সোমবার ২৭ মার্চ ২০২৩
Online Edition

দু’দিনের উন্মাদনা পেরিয়ে ‘ক্লান্তিদশা’ প্রথম পক্ষে নতুন বই এসেছে ১৭৭৬

স্টাফ রিপোর্টার : বসন্ত বরণ আর পশ্চিমাধাঁচের ভ্যালেন্টাইন ডে এ দু’দিনের উন্মাদনা পেরিয়ে গতকাল বুধবার ১৫তম দিনে অমর একুশে গ্রন্থমেলার সর্বত্র অনেকটাই ‘ক্লান্তিদশা’ পরিলক্ষিত হয়। এদিন গত দু’দিনের তুলনায় মূল গেটে যেমন চাপ কম, তেমনি শাহবাগ বা দোয়েল চত্বর থেকে মেলামুখী মানুষের স্রোতও কম ছিল। এদিকে, প্রথম পক্ষে মেলায় নতুন বই এসেছে এক হাজার ৭৭৬টি।
গতকাল বিকেল সোয়া ৩টায় মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের আনাগোনা ছিল তুলনামূলক কম। এদিন বেচাকেনাও সামান্য কম হয়েছে। বিক্রেতা সোলেমান বলেন, গত দু’দিন উৎসব থাকলেও বিক্রি কিন্তু তুলনামূলক কম হয়েছে। সোমবার পয়লা ফাল্গুনে মেলায় ঘুরতে এসেছিলেন মানুষ। বসন্ত উৎসব পালনের অন্যতম স্থানও এ বইমেলা প্রাঙ্গণ। আর মঙ্গলবার ভালবাসা দিবসেও ছিলো উৎসব পরিবেশ। মানুষ মেলা প্রাঙ্গণে যেমন ঘুরেছে বা ছবি তুলেছে, তেমন বই কিনেনি। এর তুলনায় গত শুক্র ও শনিবারে বই বিক্রি ভালো ছিলো বলে জানান তিনি।
এদিকে দেখা যায়, মেলার ১৫তম দিনে এসে পূর্ব প্রান্তে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সামনে মাত্র নির্মিত হচ্ছে পুস্তক মালিক সমিতির স্টল। মেলায় গত সোমবার থেকে বেশ কিছু চত্বর নির্ধারণ করে কাঠের ফ্রেমে বাক্স আকৃতির চিহ্ন স্থাপন করলেও, নেই চত্বর নির্দেশনা। মেলায় কাগজ, পানির বোতল বা অন্য আবর্জনা ফেলার জন্য কোনো ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়নি এখনো। ফলে খাবারের প্যাকেট বা পানির বোতল ছুড়ে ফেলছে মেলা প্রাঙ্গণেই।
এবার মেলার প্রথম ১৫ দিনে নতুন বই এসেছে ১ হাজার ৭৭৬টি। গতবছর মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় নতুন বই এসেছিল প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। এবারও হয়তো সে রকমই বা আরো বেশি বই আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু এতো বইয়ের মধ্যে মানসম্মত বই তেমন আসছে না বলে অভিযোগ রয়েছে শিক্ষাবিদ, পাঠক-দর্শনার্থীদের। তবে লেখকদের অভিমত ভিন্ন। তারা জানান, সাড়ে তিন বা চার হাজার বইয়ের মধ্যে ২শ’ বা ৩শ’ ভাল বই পাওয়া গেলেই যথেষ্ট। আর সে পরিমান মানসম্মত বই প্রতিবছরই মেলায় আসে।
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, মানসম্মত বই ও লেখক সহজ ব্যাপার নয়। এ জন্য যুগ যুগ অপেক্ষা করতে হয়। তবে আমাদের দেশে এখন যারা লিখছে, তাদের অনেকেই ভাল লিখেন। কিছু তরুণ ভাল লেখকও এসেছে। তিনি বলেন, একটি মেলায় যত বই প্রকাশিত হয়, তার সবই মানসম্মত হবে সেটি আশা করা যায় না। গত বছর প্রায় চার হাজার বই এসেছিল, তার মধ্যে ২শ’ মানসম্মত বই এসে থাকলেই আমি খুশি। এবারও যত বই আসবে তার মধ্যে থেকে ২শ’ বা ৩শ’ মানসম্মত বই এলেই যথেষ্ট বলে তিনি মনে করেন।
এ লেখক আরো বলেন, তবে কিছু ব্যক্তি আছেন, যারা নিজের টাকা দিয়ে বই প্রকাশ করছেন, সেসব বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্নই থেকে যায় বলে তিনি জানান। তিনি তাদেরকে নিজের টাকা দিয়ে বই না ছাপানোর আহবান জানিয়ে বলেন, ভাল লেখক হওয়ার জন্য তাদের তিনি বেশি করে লেখার অভ্যাস ও অন্য লেখকদের বই পড়ার অভ্যাস করার পরামর্শ দেন।
এছাড়া গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১৪৩টি এবং ৩১টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। বিকেলে মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সমর সেনের জন্মশতবার্ষিকী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। সভাপতিত্ব করেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনায় অংশ নেন কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত, অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান এবং কবি পিয়াস মজিদ। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গোলাম কুদ্দুছের পরিচালানায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বহ্নিশিখা’ শিল্পীদের পরিবেশনা ছাড়াও সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতি, আলম দেওয়ান, রুশিয়া খানম, আনোয়ার বাউল, রনজিত দাস বাউল এবং মমতা দাসী বাউল।
ই-বুকের বইমেলা : প্রযুক্তি অগ্রসরতা মানুষের কাজের পরিধি কমিয়ে দিচ্ছে। দু’চারদিন সময় লাগা কাজটি হচ্ছে ক্ষণিকের মধ্যেই। প্রযুক্তির এ সহজলভ্যতার হাওয়া লেগেছে বইমেলায়ও। কাগজের বইয়ের সঙ্গে বইমেলায় মিলছে ই-বুকও। পাঠকপ্রিয়তাও পেয়েছে বেশ।
অমর একুশে বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রয়েছে তিনটি ই-বুকের স্টল; বইঘর, ই-বই এবং সেই বই। পাঠকরা আসছেন, নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপ ডাউনলোড করে অ্যাপলিকেশন ফরম পূরণ করছেন। কিনছেন পছন্দের বই। বিশ্বব্যাপী ই-বুকের প্রচলন আরও আগের হলেও বাংলাদেশে দিন দিন ই-বুক জনপ্রিয় হচ্ছে। স্টলে থাকা রিপ্রেজেনটেটিভরা নিজেদের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছেন দর্শনার্থীদের।
বাংলা সাহিত্যকে ডিজিটালাইজেশন করার জন্য কাজ করছে ই-বুক লাইব্রেরি ‘সেই বই’, ই-বই এবং বইঘর। নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিনামূল্যে অনলাইন লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যান্ড্রয়েট ও আইওএসনির্ভর স্মার্টফোন এবং ট্যাব ব্যবহারকারী গ্রাহকদের অ্যাপটি ডাউনলোড ও ইনস্টল করে দিচ্ছে।
তিনটি স্টলে দায়িত্ব পালনরত রিপ্রেজেনটেটিভদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোবাইলে অ্যাপস ডাউনলোড করে গ্রাহকরা বেশিরভাগ বই বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে কিছু বিশেষ গ্রন্থ কিনতে হচ্ছে গ্রাহকদের। একজন গ্রাহক তার ডেবিট, ক্রেডিট, ভিসা, মাস্টারকার্ড, বিকাশ, এমক্যাশ, ইউক্যাশ, রকেট, মাইক্যাশ ইত্যাদিসহ যেকোনো পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করে বই কিনতে পারছেন। এছাড়া বইমেলা উপলক্ষে সেই বই তাদের সব ই-বুক ৫০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি করছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ