কাশ্মীরী আন্দোলনকে সমর্থনের ঘোষণা পাক সেনা প্রধানের

১১ জুন, পার্স টুডে : ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণ রেখা পরিদর্শনের পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণসহ কাশ্মীরী জনতার আন্দোলনকে সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
গত শনিবার পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের এক বিবৃতিতে প্রকাশ, সেনাবাহিনীর প্রধান বলেছেন, ‘ভারতের প্রত্যেক দুঃসাহসের মুখের মতো জবাব দেয়া হবে। কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিষয়ে সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’
জেনারেল বাজওয়া শনিবার মুজাফফরাবাদ সেক্টরে অগ্রবর্তী সেনাচৌকি পরিদর্শন করাসহ পাক সেনাবাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পাক সেনা প্রধান এক মাসের মধ্যে এ নিয়ে তিন বার নিয়ন্ত্রণরেখা পরিদর্শন করলেন। নিয়ন্ত্রণরেখা পরিদর্শনের সময় তাকে স্থানীয় কমান্ডাররা নিয়ন্ত্রণরেখায় অব্যাহত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন এবং নিজেদের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবগত করান। বাজওয়া সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি এবং সঙ্কটের সময় তাদের পারদর্শিতার প্রশংসা করেন।
জেনারেল বাজওয়া বলেন, ‘দেশ যে নিরাপত্তা উদ্বেগের মুখোমুখি হয়েছে সে সম্পর্কে আমরা সচেতন এবং আমরা সকল ফ্রন্টে সব ধরনের বিপদ মোকাবিলা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম।’
নিয়ন্ত্রণরেখায় বাজওয়ার সফরের পরে এরআগে ভারত-পাক সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার ঘটনা ঘটেছে। গত ৩০ এপ্রিল নিয়ন্ত্রণরেখায় তার সফরের একদিন পরেই ভারতীয় সেনাদের ওপর হামলা হয়। পাক সেনাবাহিনীর গুলিতে দু’জন ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ান নিহত হয় এবং তাদের লাশ বিকৃত করার অভিযোগ ওঠে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অবশ্য এ ধরণের অভিযোগ খারিজ করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে, পাক সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল বাজওয়া নিয়ন্ত্রণরেখা পরিদর্শন করার পরেই গতকাল দিবাগত (শনিবার) রাতে পাকিস্তানি সেনারা জম্মু- কাশ্মীরের পুঞ্চ এলাকার কৃষ্ণাঘাঁটিতে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে।
গণমাধ্যমে প্রকাশ, পাকিস্তানি সেনারা কৃষ্ণাঘাঁটির চারটি সেনাচৌকি লক্ষ্য করে ১২০ এম এম মর্টার এবং স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের সাহায্যে গুলিবর্ষণ করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী পাক বাহিনীর উদ্দেশ্যে পাল্টা গুলিবর্ষণ করে জবাব দিয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কথা নিশ্চিত করে বলেন, রাত সাড়ে ৮ টা নাগাদ গুলিবর্ষণ শুরু হয়। পাল্টা গুলিবর্ষণ করে মুখের মতো জবাব দেয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘আড়াই জায়গায়’ যুদ্ধ করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এছাড়া দুর্গম পার্বত্যাঞ্চলে যুদ্ধ চালানোর জন্য বিশেষ একটি বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তিনি নির্দিষ্টভাবে কোনো জায়গার নাম না করলেও চীন, পাকিস্তান এবং কাশ্মীরে অশান্তির মোকাবিলা করার কথা বলেছেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
জেনারেল বিপিন রাওয়াত অবশ্য ভারতীয় সেনার যুদ্ধপ্রস্তুতি কোনো বিশেষ দেশের বিরুদ্ধে নয় বলে মন্তব্য করেছেন।
দখল করে নেয়ার
আহ্বান জানালেন
রামদেব
ভারতে যোগগুরু নামে পরিচিত বাবা রামদেব পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীর দখল করে নেয়ার জন্য নয়াদিল্লীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পাকিস্তান থেকে যে সব সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য ‘আজাদ কাশ্মীরকে’ দায়ী করে এটি দখল করে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের কারণেই সব সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে এবং অনতিবিলম্বে ভারতের এটি দখল করে দেয়া উচিত। এ ছাড়া, আজাদ কাশ্মীরে ‘সন্ত্রাসীদের’ যে সব ঘাঁটি রয়েছে তাও ধ্বংস করে দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। ভারতের বিহার রাজ্যর মতিহারিতে তিন দিনের যোগ শিবিরের শেষ দিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে এ আহ্বান জানান তিনি।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভারতীয় সেনাদেরও মানবাধিকার আছে। পাশাপাশি পাকিস্তানিদের প্রশংসা করেন এবং তাদেরকে শান্তিকামী বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে কিছু কিছু খারাপ মানুষ রক্তপাত চায়।