চট্টগ্রামে আ’লীগ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ গুলী ভাঙচুর
চট্টগ্রাম অফিস: গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ এলাকার চৌমুহনী সুলতান কলোনীতে জায়গা দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর ও নগর ছাত্রলীগের নেতার লোকজনের মধ্যে গোলাগুলী ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিনজন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় দু’পক্ষ গোলাগুলী ছাড়াও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি ও সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল ও ঘর ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে।
উত্তর পাঠানটুলি ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাবেদ ও নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রিয়াজুল করিম বিলাসের লোকজনের মধ্যে প্রায় একঘণ্টা ধরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় উভয়পক্ষের সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি ২০/২৫ রাউন্ড গুলী ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ সময় প্রতিপক্ষের বাসার গেইট ও তিনটি দোকান ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। আতঙ্কে স্থানীয়রা বাসার দরজা-জানালা বন্ধ করে ভিতরে অবস্থান নেন। ফলে একঘণ্টা ধরে চলা এ তা-ব সামাল দিতে থানা পুলিশ ও দাঙ্গা পুলিশ তলব করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে পুরো এলাকায় সিটি করপোরেশনের বাতি নিভিয়ে দেয় কাউন্সিলরের লোকজন। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্য মতে, নগর ছাত্রলীগ নেতা বিলাসের ফুফু কাছ থেকে কাউন্সিলর জাবেদ কিছু জায়গা কেনার কথা প্রচার হয়। এ জায়গার দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর জাবেদ ও নগর ছাত্রলীগ নেতা বিলাসের মধ্যে ঝামেলা বাধে। বিলাসদের বক্তব্য হচ্ছে, অংশীদারদের মধ্যে ভাগ-বণ্টন না হওয়ার আগে কোন অংশ কার তা নির্ধারিত হয় না। এ কারণে থানায় গত সোমবার বিকেলে বৈঠকের কথাও ছিল। যথারীতি ওই বৈঠকে অংশ নিতে বিলাসরা থানায় যান । এ ফাঁকে জাবেদ ও তার লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় ঘটনাস্থলে অবস্থান নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানিয়েছেন, সুলতান কলোনী এলাকায় জায়গা পরিমাপ করতে গেলে বাধা পায় কাউন্সিলরের লোকজন। এত ক্ষিপ্ত হয়ে তারা এলোপাতাড়ি গুলী শুরু করে। এ সময় হামলার ঘটনায় বিলাসের চাচা ও পিতা আহত হন।
জানা যায়, সাবেক কাউন্সিলর নুরুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা ইসলাম মৌরশী ও খরিদা সূত্রে সাড়ে ৬ গ-া জায়গার মালিক। এর থেকে কিছু জায়গা বিক্রি করতে চাইলে বিপত্তিতে পড়েন তিনি। ওই বাড়ির বাসিন্দা-স্বজনরা বাইরে বিক্রি না করে মৌরশীদের মধ্যে বিক্রির জন্য চাপ সৃষ্টি করছিলেন। এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মাঝে বিরোধ চলছিল। এ বিষয়ে আনোয়ারা ইসলাম বলেন, আমার চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার হওয়ায় জাবেদের কাছে সাড়ে তিন গ-া জায়গা বিক্রি করে দিয়েছি।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ রিয়াজুল করিম দাবি করেন, জায়গাটি আমাদের ঘরের সাথে লাগানো। তাই ফুফুকে জায়গাটি আমাদের কাছে বিক্রির জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু কাউন্সিলরের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা জায়গা দখল করতে এসে বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও তা-ব চালায়। তিনি আরো বলেন, শুধু এ জায়গা নয় কাউন্সিলর এভাবে আরো বহু জায়গা দখল করেছেন।
তবে কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাবেদের বক্তব্য অনুযায়ী, তৎকালীন কাউন্সিলর নুরুল ইসলামের স্ত্রী জায়গা বিক্রি করতে চাইলে চাঁদা দাবি ও হুমকি দেয় প্রতিপক্ষ। বৃদ্ধা থানা পুলিশের আশ্রয় নেন। জায়গা পরিমাপের করতে গেলে আমার সহায়তা কামনা করেন। পুলিশের সাথে জায়গা পরিমাপের জন্য আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এতে হামলা করে প্রতিপক্ষের লোকজন।
এ বিষয়ে ডবলমুরিং থানা ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম জানান, আনোয়ারা বেগম সাড়ে ৬ গ-া জায়গার মালিক। দুই-আড়াই বছর থেকে কিছু জায়গা বিক্রি করতে চাইলে বাধার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। গত সোমবার বিকেলে জায়গার পরিমাপ করতে গেলে দু’পক্ষ অবস্থান নিয়ে ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে। তবে গোলাগুলীর বিষয়ে অবগত নন বলে জানান তিনি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।