খুলনায় মাদক ও সুন্দরী নারীর ফাঁদে ফেলে চাঁদাবাজি ॥ রাতে ফাঁকা স্থানে ব্যবসায়ী টার্গেট করে ছিনতাই
খুলনা অফিস : খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ( কেএমপি)’র বিভিন্ন থানা এলাকায় পুলিশ রূপী অপরাধীদের নানা অপরাধের তথ্য উঠে আসছে। অনেকগুলো ঘটনার মধ্যে দু’একটি ঘটনা সামনে এলেও অধিকংশ থেকে যায় অন্ধকারে। এতে করে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে একের পর এক অপরাধ সংঘটিত করে যাচ্ছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, নগরীর ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীদের টার্গেট করে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায় এক শ্রেণির অপরাধীরা। এরপর তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে ওই চক্রটি। সাধারণ মানুষ কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই অপরাধ সংঘটিত করে পালিয়ে যায়। এ চক্রটির সাথে ওয়্যারলেস সেট, হ্যান্ডকাপসহ কোমরে পিস্তল সাদৃশ্য বস্তু দেখা যায়। তবে আসলেই এরা কারা বা তাদের এ দুঃসাহসী কান্ড ঘটনোর পেছনের রহস্য উদ্ঘাটনই হচ্ছে না।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর দুপুরে নগরীতে পুলিশ পরিচয়ে একজন প্রাইভেটকার চালককে ধরে নিয়ে নারী দিয়ে ফাঁসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় মো. ইউনুচ মোল্লা (৫৪) সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে আম্বিয়া (২০) নামের একজন নারীকে গ্রেফতার করলেও পুলিশ পরিচয়দানকারীদের এখনো সনাক্ত করা যায়নি।
ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রাইভেটকার চালক মো. ইউনুচ মোল্লা জানান, ঘটানর দিন দুপুর আড়াইটার দিকে সোনাডাঙ্গা থানাধীন মজিদ সরণীস্থ আল আকসা গলির মুখে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় দু’জন ব্যক্তি তার কাছে এসে নাম জিজ্ঞাসা করে বলেন তোর নামে অনেক অভিযোগ আছে চল। তাদের সাথে হ্যান্ডকাপ ও ওয়্যারলেস সেট দেখে পুলিশ মনে করেন তিনি। তবে নিজেকে কি অপরাধে নেয়া হচ্ছে, তা জানতে চাইলে চোখ রাঙ্গিয়ে ভয় দেন ওই দু’জন। তাকে একটি মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে ১নং বয়রা ক্রস রোডের একটি বাসায় নেয়া হয়। সেই বাসায় ছিল ৪ নারী। এক পর্যায়ে প্রাইভেটকার চালক মো. ইউনুচ মোল্লাকে সেখানের থাকা একজন নারীর সাথে আপত্তিকর কিছু ছবি মোবাইলে ধারণ করে পুলিশ পরিচয়ের ওই দু’জন ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়।
সম্মান ও জীবন বাঁচাতে কাছে থাকা ১৭ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পান তিনি। লিখিত অভিযোগ পেয়ে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন বাড়ির মালিক মো. নান্নু শেখ। তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, লাকী আক্তার নামের একজন মহিলা এনজিও কর্মী পরিচয়ে দু’মাস আগে বাড়িটি ভাড়া নিয়েছেন। ২ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে এসআই উত্তম মিত্র অভিযান চালিয়ে শিববাড়ী মোড় থেকে আম্বিয়া (২০) নামের ঐ নারীকে গ্রেফতার করে। সে লাকীর সাথে ওই বাড়িতে থাকতো বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। তবে ওই ঘটনায় জড়িত পুলিশ পরিচয়দানকারীরা এখনো সনাক্ত হয়নি।
এদিকে ৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১টার দিকে নগরীর ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারের একজন মাংস ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে বাসায় ফিরছিলেন। কেডিএ এভিনিউ রোডের করিমাবাদ কলোনির সামনে এলে দু’টি মোটরসাইকেলযোগে ৪ ব্যক্তি পুলিশ পরিচয়ে তার গতিরোধ করে। তাদের সাথে ওয়্যারলেস সেট ও হ্যান্ডকাপ ছিল। এ সময় তল্লাশীর নামে ওই ব্যবসায়ীর সাথে থাকা মাংস বিক্রির ২০ হাজার ১৫০ টাকা নিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল চালিয়ে পালিয়ে যায় ওই চক্রটি।
এ বিষয়ে কেএমপির ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) আব্দুল্লাহ আরেফ পিপিএম বলেন, সম্প্রতি এ ধরনের দু’একটি ঘটনার খবর শুনেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানাকে কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুলিশ পরিচয়ে কারা এ ধরনের অপরাধ করছে তাদের সনাক্ত এবং দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, কেএমপি পুলিশের সজাগ দৃষ্টির কারণে অপরাধীরা নানা ধরনের সাজে অপরাধ সংঘটিত করার চেষ্টা করছে। তবে যারা এ চক্রের সাথে জড়িত শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এজন্য তিনি সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হয়ে চলাচলের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এ ধরনের পরিচয়দানকারীদের সামনে পড়লে আশপাশের মানুষ ডেকে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে নিকটস্থ থানায় খবর দিয়ে পুলিশের সহায়তা নিতে আহ্বান জানান তিনি।
কেএমপি কমিশনার মো. হুমায়ুন কবির পিপিএম বলেন, অপরাধীরা যতই শক্তিশালী হোক পুলিশ এদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।