চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছি এমনটা ভাববেন না -মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার : আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে সেমিফাইনালে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এবার কঠিন গ্রুপ থেকে বাংলাদেশের সেমিতে যাওয়াটা ছিল কল্পনার বাইরে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডি/এল মেথডে ৪০ রানে হেরে বিদায় নেয় অস্ট্রেলিয়া। আর তাতেই ‘এ’ গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। অধিনায়ক মাশরাফি নিজেও সেমিফাইনালে যাওয়াকে ‘অবিশ্বাস্য’ হিসেবে দেখছেন। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ আইসিসির কোন টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল খেলতে যাচ্ছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই মাশরাফির কাছে অন্য সব অর্জনের চেয়ে এই অর্জন অনেকটা এগিয়ে। তবে শেষ চার নিশ্চিত করার পর মাশরাফি ভক্তদের প্রতি অনুরোধ রেখেছেন, প্রত্যাশার মাত্রা যেন মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়। সেমিতে চাপ মুক্ত হয়ে খেলতেই ভক্তদের প্রতি মাশরাফি অনুরোধ করে বলেছেন,‘কেউ যেন ভাবতে না শুরু করে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছি। ছেলেরা চাপ মুক্ত খেলতে পারলে খুশি হবো। দয়া করে বাংলাদেশকে এখনই চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে দেবেন না। সব কিছুরই একটা প্রসেস আছে। ওই প্রসেস অনুযায়ী এগোতে পারলে ভালো কিছু হবে ইনশাআল্লাহ।’ বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠেছে ‘গ্রুপ অব ডেথ’-এর বাধা পেরিয়ে। মাশরাফি মূলত এই কারণেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালকে এগিয়ে রাখছেন। এটা নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টে সেরা আট দল খেলছে, প্রতিদ্বন্ধিতা অনেক। মানও ভালো। তবে বিশ্বকাপ তো বিশ্বকাপ। সেটির নামের ভারই অনেক বেশি। দুটির একটিকে বেছে নেওয়া কঠিন। তারপরও আমার কাছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল এগিয়ে। আমি এটাকে এগিয়ে রাখছি গ্রুপের কারণে। অন্য গ্রুপটাতে থাকলে হয়তো এগিয়ে রাখতাম না। উপমহাদেশের দলগুলোর সগ্রুপে থাকলে আমরা জিততেই পারতাম। এই গ্রুপে একটি ম্যাচ জেতাও খুব কঠিন ছিল। সেই গ্রুপ থেকে সেমিতে ওঠাটা অসাধারণ অর্জন।’ প্রথম আইসিসির বড় কোনও টুর্নামেন্টের শেষ চার নিশ্চিতের পর অধিনায়ক মাশরাফি স্মরণ করেছেন বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটারদের। বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় এই অর্জনে ক্রিকেটার হিসেবে মাশরাফি গর্বিত। নিজে গর্বিত হওয়ার পাশাপাশি সাবেক ক্রিকেটাররা যারা জাতীয় দলের জন্য অবদান রেখে গেছেন তাদের কথাও স্মরণ করলেন তিনি। আমিনুল ইসলাম বুলবুল, নাঈমুর রহমান, হাবিবুল বাশার, আকরাম খান, মোহাম্মদ রফিকদের অবদান স্মরণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ পাবেন যারা অনেক আগে ক্রিকেট খেলেছেন। ছোট ছোট পদক্ষেপ ফেলে আজকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই জায়গায় এসেছে। আজকে হয়তো দলে অনেক তারকা আছে। কিন্তু আমি মনে করি একটা নিয়মের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট এই পর্যায়ে এসেছে।’ সেমিফাইনালের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পর নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মাশরাফি বলেন,‘এটা আমাদের জন্য বিশাল এক অর্জন। ক্রিকেটার হিসেবে আমি গর্বিত, অধিনায়ক হিসেবে তো বটেই। আমার অধীনেই দল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে উঠেছে, এর চেয়ে বেশি আর কী-ই বা চাওয়ার ছিল। সবসময় বাংলাদেশ দলকে এ অবস্থায় দেখতে চেয়েছি। আমি একজন ে খেলোয়াড় হিসেবে দেখতে চেয়েছিলাম বাংলাদেশের ক্রিকেট একদিন এই জায়গায় আসবে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হলেও কিংবা বিশ্বের এক নম্বর দল হলেও উন্নতির জায়গা থাকে। আমরা সবে মাত্র ভালো খেলা শুরু করেছি। এটার গ্রাফটা ধরে রাখাই আমাদের দায়িত্ব।’ মাশরাফির বিশ্বাস তরুণ ক্রিকেটারদের স্বপ্নটা আরও বড় করতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, ‘এটি নতুনদের ভবিষ্যতে আরও বড় স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করবে। সেমিতে প্রতিপক্ষ যেই হোক আমরা প্রস্তুত।’ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জয়ের ব্যাপারে মাশরাফি বলেন,‘সত্যি বলতে, আসার আগে আমি ভাবছিলাম, যদি কিছু করা যায় তা হয়তো ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই সম্ভব। ওদের বোলিংটা অন্য দুই দলের তুলনায় একটু দুর্বল মনে হয়েছিল। এখন যদিও দারুণ করছে। তবে আমি বলছি আগের কথা। তখন ভাবিনি নিউ জিল্যান্ডকে হারাতে পারব। কিন্তু আমরা হারিয়েছি, সেটাও আবার জিততেই হবে, এমন চাপ মাথায় নিয়ে।’ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে পাওয়া একটি পয়েন্টকে গুরুত্বপুর্ণ মানছেন মাশরাফি। তবে শেষের সমীকরণে নিজেদের কৃতিত্বই বেশি দেখছেন। ‘আগেও বলেছিলাম, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১ পয়েন্ট পাওয়া আমাদের জন্য অনেক লাকি হতে পারে। ২০১৫ বিশ্বকাপেও যেটা হয়েছিল। তবে এট্ওা ঠিক, অস্ট্রেলিয়ার ভাগ্যটা তার পরও নিজেদের হাতেই ছিল। শেষ ম্যাচে আমরা নিজেদের কাজটা করেছি। ওরা পারেনি বলেই বাইরে যাচ্ছে।’ ২০১৪ সালের শেষ দিকে মাশরাফি নেতৃত্ব পাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের অসাধারণ সাফল্য যাত্রার শুরু। তবে বিশ্ব আসরের সাফল্য তার পরও একটু আলাদা। দুটি আইসিসি টুর্নামেন্টে স্মরণীয় সাফল্যে নেতৃত্ব দিতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মানছেন মাশরাফি। তিনি বলেন,‘ অধিনায়ক হিসেবে এটা বড় অর্জন বলতে পারি। গোটা দলের অর্জন। সবার প্রচেষ্টা্তইে এই সাফল্য। আমার অধিনায়কত্বে এমন দুটি আসরে কোয়ার্টারে, সেমিতে খেলছি আমরা, এটা অবশ্যই বড় পাওয়া।’