বৃহস্পতিবার ৩০ নবেম্বর ২০২৩
Online Edition

শেরপুরে আইনজীবীদের আদালত বর্জন অব্যাহত

শেরপুর সংবাদদাতা : শেরপুরে আইনজীবীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ও বৈরী আচরণের অভিযোগে দুই বিচারকের আদালত বর্জন অব্যাহত রয়েছে। এতে বিচারপ্রার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। এদিকে জেলা ও দায়রা জজ কিরণ শঙ্কর হালদারের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তার আদালত অনির্দিষ্টকালের জন্য বর্জন অব্যাহত থাকবে বলে জেলা আইনজীবী সমিতি গতকাল বুধবার পুনরায় ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মুমিনুন্নিছা খানমের আদালত বর্জনও চলছে। জেলা আইনজীবী সমিতি গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সমিতির জরুরী সাধারণ সভায় এই দুই বিচারকের আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়।
অপরদিকে আইনজীবী সমিতির আদালত বর্জনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জেলা জজশীপের আওতাধীন সকল কর্মচারী গতকাল বুধবার সকাল নয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত এক ঘন্টার কর্মবিরতি পালন করেন। এ সময় আদালতের সকল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার সকাল থেকে আদালতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে জেলা আইনজীবী সমিতি ও আইনজীবী সহকারী সমিতির সদস্যরা গতকাল বুধবার দুপুরে আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে সমাবেশ করেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ কে এম মোসাদ্দেক ফেরদৌসীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তব্য দেন সমিতির বর্তমান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে এম কে মোরাদুজ্জামান ও রফিকুল ইসলাম, আইনজীবী সমিতির সদস্য মো. আব্দুল মান্নান, খন্দকার মাহবুবুল আলম, আইনজীবী সহকারী সমিতির বর্তমান সভাপতি মো. মোখলেছুর রহমান, সাবেক সহ সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
সমাবেশে আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোসাদ্দেক ফেরদৌসী জেলা ও দায়রা জজ কিরণ শঙ্কর হালদারের অপসারণ দাবি করে বলেন, তার (জেলা জজ) অনভিজ্ঞতা, অদক্ষতা, স্বেচ্ছাচারিতা, অসৌজন্যমূলক আচরণ ও অযোগ্যতার কারণে বিচারাঙ্গণে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এর ফলে বিচারপ্রার্থী জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জেলা জজের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আইনজীবীদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি সমাবেশে ঘোষণা দেন।
আইনজীবী সমিতির এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা জজশীপের একজন দায়িত্বশীল উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, গত ৩০ এপ্রিল রোববার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মুমিনুন্নিছা খানমের আদালতে জামিন অযোগ্য একাধিক মামলার এক নম্বর আসামীকে জামিন প্রদান না করায় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ কে এম মোসাদ্দেক ফেরদৌসী তার (মুমিনুন্নিছা খানম) সঙ্গে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ ও বাগবিতণ্ডা করেন। বিষয়টি জেলা জজ স্যার শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য সমিতির নেতৃবৃন্দকে তার (জেলা জজ) অফিসে আসতে আহবান জানান। কিন্তু সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তা না করে আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন।
প্রসঙ্গত গত ২ মে মঙ্গলবার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম কে মোরাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ৩০ এপ্রিল বুধবার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মুমিনুন্নিছা খানমের আদালতে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ কে এম মোসাদ্দেক ফেরদৌসীর সঙ্গে বিচারক অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পরবর্তীতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্য বিচারিক হাকিম আইনজীবী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু জেলা জজ কিরণ শঙ্কর হালদারের স্বেচ্ছাচারিতা ও বারের (আইনজীবী সমিতি) সঙ্গে পূর্বশত্রুতা এবং বৈরী মনোভাবের কারণে তিনি বিষয়টি নিয়ে মিমাংসার উদ্যোগকে বন্ধ করে দিয়ে উভয়পক্ষকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেন। এ প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সমিতির সভায় জেলা ও দায়রা জজের আদালত অনির্দিষ্টকালের এবং জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালত এক মাসের জন্য বর্জন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ