বুধবার ২৯ মার্চ ২০২৩
Online Edition

স্বাগত ইংরেজী নববর্ষ ২০১৩

আবু মালিহা : সৌর বৎসরের আরও একটি বছর পার হতে যাচ্ছি আমরা। ২০১২-এর শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আসছে নতুন বছর ২০১৩ খৃস্টাব্দ। ইংরেজী নববর্ষ। নানা ঘটনা-দুর্ঘটনাসহ অসংখ্য ঘটনাবহুল ছিল ২০১২ সাল। আমাদের কর্মমুখর জীবন থেকে একটি বছর চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী পুরাতন গর্ভে চলে যাচ্ছে। রেখে যাচ্ছে অসংখ্য চমৎকার ও বিস্ময়কর ঘটনাপঞ্জী। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, উত্থান-পতনসহ নানা ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে স্মৃতি পটে ভেসে উঠবে ২০১২ সাল। সাফল্য ও ব্যর্থতার বছরটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছিল ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ। সরকার এবং বিরোধী দলের টান টান উত্তেজনাকর মুহূর্তগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবনে উল্লেখযোগ্য ঘটনার জন্ম দিয়ে বিদায় হচ্ছে ২০১২ সাল। তবুও একটি বছর আমাদের জীবনের স্মৃতিময় অনুসঙ্গ। নানা আবেগ, প্রেম-ভালবাসা, অভাব, অনটন, দুঃখ-কষ্ট এবং রাজনৈতিক নানা অস্থিরতার সাথে এ বছরটি ছিল আমাদের জন্য ইতিহাসের সাক্ষ। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ আজ নানা সংকটের মধ্য দিয়ে ৪০টি বছর পার করে ৪১তম বছর অতিক্রান্ত করছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার সুখ-স্বপ্ন আজও আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যে লক্ষ্যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তা আজো অধরা রয়ে গেলো। সাহিত্য-সংস্কৃতি-কৃষ্টির স্বাতন্ত্র সত্তায় নতুন একটি দেশের এতটি বছর পরও আমরা বিশ্বের মানচিত্রে বা বিশ্বের কাছে সয়ম্ভর দেশে পরিণত হতে পারলাম না। তার হেতু একটিই তা হচ্ছে প্রথম থেকেই দুর্নীতিবাজ, লুটেরা শাসকদের কবলে পড়ে আমাদের এই বেহাল অবস্থা। দেশের শান্তি, নিরাপত্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমঝোতা, পারস্পরিক ভালবাসা, কল্যাণ চিন্তা, সমৃদ্ধির পরিকল্পনা, এ সমস্ত বিষয়গুলো বাস্তবিক অর্থেই অনুপস্থিত। পরিবর্তে হিংসা, মারামারি, টেন্ডারবাজি, হত্যা, গুম, অপহরণ, পরশ্রীকাতরতা, জিঘাংসা, মানবতা এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়সহ অনৈতিকতার পথ প্রশস্তকরণ ছাড়া আর কোন কিছুরই উন্নতি ঘটছে বলে মনে হয় না। হয়তো বা পাকা বিল্ডিংসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিল্পকারখানার প্রসার দেখা যাচ্ছে কিন্তু তা দীর্ঘ সময়ের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। আর শুধুমাত্র বৈষয়িক কিছু উন্নতি ঘটলেই তো উন্নত হওয়া যায় না। উন্নতির মর্ম কথাই হচ্ছে একটি দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি ক্ষেত্র থেকে শুরু করে রাজনীতিতে পর্যন্ত উৎকর্ষতার স্বাক্ষরসহ সবক্ষেত্রে তার প্রভাব বিস্তার ঘটবে। জাগতিক সমস্ত প্রয়োজনের আয়োজনসহ মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও প্রতিষ্ঠা লাভের সমূহ উন্নতি ও কল্যাণ হবে মূলত মানুষের বেঁচে থাকার প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠার সার্বিক মূল্যায়ন। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা যেন পিছনেই পড়ে রইলাম। এর থেকে উত্তরণের জন্য অবশ্যই রাজনীতিতে আসতে হবে সমঝোতা, গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতা, মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগ, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এবং কর্মতৎপরতায় আন্তরিক নিষ্ঠা। সতত এ গুণগুলো ছাড়া কষ্মিনকালেও জাগতিক কোন বিষয়েই উন্নত হওয়া সম্ভবপর নয়। দেশের নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়ে একটি বছর গত হচ্ছে। আমাদের যাই কিছু অর্জন তা এদেশের মানুষের একান্ত আন্তরিক প্রচেষ্টার সফলতা বলেই ধরে নিতে হবে আর যা কিছু কল্যাণ ছিল তা আমাদের দেশের ভিতর দুষ্ট লোকদের অপতৎপরতা বা রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির বিকারগ্রস্ত এক শ্রেণীর লোকদের কুফল বা বিষময় ফল হিসেবেই ধরে নিতে হবে। তবুও বিশ্বাস করি ষোল কোটি মানুষের এ সবুজ সুফলা শস্য শ্যামলার মায়াময় দেশটির অনেক কিছুই সুন্দর মাটি ও প্রকৃতির উদার পরিবেশের এ জনপদের লোকগুলো মন মানসিকতার চেতনায় সুন্দরকেই লালন করে। আমরা আমাদের এ দেশটিকে সুন্দরভাবে সাজাতে চাই। বিশ্বের মানচিত্রে এ দেশের মান মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে। কেননা এদেশের বীর-বাঙালীরা যেভাবে একটি দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছে তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। তাদের অবদান চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে উজ্জ্বল হয়ে আছে এদেশের মানুষের প্রতিটি হৃদয়ে। তাই তাদের অনুপ্রেরণা ও চেতনা নিয়ে আমরা আগামীতে সত্যিকার অর্থেই সোনার দেশ গড়ব বলেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রইলাম। এদেশের বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশের অনুভূতি যেন বিজ্ঞাপনী ভাষায় এভাবেই ধরা দেয়-‘Rain of summer, snow of winter, grace of autumn. May beauty of every season give your heart a beautiful reason to smile'. অতএব এদেশের সোনালী জীবন ও জগৎ ধরা দিক আমাদের মাঝে পুরনো অতীতকে পিছনে ফেলে, নতুনকে স্বাগত জানিয়ে। আর ভবিষ্যৎ বর্ণিল জীবনের গতিময় ছন্দ আনুক। দেশের মানুষের এবং নতুন প্রজন্মের জন্য শুভ কল্যাণ বারতা বয়ে নিয়ে আসুক নতুন উৎসবের অনাগত ভবিষ্যৎ। সুন্দর ও কল্যাণময় বিশ্ব গড়তে বাংলাদেশ হোক নতুন সারথী। স্বাগত ইংরেজী নববর্ষ ২০১৩। মহান মাবুদ আমাদের সমৃদ্ধ দেশ গড়ার পক্ষে সহায় হোন। দেশ ও বিশ্ববাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট। মোবা : ০১৭১৬-৮৯৫৮২২

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ