বেড়েছে আয়বৈষম্য
দেশে আয়বৈষম্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। ফলে দেশে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্যও এখন আকাশচুম্বী রূপ নিয়েছে। গত দেড় দশকে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে এবং মানুষের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে বলে সরকারসহ বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু এমন দাবি পুরোপুরি সত্য নয়। বাস্তবতা হচ্ছে, মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত মানুষের আয় খুব একটা বাড়েনি। অধিকাংশ আয়ই বেড়েছে উচ্চবিত্ত মানুষের। ফলে দেশে দিন দিন আয়বৈষম্য বাড়ছে; ব্যবধান সৃষ্টি হচ্ছে জীবনযাত্রার ক্ষেত্রেও। সাম্প্রতিক সময়ে তা আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
গত শনিবার কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)-এর এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে ঢাকা মহানগরের মানুষের ওপর ২০২২ সালের মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ে করা এক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষক মাহফুজ কবীর।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর রাজধানী ঢাকায় বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। তবে ঢাকায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির চেয়ে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। এ সময়ে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল খাদ্যবহির্ভূত খাতে। আর খাদ্যপণ্যে এটি ছিল ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, বিভিন্ন হিসাবে দেখা যায়, দেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে। তবে নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের তুলনায় উচ্চবিত্তের আয় অনেক বেশি হয়েছে। এখনো দেশে চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। দিন দিন এ আয়বৈষম্য বাড়ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জন্য কাল হয়ে এসেছে।
আয়বৈষম্য কমিয়ে আনতে সাধারণ মানুষের আয় বাড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সাংবাদিক সম্মেলনে। এতে বলা হয়, দেশে কোনো পণ্যের দাম একবার বাড়লে তা দ্রুত কমবে, এটা আশা করা যায় না। এ জন্য সাধারণ মানুষের আয় বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া দরকার। একই সাথে কর্মসংস্থান বাড়ানোরও আবশ্যকতা রয়েছে। তা না হলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে।
২০২২ সাল সাধারণ মানুষের জন্য একদমই স্বস্তির ছিল না জানিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, এটা অস্বীকারের উপায় নেই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারও অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। এ কারণে যতটা খারাপ পরিস্থিতি হতে পারত, সেটা হয়নি। তবে সার্বিক পরিস্থিতি মোটেই সুখকর নয়।
এমতাবস্থায় নাগরিকদের মধ্যে আয়বৈষম্য কমাতে সাধারণ মানুষের আয়বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। একই সাথে সম্পদের সুসম বন্টন ও ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতির আবশ্যকতা রয়েছে। অন্যথায় এই আয়বৈষম্য বাড়তে বাড়তে এক সময় তা বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।