কুষ্টিয়ায় ২১টি বালুমহালে লুটপাট

মাহমুদ শরীফ, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা : কুষ্টিয়া জেলার ২১টি বালুমহাল তথা পদ্মা ও গড়াই নদীর বিস্তীর্ণ বালুর চর হতে প্রতিদিন অবৈধভাবে বালু লুট করা হচ্ছে। এই লুটের সাথে জড়িত বালু খাদক এই চক্রটি সিন্ডিকেট করে প্রতিদিন লাখ লাখ ঘন ফুট বালু উত্তোলন করায় গত ৭ বছরের ন্যায় এবারও সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছে। রাত দিন ট্রাক ও ট্রলির মাধ্যমে হাজার হাজার ঘনফুট বালু লুট করলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এই বালু মহালের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার।
জানা যায়, পদ্মা ও গড়াই নদীর উৎস মুখ তালবাড়িয়া থেকে শুরু করে খোকসা পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার পদ্মা ও গড়াই নদীতে ২১টি বালু মহাল রয়েছে। বালু মহালের মধ্যে রয়েছে বাহাদুরখালী, মহানগর, চকুয়াদামা ও সুখ দেবপুর, জুগিয়া, শালদহ ও গোবিন্দপুর, মজমপুর, বোয়ালদহ, হাটশহরিপুর, জয়নাবাদ লাহিনীপাড়া, ছেউড়িয়া, ঘোড়ামারা, রানাখড়িয়া, মিনাপাড়া, কাঠদহ, কিত্বিনগর,বিশালচন্ডি, পশ্চিম বাহির চর, পূর্ব দাদাপুর, উত্তর মূলগ্রাম, হিজলাকর, এনায়েতপুর, গোবিন্দপুর, কাশিমপু, হাবাসপুর, কবুরাট, কয়া, এলংগী, ভারড়া, ভবানীপুর, হিজলাবট, খানপুর, ওসমানপুর, চর গোলাপ নগর, বহলা গোবিন্দপুর, হাঁসদিয়া কেশবপুর, সেরকান্দি তেবাড়িয়া, এবং চাঁদট মৌজার বালুমহাল।
এই বালু মহালগুলো হতে গত ৭ বছর যাবৎ একইভাবে অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০৯ সালে এই ২১টি বালু মহাল ইজারা দিয়ে প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছিল সরকার । কিন্তু গত ৭ বছর খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিরোধের কারণে এই বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়নি।
ফলে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। ২০০৮ সালে জনৈক আনোয়ারুল ইসলাম মাসুম বালুমহালগুলো খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ইজারা নিলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাথে বিরোধের সৃষ্টি হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হলো ড্রেজার দিয়ে খননের মাধ্যমে পানিসহ যে বালু উত্তোলন করা হয় তা খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্পদ, কিন্ত চরের শুকনো বালি ভূমি মন্ত্রণালয়ের। দুই মন্ত্রণালয়ের এই বিরোধের কারণে ইজারাদার মাসুম বালু উত্তোলন করতে না পেরে উচ্চ আদালতে ২১টি রীট পিটিশন দাখিল করেন।
জানা যায়, পিটিশনগুলোর মধ্যে ৯টির লিভ টু আপিল মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। যাতে খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় তথা আনোয়ারুল ইসলাম মাসুম হয়েছেন পরাজিত। অথচ বালু উত্তোলন কোথাও থেমে নেই। নিষ্পত্তি হওয়া রিট টু আপিলগুলো হচ্ছে- ৩১১১/২০০৮, ৩১১২/২০০৮, ১৫৯০/২০০৯, ১০২৭/২০১০, ৯১১/২০১০, ৯১২/২০১০, ৩১১৭/২০১০, ৩১২৯/২০০৮/ ১০১৮৪/২০১৩, ২৯৯৪/২০১৪ এবং ১৭৫১/২০১০। রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা ইজারা ছাড়াই প্রতিনিয়ত শত শত ট্রাক দিয়ে বালু অবৈধভাবে উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। চর খাজনার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। এ ব্যাপারে বালু উত্তোলনকারীরা জানান, খাস আদায় করা হয়ে থাকে, অথচ কোথায় কোন ব্যাংকে/কত টাকা রাজস্ব বা খাস দাখিল করা হয় তার সঠিক জবাব দিতে পারেনি।
মূলত মুষ্টিমেয় আমলা আর স্থানীয় লোকদের মধ্যে লুটকৃত বালুর টাকা বিতরণের জন্যই ঐ দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে এই বিরোধ সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরেও দুই মন্ত্রণালয়ের বিরোধ মীমাংসা না করে বালু লুট করা অব্যহত রাখা হবে। বাস্তবে হচ্ছেও তাই। এদিকে এই বালু পরিবহনে নিয়োজিত শ্যালো ইঞ্জিন চালিত শত শত ট্রাক, বাটাহামরা নামক ট্রাকের আদলে তৈরী পরিববহন প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। পরিবহনগুলোর বিকট শব্দ ও কালো ধোঁয়া পরিবেশ দূষণ করছে। এলাকাবাসী অবৈধ বালু লুট ও বাটাহামরা পরিবহন বন্ধ করার জন্য সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।