রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মালয়েশিয়ার ত্রাণ বিতরণ; পাশে কুয়ালালামপুর সরকার
কমরুদ্দিন মুকুল, উখিয়া (কক্সবাজার) : কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থানরত নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মালেশিয়া থেকে পাঠানো ১৪৭২ মে.টন ত্রাণ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয় গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি ইয়ার্ডে। মালেশিয়া সরকারের পক্ষে সংসদ সদস্য আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল রহিম এবং বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত নুর আশেকিন বিনতে মোহাম্মদ তায়েব, রেড ক্রিসেন্ট ও আইওএম এর প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মোখুরশিদ আলম, ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার সারোয়ার জাহান, রেড ক্রিসেন্ট ও আইওএম এর প্রতিনিধি চট্টগ্রাম- কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ করেন।
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয়া থেকে পাঠানো ত্রাণ ১৫০টি পরিবারের মধ্যে প্রাথমিকভাবে আনুষ্টানিক বিতরণ শুরু হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের চারটি স্পটে মালয়েশিয়া প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই কার্যক্রম শুরু হয়।
ত্রাণ বিতরণকালে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু তারপরও সরকার তাদের ঠেঙ্গার চরে পূর্ণবাসনের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাদের সহায়তা করার জন্য। এর মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সার্বিক সহযোগীতা করে যাচ্ছে। এখন থেকে শুধু বাংলাদেশ নয় আমরাও আছি রোহিঙ্গাদের পাশে। বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পূর্ণবাসনে সহায়তা করবে মালয়েশিয়া সরকার। এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ত্রাণ এসে পৌঁছায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে। এর মধ্যে চাল, ডাল, কফি, চিনি, খাদ্যশস্য, ভোজ্য তেল, কম্বল ও চিকিৎসা সামগ্রীসহ প্রায় ৩৫ প্রকার পণ্য রয়েছে।
ত্রাণ বিতরণ সমন্বয় কমিটির প্রধান ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাইফুল ইসলাম মজুমদার জানান, গতকাল বুধবার প্রাথমিকভাবে দেড়শ’ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে ত্রাণ পাবে রোহিঙ্গাদের ১৫ হাজার পরিবার। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার টেকনাফে এবং সাড়ে ৯ হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে উখিয়ায়।
উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা হয়। এতে সীমান্ত পুলিশের ১২ সদস্য নিহত হয়। এই হামলার জন্য রোহিঙ্গা মুসলমানদের দায়ী করে তাদের ওপর নির্যাতন চালায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের নির্যাতনে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এরপর থেকে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৯ অক্টোবর রোহিঙ্গাদের ওপর সশস্ত্র বাহিনীর নিপীড়ন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর অন্তত ৭০ হাজার সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের
বিএনপিপন্থী দুই কাউন্সিলর বরখাস্ত
সিলেট ব্যুরো : সিলেট সিটি করপোরেশনের বিএনপিপন্থী (সিসিক) দুই কাউন্সিলরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকালে তাদেরকে বরখাস্ত করার প্রজ্ঞাপন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে এসে পৌঁছায়।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই কাউন্সিলর হলেন ৬ নং ওয়ার্ডের ফরহাদ চৌধুরী শামীম ও ১৯ নং ওয়ার্ডের দিনার খান হাসু।
জানা যায়- কাউন্সিলর শামীম ও হাসুর বিরুদ্ধে ফৌজধারী আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। সম্প্রতি নাশকতাসহ এসব মামলায় তাদের অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। আদালত চার্জশিট আমলে নেয়ায় তাদের সদস্যপদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিসিক’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন- ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন তাদের হাতে এসে পৌঁছেছে তবে কি কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে সেটি তার জানা নেই’।
এ ব্যপারে ৬ নং ওয়ার্ডের ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন- ‘আমি রাজনীতি করি। আমার বিরুদ্ধে মামলা থাকাটাই স্বাভাবিক, না থাকাটা অস্বাভাবিক। যেহেতু, আমার বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী সরকার। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও সরকারের। এর জন্য আমাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। আমি উচ্চ আদালতে এর বিরুদ্ধে আপীল করব’।
পরবর্তী তারিখ পহেলা মার্চ
কিবরিয়া হত্যা মামলায়
সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এম কিবরিয়া হত্যা মামলার গতকাল বুধবার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। তবে আদালতে সকল আসামী হাজির না থাকায় সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মকবুল আহসান সাক্ষ্য গ্রহণ করেননি। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১ মার্চ তারিখ ধার্য করেছেন বিচারক। এনিয়ে টানা চার দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পেছানো হল।
সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার কর এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গতকাল বুধবার মামলার ধার্য তারিখে জামিনে থাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জের সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র গৌছসহ জামিনে থাকা আসামীরা আদালতে হাজির থাকলেও সাক্ষী ও ঢাকার কাশিমপুর কারাগারে থাকা আসামীদের কেউই হাজির হননি। ফলে আদালত মামলার পরবর্তী তারিখ পহেলা মার্চ নির্ধারণ করেন।
আলোচিত এ হত্যা মামলায় ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
পলাতক থেকে সিলেটের ডাক সম্পাদনা
রাগীব আলী ও ছেলের
বিরুদ্ধে চার্জগঠন
মামলার কারণে পলাতক থেকে দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকা সম্পাদনা করে প্রতারণার অভিযোগে এক মামলায় ‘দৈনিক সিলেটের ডাক’-এর প্রকাশক ও সম্পাদকম-লীর সভাপতি শিল্পপতি রাগীব আলী এবং তার ছেলে পত্রিকাটির সাবেক সম্পাদক আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেছেন আদালত।
গতকাল বুধবার সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো শুনানি শেষে এই মামলায় চার্জ গঠনের আদেশ দেন। ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পিতা-পুত্রের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন নগরীর উপশহরের বাসিন্দা ও ছাতক প্রেসক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য গিয়াস উদ্দিন তালুকদার।
পলাতক থেকে সম্পাদনাজনিত প্রতারণার জন্য রাগীব আলীর ৫৮ বছর ও তার ছেলে আবদুল হাইয়ের ২৯ বছরের কারাদণ্ডের আবেদন করেন মামলার বাদী। ওই দিন মামলাটি আমলে নিয়ে দণ্ডবিধির ৪১৭ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে সমন জারির আদেশ দেন বিচারক। তবে সমন পাওয়ার পর জবাব না দেয়ায় পরের মাসে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
মামলায় বাদী পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আবুল হাসান, অ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মুজিবুল হক, ও অ্যাডভোকেট শহীদুল হক শাহীন।
মামলার বাদী তার আরজিতে উল্লেখ করেন, কোনো পলাতক আসামী আইনের সুবিধাভোগী হতে পারে না। সংবাদপত্র একটি আইনি প্রকাশনা। সিলেটের ডাক-এর সম্পাদক ও প্রকাশক আদালতে আত্মসমর্পণ না করে স্বীয় নাম ব্যবহার করে পত্রিকা প্রকাশ করতে পারেন না। আইন লঙ্ঘন করে নাম ব্যবহার করে পাঠকদের সঙ্গে ফাঁকিবাজি ও প্রতারণা করা হচ্ছে। গত ১১ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাই তাদের নাম যুক্ত করে দৈনিক সিলেটের ডাক প্রকাশক্রমে প্রতারণার অপরাধ করে চলেছেন। পলাতক অবস্থায় সম্পাদনাজনিত প্রতারণার জন্য আবদুল হাই ২৯টি সংখ্যা প্রকাশ করে ২৯টি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। অন্যদিকে রাগীব আলী প্রকাশক ও মুদ্রক হিসেবে দ্বৈত সত্ত্বায় প্রতিদিন দুটি করে অপরাধের দায় বহন করায় অপরাধের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮টি।
প্রতিদিনের অপরাধের জন্য রাগীব আলীর ৫৮ বছর ও তার ছেলে আবদুল হাইয়ের ২৯ বছর কারাদণ্ডের আবেদন করেন বাদী।