বিদ্যালয়ে না আসায় ছাত্রকে বেধড়ক মারধর ১১ ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ
আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা: বরগুনার আমতলী আইডিয়াল হাইস্কুলের মান্না নামের ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রকে বিদ্যালয়ে না আসার কারণে পরিচালক মোঃ হানিফ মিয়া বেধড়ক পিটিয়ে ১১ ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত আটটায় মান্নাকে তার বাবা উদ্ধার করে আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। এ ঘটনায় পরিচালক হানিফ মিয়ার বিরুদ্ধে আমতলী থানায় মামলা হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিম আমতলী গ্রামের মোশাররফ হাওলাদারের ছেলে মান্নাকে এ বছর জানুয়ারী মাসে প্রাইভেট আমতলী আইডিয়াল হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করে। ক্লাস শুরু থেকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসলেও গত মঙ্গল ও বুধবার ফুফাতো বোন-মুকুলের বাড়ী বেড়াতে যাওয়ায় মান্না বিদ্যালয়ে আসেনি। বৃহস্পতিবার সকাল সারে ন’টায় মান্না বিদ্যালয়ে আসলে পরিচালক হানিফ মিয়া তাকে (মান্না) লাইব্রেরীতে ডেকে নেয়। পরে দু’দিন বিদ্যালয়ে না আসার কারনে জোড়া বেতের লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে। ওই সময় ছাত্র অনুনয় বিনয় করে তার (পরিচালক) পা জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করতে থাকে কিন্তু তাতে তিনি নিবৃত হয়নি। পরে ছুটে গিয়ে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী সাইফুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে। তার কাছ থেকে জোড় করে টেনে-হেঁচড়ে এনে পুনরায় মারতে থাকে। এক পর্যায় বিদ্যালয়ের দেয়ালে মাথা ঠেসে ধরে। এতে ওই ছাত্রের নাকে আঘাত এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা জখম যায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্রকে মারধর করতে নিষেধ করলে উল্টো তিনি (পরিচালক) শিক্ষকদের গালমন্দ করে।
মারধর শেষে পরিচালক ওই ছাত্রকে বিদ্যালয়ে সকাল সারে নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা আটকে রাখে। বেধরক যন্ত্রনায় বাড়ী যাওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করলেও যেতে দেয়নি এবং চিকিৎসাও করেনি। ওইদিন রাত আটটার দিকে ছেলের খোঁজ খবর না পেয়ে বাবা মোশাররফ হাওলাদার বিদ্যালয়ে আসেন। পরে মান্নাকে উদ্ধার করে আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অভিভাবকের উপস্থিতি টের পেয়ে পরিচালক হানিফ মিয়া বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ছাত্রের বাবা মোশাররফ হাওলাদার বাদী হয়ে ওইদিন রাত সারে ১০ টায় আমতলী থানায় বিদ্যালয় পরিচালক ও গোছখালী বহুমূখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হানিফ মিয়াকে আসামী করে মামলা করেছে। এছাড়া গত বছর জুলাই মাসে মোবাইল ফোন চালানোর অভিযোগ তুলে দশম শ্রেণীর রাব্বি নামের এক ছাত্রকে বেধড়ক মারধর করে। এতে রাব্বি মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তিন মাস ওই ছাত্রের লেখাপড়া বন্ধ ছিল। অনেক চিকিৎসার পর সে সুস্থ হয়।
শুক্রবার আহত মান্না আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানায় পরিচালক স্যার আমাকে লাইব্রেরীতে ডেকে নিয়ে জোড়া বেতের লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করে। আমি তার পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলে সে আমাকে লাথি মেরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে মারতে থাকে। পরে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী সাইফুল স্যারকে জড়িয়ে ধরি। তার কাছ থেকে আমাকে জোড় করে টেনে নিয়ে আবারও মারধর করে ৬ ৬ষ্ঠ শ্রেণীর কক্ষের সামনে সেখানে বসে বিদ্যালয়ের দেয়ালে মাথা ঠেসে ধরে ধাক্কা দেয়। আমার নাক দিয়ে রক্ত বের হলে আমাকে চিকিৎসা না করিয়ে বিদ্যালয়ে আটকে রাখে। আমি ওই স্যারের বিচার চাই।
ছাত্রের বাবা মোশাররফ হাওলাদার বলেন দু’দিন বিদ্যালয়ে না আসার কারনে আমার ছেলেকে বেধরক মারধর করেছে। তিনি আরো বলেন মারধর করে কোন চিকিৎসা না করিয়ে পরিচালক হানিফ মিয়া বিদ্যালয়ে ১১ ঘন্টা আটকে রেখেছে। আমি এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।