সোনাগাজীর চরাঞ্চল : খুলে যাচ্ছে সম্ভাবনার দ্বার
সোনাগাজীর চরাঞ্চল থেকে ফিরে মাহ্মুদুল হাসান: ফেনী রেগুলেটরের দক্ষিণে প্রায় ৩ কি:মি: দৈর্ঘ্যরে পাইলট চ্যানেল প্রকল্প (বাঁকা নদী সোজাকরণ) এবং ছোট ফেনী নদীর ভাটিতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর অংশে মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণ কাজ সফল ভাবে বাস্তবায়িত হওয়ায় এক কালের খরচ স্রোতা এ ২টি বিশাল নদী বর্তমানে অনেকটা মরে যাওয়ায় এবং নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় এ নদী ২টির ভাটিতে পলি জমে মাইলের পর মাইল জুড়ে বিশাল চর জেগে উঠেছে। ফলে বিশাল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সোনাগাজী উপজেলার দক্ষিণে চরাঞ্চলে। সোনাগাজী উপজেলার পূর্বপাশে মীরশ্বরাই উপজেলার পশ্চিমে ইছাখালীর চরাঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়ায়, সোনাগাজীর অংশে চরাঞ্চলেও শিল্পাঞ্চল নির্মাণ কাজসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন মুলক কাজ কে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দ্রুত সুযোগ করে দেয়। এরই ফলশ্রুতিতে বঙ্গোপসাগরের কাছা কাছি ফেনী নদীর মোহনায় সোনাগাজীর বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে চর চান্দিয়ার চর বড়ধলী মৌজায় ১ হাজার একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ (হাইব্রিড বিদ্যুৎ) প্রকল্প। ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানী অব বাংলাদেশ লি: (বিদ্যুৎ বিভাগের অধিনস্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রতিষ্ঠান।) এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানও। বিদ্যুৎ প্রকল্প প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ভূমি অধিকগ্রহণের কাজও শেষ হয়ে গেছে বলে উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে। গত ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট রাজধানীর শেরে বাংলা নগর এন ইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক বৈঠকে অন্যান্য প্রকল্পের সাথে সোনাগাজীতে ১০০ মেগাওয়ার্ড সৌরবিদ্যুৎ এবং ১০০ মেগাওয়ার্ড বায়ু চালিত হাইব্রিড বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রাথমিক ভাবে ভূমি অধিগ্রহণের প্রকল্পের জন্য ১০২ কোটি ৯২ লাখ টাকা অনুমোদন দিয়েছে। এদিকে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ইজিসিবি লি: এর আওতায় ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় সৌর ও বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই এর লক্ষ্যে পাওয়ার সেল এবং মেসার্স উইন্ড ফোর্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লি: এর কর্মকর্তা গণ গত ৫ই ডিসেম্বর ২০১৬ ইং তারিখে সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন। ইজিসিবি লি: এর প্রকল্প পরিচালক ড. কাজী মো: হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী (প্রকিউরমেন্ট) মো: আলাল হোসেন, সান ট্রেস জার্মানির মার্টিন, উইনফোর্স ইন্ডিয়ার সত্যকি ভট্টাচার্য ও ড. দীপশিখা শর্মা। প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে ঐদিনই বিকালে পরিদর্শন টিমের সদস্যরা সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মিনহাজুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিদর্শীসম্বৌধি চাক্মা, উপজেলা চেয়ারম্যান জেডএম কামরুল আনাম, পৌর মেয়র এ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন, সোনাগাজী উপজেলা কৃষি অফিসার মো: শরীফুল ইসলাম, উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো: মিজানুর রহমান, পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। বিদ্যুৎ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন প্রাথমিক পর্যায়ে এ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হতে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং বায়ুচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প হতে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সহ মোট ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। যা দেশের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীডে যোগ হবে। প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনামায় জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্যে সোলার প্যানেলের নিচে উপকূলীয় প্রজাতির মৎস্য চাষ, কৃষি বিভাগের সহায়তায় পুকুর পাড়ে ও খালি জায়গায় ফলজ ও ঔষধি গাছের বাগান সৃজনের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটি দক্ষিণ এশিয়ার তথা আন্তর্জাতিক পরিম-লে সর্বপ্রথম অনন্য প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুর্যোগকালীন বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে সোনাপুর (নোয়াখালী) সোনাগাজী (ফেনী) জোরারগঞ্জ (চট্টগ্রাম) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। প্রকল্প এলাকায় ছোট ফেনী নদীর উপর ৪৭৮, ১৭১ মিটার পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ কাজও চলছে জোরেশোরে। ইতিমধ্যে প্রকল্প এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। ভূমি অধিগ্রহণের পরপরই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে ১৭২.৬৫ কোটি টাকা ব্যায়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলার মধ্যকার সড়ক পথের দূরত্ব প্রায় ১৭.৬০ কিলোমিটার হ্রাস পাবে। অপরদিকে মীরশ্বরাই, সোনাগাজী, কোম্পানীগঞ্জ ও সোনাপুর উপজেলায় আন্তঃসড়ক যোগাযোগ চমৎকার উন্নতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মতামত ব্যক্ত করেছেন। সূত্রে জানা গেছে ১০/১১/২০১৫ ইং সালে প্রকল্পটি একনেকের সভায় পাস হয়। যার বাস্তবায়ন কাল ধরা হয় ০১/০৯/২০১৫ইং হতে ৩০/০৬/২০১৮ইং পর্যন্ত। সওজ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে আরো জানাগেছে বিবেচ্য সড়ক নেটওয়ার্কটি নোয়াখালী জেলার সোনাপুর হতে শুরু হয়েছে এবং ফেনী জেলার সোনাগাজী সদর হয়ে চট্টগ্রামের মীরশ্বরাই উপজেলা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জোরারগঞ্জ নামক স্থানে সমাপ্ত হয়েছে। মোট ৫৬.৫০ কি:মি: প্রাস্তাবিত সড়কটি নোয়াখালী সড়ক বিভাগের অধীনে ৩০.৫০ কি:মি: ফেনী সড়ক বিভাগের অধীনে ১৯ কি:মি: ও চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের অধিনে ৭ কি:মি: অবস্থিত। প্রস্তাবিত সড়কটির এলাইনমেন্ট সওজ এর ৪টি জেলা সড়ক সমন্বয়ে গঠিত। প্রস্তাবিত সড়কটি নিম্নোক্তভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে।
শুরু হবে সোনাপুর-কবির হাট-কোম্পানীগঞ্জ-দাগনভূঞা সড়ক হতে নতুন এলাইনমেন্টে ১.৫০ কি:মি: দিন মনিবাজার-মৌলভীবাজার-কোম্পানীহাট-ছোট ফেনী নদী মহাসড়ক ২৮.০ কি:মি:, সোনাগাজী-ওলামা বাজার-চরদরবেশপুর, কোম্পানীগঞ্জ মহাসড়ক ৭ কি:মি:, ফেনীর সোনাগাজী-মুহুরী প্রকল্প মহাসড়ক ১৩ কি: মি:, জোরারগঞ্জ-মুহুরীগঞ্জ, বেড়ীবাঁধ মহাসড়ক ৭ কি: মি:। প্রকল্পের শেষ হবে ফেনী-চট্টগ্রাম হাইওয়ে।