সিলেটে টানা বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত শীতকালীন সবজি
কবির আহমদ, সিলেট : সিলেটে টানা বৃষ্টিপাত চলতি বছর সবজি চাষের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষা শেষে শীত মৌসুম চলে এলেও দেখা মিলছে না শীতকালীন সবজির। অন্যান্য বছর এই সময়ে সিলেটের বাজারে শীতকালীন প্রচুর সবজি পাওয়া যেত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে ঠিকমত চাষাবাদ করতে না পারায় এখনো বাজারে সবজির দাম আকাশচুম্বী। ক্রেতারা উচ্চ মূল্যে বাধ্য হয়ে বাজার থেকে কিনে নিচ্ছেন অনেকটা নি¤œমানের সবজি।
সিলেট শহরতলীর কামাল বাজার, টুকেরবাজার ও আশপাশ এলাকায় প্রতিবছর প্রচুর সবজির চাষ হয়। এসব সবজি সিলেটের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জায়গায়ও সরবরাহ করা হয়। দক্ষিণ সুরমার রাখালগঞ্জ এলাকার শীম প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। অথচ চলতি বছর সবজি চাষে সিলেটের কৃষকরা বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। আশ্বিন মাসে প্রথমবার বীজ ও চারা রোপণের পর বৃষ্টির কারণে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় আবারো চারা রোপণ করলে চলতি টানা বৃষ্টিতে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। গত শনিবার টুকেরবাজার এলাকা ঘুরে সবজি চাষিদের সাথে কথা বলে পাওয়া যায় এসব চিত্র। সবজি চাষি আফতাব উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে আমার মত অসংখ্য সবজি চাষি মারাত্নক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। আমরা প্রত্যেকেই লক্ষাধিক টাকার মত ব্যয় করে ও চারা তুলতে পারিনি। বৃষ্টি এলেই সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, পুরো টুকেরবাজার কিংবা খাজাঞ্চি এলাকার সবজি ব্যবসায়ীরা এবার চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। আরেক সবজি চাষি লিটন মিয়া বলেন, চারা নষ্ট না হলে বর্তমানে বাজারে লাউ, লাল শাক, পুই শাক, মুলাসহ শীতকালীন সবজি বাজারে পাওয়া যেত। কিন্তু আদৌ কবে আমরা বাজারে সবজি নিতে পারবো তা বুঝতে পারছি না। কারণ বৃষ্টি যেন এবার কিছুতেই থামতে চাচ্ছেনা। ইলিয়াস আলী নামে এক সবজি চাষি সরকারের নিকট তাদের ক্ষতিপূণে দাবি করে বলেন, সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা না করে তবে এবার পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে। একই অবস্থা দক্ষিণ সুরমার রাখালগঞ্জ এলাকার শীম চাষিদের তারা এবার কতটুকু চাহিদা পূরণ করতে পারবেন সেটি নিয়ে সন্দিহান। শিম চাষি আতাউর মিয়া বলেন, এ মৌসুমটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টের। কারণ অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার আমরা শিম চাষ করতে পারিনি। প্রায় সারা বছরই বৃষ্টিপাত থাকায় আমরা চাষে বাধাগ্রস্থ হয়েছি। উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তাকিন চৌধুরী বলেন, চলতি বছরটি আসলেই কৃষকদের জন্য সহনীয় ছিলনা। একাধারে বৃষ্টির কারণে কৃষকরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে চারা, বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। এদিকে বিশেষ করে বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর সময় থেকেই সিলেটে সবজির পাইকারি ও খুচরা বাজার অনেকটা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠেছে। করোনা মহামারিতে যখন মানুষের আয় কমেছে। চাকরি হারিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রীতিমতো ধস নেমেছে। ঠিক তখনই হঠাৎ করে লাগামহীন হয়ে উঠেছে সবজির দাম।