মার্চ মাসে রাজনৈতিক সন্ত্রাস
মুহাম্মদ ওয়াছিয়ার রহমান : [দুই]
রামনগর বালুর মাঠ ও কীর্ত্তিপাশা বাজারে দু’টি ঘটনায় আহত হয় উত্তম দাস, রীণা দাস ও অঞ্জনা দাস। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ২৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী জিল্লুর রহমান বিএনপি প্রার্থী খলিলুর রহমান মজুমদারের বাড়ীতে হামলা করে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জিল্লুর রহমানকে আটক করে পুলিশ। ২৯ মার্চ ঢাকার আশুলিয়ায় নয়ারহাট বাজারে বালুমহল ও ঝুট ব্যবসা নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের বন্দুক যুদ্ধে আব্দুর রহীম নামে একজন নিহত অপর দশজন আহত হয়। সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ চেয়ারম্যান গ্রুপ ও পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে আব্দুল হালিম, রহমান ও দুখুসহ আহত দশজন। ৩১ মার্চ ফেনীর ছাগলনাইয়ায় সুবেদারী রাস্তার মাথা এলাকায় পৌর আওয়ামী লীগ কর্মী আলম, কামাল ও রাশেদসহ কয়েক জনের সাথে উপজেলা প্রজন্ম লীগ সভাপতি আবুল বশর কাজীর মধ্যে জমির মালিকানা নিয়ে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ভাংচুর ছাড়াও কামাল, আবুল বশর কাজী, রোকেয়া বেগম, আলম, মোতালেব ও তাজু আহত হয়। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জোরাগঞ্জে সোনাপাহাড় এলাকায় বিএসআরএম ষ্টীল মিলের কাছে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত পনের জন। জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজাম উদ্দিন গ্রুপ এবং ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মনির আহমেদ ভাষানী গ্রুপর মধ্যে ২টি সংঘর্ষে উভয় পক্ষে ফয়সাল, নিজাম, সোহেল, বেলাল, শাহীন, আবুল হোসেন এবং আবু নাছেরসহ আহত দশজন। ফরিদপুরের শালথায় খোয়াড় ও দক্ষিণ আটঘর গ্রামে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে পনেরটি বাড়ী ভাংচুর করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান মাতুব্বর ও আব্দুস সামাদ মাতুব্বর সমর্থকদের মধ্যে এই সংংর্ঘষ হয়। সিরাজগঞ্জে শাহজাদপুরের সোনাতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডিলার মজিবর রহমান, তার ভাই আয়েজ উদ্দিন এবং ডাঃ আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে ১০ টাকা কেজি দরের চাল কালো বাজারে বিক্রির অভিযোগে পুলিশ ১৬ বস্তা আটক ও ৭ বস্তা উদ্ধার করে। পরে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাদী হয়ে তাদের নামে মামলা করে।
ছাত্র লীগ ঃ ৩ মার্চ বাগেরহাটের চিতলমারীতে কালিগাতী এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা পরশ মোল্লা ও শাহীন শেখসহ অন্যদের হামলায় অপর নেতা এবং শিবপুর ইউনিয়ন সাধারন সম্পাদক শামীম টৌধূরী আহত হয়। ৪ মার্চ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক লাখ টাকা চাঁদার দাবীতে নগরীর পার্ক মোড়ে ছাত্রলীগের সাথে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে সংঘর্ষে আহত ত্রিশজন। ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি শিশিরের নেতৃত্বে এ সময় তারা দোকান পাট ভাংচুর ও লুটপাট করে। ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসিম উদ্দিন হলের ৫২০নং কক্ষের সীট দখলকে কেন্দ্র ছাত্রলীগ দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে সুমন খলিফা নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়। হল শাখা সভাপতি আরিফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাহেদ খান গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বে এ ঘটনা ঘটে। ৬ মার্চ রাজশাহী সদরে ভবানীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের ডিজিএম ফসিউল হক জাহাঙ্গীরকে হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা নাহিদের দুই বছর সশ্রম কারাদন্ড ও দুই হাজার টাকা অর্থ দন্ড দেয় আদালত। ৮ মার্চ সিলেটের আলোচিত খাদিজা আক্তারকে হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অনাদায়ে দুই মাসের কারাদন্ড দেয় আদালত। উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর খাদিজাকে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে হত্যা প্রচেষ্টা চালানো হয়।
৭ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিনব কৌশলে সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহীন হল দখল করে। হলে নিজ এলাকার হলে সাত খুন মাফ কিন্তু অন্য এলাকার হলে তাকে হল থেকে নানা কৌশলে বের করে দেয়। পিরোজপুরের নাজিরপুরে ছাত্রলীগের হামলায় তিন ছাত্রদল কর্মী আরাফাত ইসলাম সানি, কায়েস শেখ ও জয় মৃধাকে আহত করে। ছাত্রলীগ উপজেলার বন্দর কমিটির সভাপতি গিয়াস ফারাজী ও সাধারণ সম্পাদক আসলাম শেখসহ তিনজন হামলায় অংশ নেয়। ৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ছাত্রলীগ হল শাখা সাধারণ সম্পাদিকা রনক জাহান রাইন ঐ হলে থাকা ছাত্রী নুসরত আঁখির কাছে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। ১১ মার্চ খুলনায় বাণিজ্য মেলার টেন্ডারে গ্যারেজ নিজেদের আয়ত্বে নিতে ব্যর্থ হয়ে ছাত্রলীগ নেতা রাসেল মেলায় হামলা ও ভাংচুর চালায়। এতে দশ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। ১২ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মাখদুম হলের ক্যান্টিন কর্মচারী আব্দুল করীম ডাক না শুনায় তাকে ব্যাপক মারধর করে হল ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফ বিন জহির। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ইউনিয়ন কমিটি গঠন নিয়ে ছাত্রলীগের এক নেতার উপর হামলা চালানো হয়। কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মীমাংসা করে দেয়, তারপরও ফুকুরহাটি ইউনিয়নের শিমুলতলীতে উপজেলা সভাপতি মুহিত গ্রুপ সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলার উপর হামলা করে।
১৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় একাত্তর হলের কক্ষ বরাদ্দের ক্ষমতা ছাত্রলীগের হাতে নেয়ার জন্য হল সভাপতি ফকির রাসেল ও সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদারের নেতৃত্বে হলে তান্ডব চালানো হয়। তাদের তান্ডবে হল প্রভোষ্ট প্রফেসর এ.কে.এম শফিউল আলম ভূঁইয়ার কক্ষ ভাংচুর ও ঘটনার প্রতিবাদ করায় ইউএনবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ইমরান হোসাইনকে মারধর করে ছাত্রলীগ। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় একাত্তর হলের কক্ষ বরাদ্দের ক্ষমতা ছাত্রলীগের হাতে রাখার জন্য তান্ডবের প্রেক্ষিত পাঁচ নেতা-কর্মী সাময়িক ভাবে বহিস্কার করে ছাত্রলীগ। বহিস্কৃতরা হলো- সজিব, তুনান শেখ, সালাহ উদ্দিন, মাহফুজ আহমেদ ও সাকিব। ১৫ মার্চ লক্ষ্মীপুরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ছাত্রলীগ ঢাকা কলেজ শাখার সাবেক আহবায়ক ও সাময়িক ভাবে বহিস্কৃত নেতা নূর আলম ভূঁইয়া রাজুকে নিয়ে একই গাড়ীতে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ লক্ষ্মীপুর সফর করে। গত ২২ জানুয়ারি ১৯ জন নেতার সাথে রাজুকে শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে বহিস্কার করা হয়। ১৬ মার্চ দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি-২ হলের সুপার মুক্তিযোদ্ধ প্রফেসর ডঃ মোঃ ফজলুল হকের নিকট বিশ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে তাকে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ। হল ছাত্রলীগ নেতা মোমিনুল হক রাব্বি, সাদ্দাম, নূর, অপূর্ব, শাহ আলম এবং শেখ রাসেল হলের মোনেমসহ আরো কয়েকজন এই চাঁদা দাবী করে। ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় ইয়াবাসহ আমুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ তিন কর্মী তুহীন মাহমুদ ওরফে আব্দুল হালিম, নয়ন হোসেন ও মিরাজ খান পুলিশের হাতে আটক হয়।
১৭ মার্চ বরিশাল সরকারী হাতেম আলী কলেজ অধ্যক্ষ গত ছয় মাসে যেসব ছাত্র এক দিনও কলেজে উপস্থিত হয়নি তাদের অভিভাবকদের নিয়ে মতবিনিময় কালে এক অভিভাবকের সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল ইসলাম বাপ্পি অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করে। ১৯ মার্চ চট্টগ্রাম মুহসীন কলেজে ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের বিবাদমান হানিফ ও সাইফুল গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রদলের মিছিলে অস্ত্রসহ হামলাকারী পাঁচ ছাত্রলীগ নেতা তারেক আহমেদ, শামসুল ইসলাম অপু ওরফে সালমান অপু, আলতাফুর রহমান মুরাদ, রবিউল হাসান ও সৌরভ আচার্য আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে তাদের জেল হাজতে পাঠায়। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পদুয়া রাস্তার মাথায় ছাত্রলীগ নেতা রাজুকে প্রতিপক্ষ গ্রুপ অপহরণ করে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় আরেক ছাত্রলীগ নেতা সুমনকে দুই রাউন্ড গুলিসহ আটক করে পুলিশ। ২১ মার্চ ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কামালদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের খবর পরিবেশনে বাধা দেয়াসহ প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুন্নু ও সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার মিজানুর রহমানকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ২২ মার্চ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় মদসহ ছাত্রলীগ কর্মী কামরুজ্জামান গনি ও স্বগত বিশ্বাসকে আটক করে পুলিশ। ঝালকাঠির রাজাপুরে দশ লাখ টাকা চাঁদাবাজীর মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আহসান হাবিব রুবেল ও তার পিতা তোফাজ্জেল হোসেন আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের জেল হাজতে পাঠায়।
২৩ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনে সেন মার্কেটের সামনে পথসভায় ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত পাঁচজন। জেলা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ফজলে রাব্বি ও সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমেদ চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। ২৪ মার্চ নোয়াখালীর সেনবাগ সরকারী কলেজে মিলাদ মাহফিলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত পাঁচজন। আওয়ামী লীগ নেতা ও এমপি মোর্শেদ আলম গ্রুপ এবং মেয়র টিপু গ্রুপ সমর্থক ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে বোরহান উদ্দিনসহ আহত পাঁচজন। ২৮ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত পাঁচজন। মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি রায়হান ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। ৩১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ জিয়া হল শাখা কর্মী মাহবুবুল আলম ও তার বন্ধু ঢাকা পলিকেটনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র গিয়াস চৌধুরী ছিনতাইয়ের অভিযোগে আটক হয়। ঘটনায় জিয়া হল ছাত্রলীগ অপর কর্মী মাহমুদুল হাসান ও মিরাজুল ইসলাম মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়। অভিযুক্তরা জাগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মাজেদুন্নবী পারভেজের নিকট থেকে মানি ব্যাগ ও টাকা ছিনতাই করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর আমজাদ আলীর মধ্যস্থতায় রমনা থানা থেকে তারা দু’জন ছাড়া যায়।
যুব লীগ: ২ মার্চ সুনামগঞ্জে এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বাসায় যুবলীগের হামলা ও বাসা ভাংচুর করা হয়। পরে এমপি’র দায়ের করা মামলায় যুবলীগের পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলো- সুনামগঞ্জ পৌর যুবলীগ আহবায়ক ও পৌর কাউন্সিলর আবাবিল নূর, আহসান মিয়া, বশির মিয়া, মনির মিয়া এবং বেলাল চৌধূরী। [চলবে]