বুধবার ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

পরিসর বেড়েছে ডেঙ্গুর

দেশে ডেঙ্গুর তাণ্ডব ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সাধারণত এডিস মশাবাহিত ভাইরাস ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ দেখা যায় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এবার নবেম্বরেও ডেঙ্গুর ভয়াবহ তা-ব চলছে। এ মাসের প্রথম ছয় দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৩ জন, মারা গেছেন ২৯ জন। মৌসুম শেষেও এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত বাড়ায়  তৈরি হচ্ছে শঙ্কা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। এডিস মশার ঘনত্ব বেড়েছে। কিন্তু রোগী না থাকলে মশা বাড়লেও ক্ষতি হয় না। কিন্তু এবার রোগীও ছিল আবার মশার ঘনত্বও বেশি থাকায় ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। তারা আরো বলছেন, ‘আমরা হটস্পট ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হয়েছি। যে কারণে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। যেখান থেকে ডেঙ্গু রোগী বেশি আসে, সেখানে ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে মশক নিধন কর্মসূচি পরিচালনা করতে হয়। তাহলে এক রোগী থেকে অন্য রোগী আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁঁকি থাকে ন।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র বলছে, দেশে গত ৬ নবেম্বর ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯০৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৪৭৬ এবং ঢাকার বাইরের ৪৩২ জন। এ নিয়ে সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩ হাজার ৩৬৮ জনে। এ সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনজন মারা গেছেন।

পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সর্বমোট ৪৩ হাজার ১০৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৫৬৯ জন। জানুয়ারি মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২০, মার্চে ২০, এপ্রিলে ২৩, মে মাসে ১৬৩ এবং জুন মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩৭ জন। এ সময়ে মারা গেছেন একজন। এ বছর ২১ জুন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজন রোগী মারা যান। জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৭১ জন, মারা গেছেন নয়জন। আগস্ট মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৫২১ জন, মারা গেছেন ১১ জন। সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত হন ৯ হাজার ৯১১ জন, মারা যান ৩৪ জন। অক্টোবরে বছরের সব রেকর্ড ভেঙে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজার ৯৩২ জন, মারা গেছেন ৮৬ জন। নবেম্বরের প্রথম ছয় দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৩ জন, মারা গেছেন ২৯ জন। এ নিয়ে ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৭০। 

এমনই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেই সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। জানা গেছে, ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে কেউই ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন না। মূলত, নানাবিধ কারণে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। এমনকি এই ভাইরাসের মওসুম পরিধিও বেড়েছে। এমতাবস্থায় আক্রান্তদের চিকিৎসা যখন বিনামূল্যে করার দাবি উঠেছে, তখন সরকার পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি আরোপ করে সার্বিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। অথচ ডেঙ্গুর পরীক্ষাসহ সকল চিকিৎসা বিনামূল্যে করার দাবি উঠেছে সচেতন মহল থেকে। বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ