আওয়ামী লীগ নেতা লক্ষ্মণ ও তার স্ত্রীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
খুলনা অফিস : খুলনার উত্তরা ব্যাংকের প্রায় ১৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলায় দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পাট রফতানিকারক সুজিত কুমার ভট্টাচার্য্য ওরফে লক্ষ্মণ বাবু, তার স্ত্রী মিতা ভট্রাচার্য্য ও উত্তরা ব্যাংকের ৫ কর্মকর্ত-কর্মচারীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খুলনার উপ-সহকারী পরিচালক মোশারেফ হোসেন এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সোমবার মহানগর হাকিম মো. শাহীদুল ইসলাম মামলা পরিচালনার জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে নথী প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন-দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা ৫৪/৩ সাহেব বাড়ি রোডের মৃত ইন্দ্রজিত কুমার ভট্টাচার্য্য এর ছেলে মেসার্স উত্তরা জুট ট্রেডার্সের মালিক সুজিত কুমার ভট্টাচার্য্য ওরফে লক্ষ্মণ (৫০), তার স্ত্রী মিতা ভট্রাচার্য্য (৪০), উত্তরা ব্যাংক স্যার ইকবাল রোড শাখার প্রাক্তন ম্যানেজার রতন কুমার বণিক, সিনিয়র অফিসার আলমগীর হোসেন, প্রিন্সিপাল অফিসার মারুফুল ইসলাম, গুদাম রক্ষী মো. লুৎফর রহমান লিটন, প্রাক্তন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার এটিএম মোতাব্বের।
দুদক সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে উত্তরা ব্যাংক থেকে ৩ প্রকারে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন উত্তরা জুট ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী সুজিত কুমার ভট্টাচার্য ওরফে লক্ষ্মণ বাবু। কিন্তু সময়মত ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৫ সালে এসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৮ কোটি টাকা। ব্যাংকের তদন্তে পেজ ঋণ নেয়ার পর গুদামে ১৮ কোটি টাকার পাট ঘাটতি ধরা পড়ে। এ সময় তার গুদামে মাত্র এক কোটি টাকার পাট পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১১ জুন উত্তরা ব্যাংক খুলনা শাখার ডিজিএম মো. ইব্রাহিম উদ্দিন নগরীর দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রতারণা করে ব্যাংক থেকে ১৮ কোটি ৬০ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। দুদক খুলনার উপ-সহকারী পরিচালক মোশারেফ হোসেন মামলাটি তদন্তভার গ্রহণ করেন। মামলা দায়েরের ১০ মাস পর গত বুধবার বিকেলে তিনি নূর নগর এলাকা থেকে সুজিত কুমার ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করেন।
দীর্ঘ ৫৫ বছরেও খুলনা টিবি ক্লিনিকটি অপরিবর্তিত
দেশ স্বাধীনের ৯ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬২ সালে খুলনা মহানগরীর নিউ মার্কেটের পূর্বপাশে স্থাপিত হয়েছিল টিনসেডের একটি ঘর। বক্ষব্যাধি বা টিবি ক্লিনিক নাম নিয়েই যাত্রা হয়েছিল ওই ঘরটির। শুধু খুলনায়ই নয়, দেশের ১৭টি জেলায় একযোগে স্থাপন করা হয়েছিল এমন ১৭টি টিবি ক্লিনিক। সেই থেকে দেশের অন্য ১৬টিটির ন্যায় খুলনার এ ক্লিনিকটি যক্ষ্মা ও টিবি রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবেই পরিচয় বহন করে আসছে। কিন্ত সেই টিন সেডের ঘরটির আজও পরিবর্তন হয়নি। উপরে হার্ডবোর্ডের সিলিং খুলে পড়ছে। রেফার্ড রোগীদের দেখা হলেও বর্তমানে নেই কোন জুনিয়র কনসালটেন্ট। মাস খানেকের মধ্যেই তিনজন চিকিৎসকের পরিবর্তন হয় এ প্রতিষ্ঠানটিতে। তেরখাদার একজন ডাক্তারকে এখানে পদায়ন করা হলেও তিনি যোগ দেননি। অর্থ নেই তাই এ ক্লিনিকে কেউ আসতে চান না, আসলেও বেশিদিন থাকেন না। এমন মন্তব্যও অনেকের। আবার অনেকের বেলায় এটি পানিশমেন্ট পোস্টিং বা শাস্তিমূলক বদলীর জায়গায়ও পরিণত হয়েছে। কাউকে ভাল লাগল না বলে তাকেই এ ক্লিনিকে দেয়া হয় এমনটিও জনশ্রুতি রয়েছে। তবে সদ্য যাকে মেডিকেল অফিসার হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে তাকে দিয়ে কর্তৃপক্ষ কিছুটা পরিবর্তনের আশা করছেন। কর্তৃপক্ষীয় এমন আশাবাদ সত্যি হলেই হয়ত পরিবর্তন হতে পারে টিবি ক্লিনিকের। নতুবা টিবি ক্লিনিকটি নিজেই হয়ত ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে সমাজের জন্য বোঝা হতে পারে। নগরীর নিউ মার্কেটের দক্ষিণ পূর্ব কোনের ৪১ শতক জমিতে ১৯৬২ সালে স্থাপিত খুলনা টিবি ক্লিনিকটিতে কাশি পরীক্ষা করে রোগীর শরীরে টিবি আছে কি না সেটি নির্ণয় করা হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য মাইক্রোস্কোপ সেন্ট্রিফিউজ, মানাকুলার, অলিম্পাশ ও বাইনো কুলার মেশিন থাকলেও নেই এক্স-রে মেশিন। এক্স-রে মেশিন না থাকায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রেডিওগ্রাফিকে প্রেষণে বদায়ন করা হয়েছে খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে। কয়েক বছর আগে একটি এক্স-রে মেশিন আনা হলেও সেটি বসানো সম্ভব হয়নি উপযোগি কক্ষ না থাকায় কারণে। পরে সেটি নেয়া হয় খুলনা জেনারেল হাসপাতালে। এছাড়া কফ পরীক্ষার দুটি মেশিন বিকল রয়েছে বলেও টিবি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানান।
সূত্রটি বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ৭০১ জন রোগীর কফ পরীক্ষা করে ৪৫ জনের টিবি সনাক্ত করা হয়। এছাড়া গত বছর ১৬০৩ জনের মধ্যে ৫৩ জন, ২০১৫ সালে ২৪৭৫ জনের মধ্যে ৮৯ জন, ২০১৪ নালে ২৪১৪ জনের মধ্যে ১২৪ জন, ২০১৩ সালে ২১১৫ জনের মধ্যে ৮৫ জন এবং ২০১২ সালে ১৯১৪ জনের মধ্যে ৯১ জনের টিবি সনাক্ত হয়। এছাড়া বহিঃবিভাগে প্রতি বছর আড়াই থেকে তিন হাজার রোগীর ব্যবস্থাপত্র ও ঔষাধ দেয়া হয়। তাদেরকে পাঠানো হয় রোগীর বসবাসের ঠিকানার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত কেন্দ্রে। সেখান থেকে দীর্ঘমেয়াদী ঔষাধ সরবরাহ করা হয়। তবে যেসব রোগীতে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে তাদেরকে পাঠানো হয় খুলনার মিরেরডাঙ্গাস্থ বক্ষব্যধি হাসপাতালে।
সরকারি একটি গুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্বেও খুলনা টিবি ক্লিনিকটি দীর্ঘ ৫৫ বছরেও রয়েছে অপরিবর্তিত। বিশেষ করে জনবল সংকট থাকছে প্রায়ই। বর্তমানেও ক্লিনিকটিতে জুনিয়র কনসালটেন্টের পদটি শূন্য রয়েছে। এ জন্য যিনিই মেডিকেল অফিসার হিসেবে থাকছেন তাকেই দুটি দায়িত্ব পালন করতে হয়। এছাড়াও একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও) একজন গাড়ি চালক এবং একজন অফিস সহায়ককে প্রেসণে রাখা হয়েছে খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল ও খুলনা সিভিল সার্জন অফিসে। সদ্য যোগদান করা মেডিকেল অফিসার ডা. সমীর রঞ্জন জোয়ার্দ্দার বলেন, শুধুমাত্র কফ পরীক্ষা করে সনাক্ত করা হয় রোগীর যক্ষ্মা বা টিবি আছে কি না সেটি। কিছু ্ঔষাধ দেয়া হয়। তবে সব প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয় ফ্রি। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এ ক্লিনিকটি খোলা থাকে। সরেজমিনে পরিদর্শন কবে দেখা অবকাঠামোগত উন্ননই মূল চাহিদা। টিনসেডের ঘরটির একদিকে ডোবা থাকায় বর্ষা মওসুমে পুরো ঘরটিই থাকে স্যাতসেতে। তাছাড়া উপরের সিলিংও মাঝেমধ্যে খুলে পড়েছে। এতে কর্মরতদের থাকতে হয় আতঙ্কে।
আগত কয়েকজন রোগী জানালেন, টিবি ক্লিনিকটির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এটিই নিজেই ব্যধিতে আক্রান্ত। সুতরাং যে প্রতিষ্ঠানের প্রতি রোগীদের আস্থা থাকে না সে প্রতিষ্ঠানের সেবার মান কতটা ভাল হতে পারে সেটি সহজেই অনুমান করা যায়।
টিবি ক্লিনিক সম্পর্কে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে টিবি ক্লিনিকের ভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হতে পারে।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এইচইডি খুলনার সহকারী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হক বলেন, টিবি ক্লিনিকের টিন সেডের ঘর ভেঙে সেখানে নতুন ভবন নিমার্ণের জন্য এইচইডির মহাপরিকল্পনায় অন্তভূক্ত করতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্ত এখনও ঢাকা থেকে ওই প্রস্তাব অনুমোদন হয়ে আসেনি।