ ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পায়। এই ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য কিছু মানুষ খুঁজে নেয়, যারা সব সময় নিজেদের এইসব অশুভ শক্তির কাছে বিক্রি করতে প্রস্তুত। যেমন আমরা রাস্তার পাসে ডাস্টবিনে লেখা দেখি ইউস মি। তারাও রাজনীতি বা ক্ষমতার ক্ষেত্রে বুকে ওরকম একটি সাইনবোর্ড লাগিয়েই বসে থাকে ‘ইউস মি’ মানে ‘আমাকে ব্যবহার করুণ’। তারা সব সময় এরকম একটা আশায় বসে থাকে। তাদের এই যে না দেখাটাও কিন্তু ওই ধরনের একটা অসুস্থতা। কারণ তাদের দৃষ্টিটা রয়ে গেছে ওই অবৈধ ক্ষমতার দিকে। মাননীয় স্পিকার আমাকে একটু সময় দিলে একটি গল্প শোনাই, স্পিকার এরপর বলেন, জ্বী বলুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্কাসের একটি সুন্দরী মেয়েকে বারবার দড়ি দিয়ে ঝুলানো চেষ্টা করেও পারছিলেন না তার ইন্সট্রাকটর। এরপর তিনি মেয়েটির পাশে রাখা একটি অথর্ব গাধাকে দেখিয়ে বলে এরপর যদি তুমি না পার তাহলে গাধার সঙ্গে বিয়ে দেব। একথা শুনে গাধা আশায় আশায় থাকে কখন দড়ি ছিরে ওই মেয়ে পড়ে যাবে। আর গাধা বিয়ে করবে। আমাদের দেশের সুশীল সমাজের অবস্থা এরকম। (এসময় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করেন।)
তবে আমি তাদের গাধা বলছি না। কারণ তারা সবাই জ্ঞানী গুনী শিক্ষিত। তবে তাদের আচরণগুলো যখন দেখি, আর ওই যে কবে দড়ি ছিড়বে, কবে কপাল খুলবে ওই আশায় যারা বসে থাকে স্বাভাবিকভাবে তখন তো একটু গাধার কথা মনে পড়ে। (আবার টেবিল চাপড়ে প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করে সরকারি দলের এমপিরা)।
ময়মনসিংহ-৮ আসনের সাংসদ ফখরুল ইমামের এক তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদকে জানান, বর্তমান গণমুখী ও জনগণের কল্যাণকারী আওয়ামী লীগ সরকার তার ক্ষমতার দুই মেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং সেগুলো দ্রুতগতিতে বাস্তবায়ন করছে।
মহিলা আসন-৩০ এর সাংসদ ফজিলাতুন নেছো বাপ্পির এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখো, জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টনিও গুটেরেস এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম-এর যৌথ আমন্ত্রণে আমি ২০১৭ সালের ১১ থেকে ১৩ ডিসেম্বর ফ্রান্স সফরকালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ওয়ান প্লানেট সামিট- এ অংশগ্রহণ করি। এ সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট -এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও মিলিত হই। অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আমাদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সঙ্কট, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন এবং দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্যত রুপরেখা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। এ সময় বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করি। এই সফরের ফলে বন্ধুপ্রতিম ফ্রান্সের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুর্দঢ় হয়েছে এবং দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি অধিকতর মজবুত ও গভীরতর হয়েছে।
মৌলভীবাজার-২ আসনের সাংসদ আব্দুল মতিনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের পশ্চাৎপদ অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। হাওর-বন্যাদুর্গত এলাকাসহ পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নে আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত মেয়াদের ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান মেয়াদের এ পর্যন্ত গৃহীত কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়িত করা হচ্ছে।
খুলনা-৬ আসনের সাংসদ শেখ মো. নুরুল হকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার এই যে, কেউ গৃহহীন থাকবে না। আর এ লক্ষ্যে আমরা আশ্রায়ন প্রকল্প, গুচ্ছগ্রাম, আদর্শগ্রাম, খাস জমি বিতরণ, গৃহায়ণ তহবিল ইত্যাধির মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
ভোলা-২ আসনের সাংসদ আলী আজমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। দেশের নদী ভাঙ্গন অন্যতম সমস্যা। দেশের বড় নদীগুলো ক্রমাগত তার চ্যানেল পরিবর্তন করে। ফলে নদী তীরের অবস্থান পরিবর্তন হয় এবং নদী ভাঙ্গণ দেখা দেয়। নদী ভাঙ্গন এলাকায় মানুষের দুর্দশা দূর করার লক্ষ্যে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
মহিলা আসন-৪২ এর সাংসদ নুরজাহান বেগমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যুবসমাজকে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি টেকনিকেল শিক্ষা প্রদানে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
কুমিল্লা-১ আসনের সাংসদ সুবিদ আলী ভূইয়ার এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, দেশের প্রত্যেকটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।