বুধবার ২৯ মার্চ ২০২৩
Online Edition

কুরআন অবমাননার জন্য সুইডেনকে ক্ষমা চাইতে হবে --এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন জাতিকে ধর্মহীন নাস্তিক বানানোর গভীর ষড়যন্ত্র চলছে --- ড. রেজাউল করিম

সুইডেনে মহাগ্রন্থ আল কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে এবং দেশের ক্রটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের দাবীতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ও উত্তর    -সংগ্রাম

সুইডেনে মহাগ্রন্থ আল কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে এবং দেশের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর রায় সাহেব বাজার মোড় থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, কামরুল আহসান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম, জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, ঢাকা মহানগরী পূর্বের সেক্রেটারি তাকরিম হাসান,    ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের বিভিন্ন থানা আমীর ও সেক্রেটারিবৃন্দ।

মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, মুসলমানদের আবেগ অনুভূতির প্রাণকেন্দ্র পবিত্র কুরআন মাজিদকে অবমাননা কোনো সভ্য মানুষ মেনে নিতে পারে না। সুইডেনে কুরআন পোড়ানোর এই ন্যক্কারজনক ঘটনা গোটা বিশ্বের মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত করেছে। আমরা কুরআন অবমাননার এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সারাবিশ্বের দুইশত কোটি মুসলমান যে কুরআনকে লালন করে সেই কুরআনের উপরে আঘাত করা মানে সমগ্র মুসলমানের কলিজায় আঘাত করা। আমরা এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুইডেন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত সুইডেনের সকল পণ্য বর্জনের জন্য দেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান রইল। একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে সরকারি ভাবে নিন্দা জ্ঞাপন এবং অবিলম্বে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব এনে সুইডেনের কুরআন অবমাননার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সেই সাথে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য ওআইসি এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মুসলমানেরা আজ আশ্চর্য হয়, যে দেশে নব্বই ভাগ মুসলমানের বসবাস, সে দেশে আজ শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলাম ধর্মকে অবজ্ঞা করে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক তৈরি করা হয়েছে। স্কুল শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে বলা হচ্ছে, মানুষ নাকি বানর থেকে তৈরি! এ ধরনের মূর্খ ভ্রান্ত মিথ্যা গল্প কাহিনী বইয়ে প্রকাশ করায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। ইসলাম ও মুসলমান বিদ্বেষী সকল অযৌক্তিক কাহিনী পাঠ্যপুস্তক হতে অপসারণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সুন্দর স্বাবলীল যেসকল শিক্ষা পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তা আবারো যুক্ত করতে হবে। নাস্তিকতাবাদ ও হিন্দুত্ববাদকে পরিকল্পিতভাবে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করার যে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে, দেশের মানুষ তা কখনো মেনে নেবে না। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ঈমান ও আকিদার কথা বিবেচনায় রেখে স্কুল-কলেজে সুন্দর একটি পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হবে। তিনি ইতিহাস বিকৃতি, ইসলামকে অবজ্ঞা করে পাঠ্যপুস্তক রচয়িতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। 

ড. হেলাল আরও বলেন, অবৈধ সরকার দেশের জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে। ভোট ডাকাতি, দখলদারী, গুম, খুন, দুঃশাসন এবং দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দেশ গভীর সংকটে পড়েছে। এমতাবস্থায় দেশের মানুষের মুক্তির জন্য কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত হয়ে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দকে কারাগারে আটক করে রেখেছে। সারাদেশে জামায়াতের অনেক নেতা-কর্মীকে গুম ও নিখোঁজ করে দেয়া হয়েছে। দেশের বরেণ্য আলেমদেরকে মাসের পর মাস মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন ঘটিয়ে নেতৃবৃন্দকে মুক্ত করা হবে। তিনি এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের উদাত্ত আহ্বান জানান। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।

জাতিকে ধর্মহীন নাস্তিক বানানোর গভীর ষড়যন্ত্র চলছে : দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ না থাকায় বিবর্তনবাদী কুলাঙ্গার ও নাস্তিক্যবাদীদের আত্মস্বীকৃত উত্তরসূরীরা  নৈশভোটের সরকারের ঘাড়ে চেপে বসে জাতিকে ধর্মহীন, নাস্তিক ও উন্মাদ বানানোর গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। 

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে পাঠ্যপুস্তকে বিবর্তনবাদ, সমকামীতাকে উৎসাহ প্রদান, হিজাবসহ ইসলামী মূল্যবোধ বিরোধী প্রচারণা, মুসলিম শাসনের নামে কুৎসা রটনা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি বিষয়ক অধ্যায় সংযুক্ত এবং সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে শিক্ষা কারিকুলাম থেকে আপত্তিকর অধ্যায় প্রত্যাহার করার দাবিতে এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর মিরপুর-১০ গোলচত্বর থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেওড়া পাড়া এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দিন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জামাল উদ্দীন, মু. আতাউর রহমান সরকার, নাসির উদ্দীন এবং শহীদুল্লাহ ও ছাত্রনেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ। সমাবেশ চলাকালে পুলিশ সমাবেশের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে পথচারীসহ কয়েক জনকে আটক করে। 

ড. রেজাউল করিম বলেন, তথাকথিত বিবর্তনবাদ অপ্রমাণিত, অবৈজ্ঞানিক, কল্পিত ও অনুমান নির্ভর  হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য সহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে তা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আধুনিককালের অধিকাংশ বিজ্ঞানী ডারউইনের মতবাদকে বিভ্রান্তিকর, অনুমাননির্ভর ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করে মানবজাতিকে ঐশ^রিক শক্তির সৃষ্টি বলে মন্তব্য করেছেন। পবিত্র কালামে হাকীমের সুরা আল আলাক্বের ২নং আয়াতে  বলা হয়েছে, ‘যিনি (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাটবাঁধা রক্ত থেকে’। এছাড়াও কালামে পাকের সূরা হিজরের ২৮, সূরা শূরার ১১, সুরা রা’দের ৩ ও সূরা নেসার ১ নং আয়াত সহ অনেক আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সৃষ্টি তত্ত্ব সম্পর্কে মানব জাতিকে সুষ্পষ্টভাবে অবহিত করেছেন। কিন্তু সরকারের গণবিচ্ছিন্নতার সুযোগ নিয়ে নাস্তিক্যবাদীরা দেশের ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীকে প্রান্তিকতায় ঠেলে দিয়ে সংঘাত সৃষ্টি মাধ্যমে নিজেরা ফায়দা হাসিল করতে চায়। কিন্তু দেশের আত্মসচেতন জনতা ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র কোন ভাবেই সফল হতে দেবে না বরং যেকোন মূল্যে দেশ, জাতিস্বত্ত্বা, ইসলাম ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দেবে।  

তিনি বলেন, সরকার নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য পাঠ্য বই প্রণয়নের করতে ফাটা, ফুটা ও তলাহীন কথিত বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। এসব অজ্ঞদের প্রণীত বইগুলো ভুলে ভরা, ইতিহাস বিকৃতি ও চৌর্যবৃত্তি সর্বস্ব। মূলত, এরা আত্মস্বীকৃত অপরাধী। তাই এদেরকে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেছেন যে, প্রণীত পাঠ্যসূচিতে ইসলামী বিরোধী কিছু নেই। অথচ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্য বইয়ে পরিকল্পিতভাবে বিবর্তনবাদ ও সমকামীতার পৃষ্ঠপোষকতা, হিজাব ও মুসলিম শাসকদের নিয়ে কটূক্তি এবং বিজাতীয় সংস্কৃতির চর্চাকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। অথচ শিক্ষামন্ত্রী বিষয়গুলো দেখেও না দেখার ভান করে নিজেকে চক্ষুষ্মান অন্ধে পরিণত করেছেন। তিনি অবিলম্বে পাঠ্যসূচি থেকে ইসলাম ও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের তাহজিব-তামুদ্দুন বিরোধী অধ্যায় প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানান। অন্যথায় এজন্য সরকারকেই জনগণের কাছে জবাবদিহী করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ইসলাম এখন নতুন শতাব্দীর জন্য উদীয়মান শক্তি। তাই ইসলাম ও মুসলমানদের অগ্রযাত্রা থামানোর জন্য বিজাতীয় শক্তি গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে সম্প্রতি সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে উগ্রবাদীরা পবিত্র কুরআনে অগ্নিসংযোগ করে পুরো মুসলিম উম্মাহর কলিজায় আঘাত দিয়েছে। তিনি অবিলম্বে কুরআনে অগ্নিসংযোগকারী উগ্রবাদীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার আহবান জানান। অন্যথায় বিশ^মুসলিম সুইডেনের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হবে।

মহানগরী সেক্রেটারি বলেন, সরকার জামায়াতের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে বর্ষীয়ান জননেতা আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে কারা নির্যাতন চালাচ্ছে। তারা চলমান আন্দোলনকে বিভ্রান্ত ও ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র ও কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও সরকার কেয়ারটেকারের গণদাবি কোন ভাবেই পাশ কাটাতে পারবে না। তিনি টালবাহানা পরিহার করে অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, এটিএম আজহারুল ইসলাম, মাওলানা আ ন ম শামসুল আলম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। অন্যথায় সরকারকে এগুয়েমীর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ