নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতিতে মংলা বন্দরসহ নৌপথ কার্যত অচল
খুলনা অফিস : শ্রমিকদের খাদ্য ভাতা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম, নিয়োগপত্র, সার্ভিস বুক ও পরিচয়পত্র প্রদান, নদীতে নিরাপত্তাসহ লাইটার শ্রমিকদের ১৫ ও নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সারাদেশের ন্যায় খুলনা অঞ্চলেও লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছে নৌযান শ্রমিকরা। মহানগরীতে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। গত সোমবার মধ্য রাত থেকে এ কর্মবিরতি শুরু করে নৌযান শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে নগরীর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঘাট এলাকায় এ মিছিল করে শ্রমিকরা। গত সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারাদেশের ন্যায় খুলনায়ও অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান-শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হয়েছে। তবে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে, নৌযান শ্রমিকদের চলমান কর্মবিরতির ফলে মংলা বন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। পশুর চ্যানেলে অবস্থানরত জাহাজগুলো থেকে কোন পণ্য বোঝাই খালাস কাজ হচ্ছে না। তবে বন্দর জেটি ও গ্যাস ফ্যাক্টরিতে সামান্য কাজ হচ্ছে। মংলা বন্দরে গতকাল পর্যন্ত পন্য বোঝাই ১৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করেছিল।
নৌযান শ্রমিকরা জানান, মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল ও বহিঃনোঙ্গরে এ মুহূর্তে প্রায় ৩ থেকে চারশ’ লাইটারেজ জাহাজ অবস্থান করে কর্মবিরতি পালন করছে। ভোর রাত থেকেই জাহাজের পাশ থেকে সব লাইটারেজ জাহাজ সরিয়ে এনে পশুর নদীতে নঙ্গর করে রাখা হয়েছে। এসব কার্গো জাহাজ ও লাইটারেজ জাহাজের কর্মচারীরা এখন অলস সময় অতিবাহিত করছে। বাংলাদেশ-ভারত নৌ প্রটোকলভুক্ত আন্তর্জাতিক রুটসহ দেশের সব রুটে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। মালিক ও সরকার নৌ শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়া না পর্যন্ত এ কর্মবিরতি লাগাতার চলবে বলে জানিয়েছেন নৌযান শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
এদিকে নৌযান শ্রমিকদের এ কর্মবিরতির ফলে বন্দর ব্যবহারকারীসহ শিপিং ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীনে পড়তে শুরু করেছেন। কর্মবিরতি শুরুর আগ থেকেই বন্দরে অবস্থানরত বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজের সাথে যে সকল নৌযান অবস্থান করছিল সেগুলোতে সোমবার দুপুর পর্যন্ত স্বল্প পরিসরে পণ্য খালাসের কাজ চলেছে। তবে কিছু কিছু জাহাজের সাথে কোন নৌযান অবস্থান না থাকায় সে সকল জাহাজের পণ্য ওঠা-নামার কাজ বন্ধ রয়েছে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার ফখর উদ্দিন বলেন, নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে মংলা বন্দরে। তবে বন্দর জেটি ও কন্টেইনার ইয়ার্ডে চলছে অভ্যন্তরীন কার্যক্রম। তিনি আরো বলেন, বন্দরে এর প্রভাব এখনও পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে না তবে নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার কর্ম বিরতি চললে বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়বে মংলা বন্দরসহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলে জানায় তিনি।
বন্দরের হারবার বিভাগ জানায়, পশুর চ্যানেল ও বহিঃনোঙ্গরে সোমবার বিকেলে ১৫টি বাণিজ্যিক জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় অবস্থান করছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এখান থেকে ৫টি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করেছে এবং নতুন করে আরো ৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ পণ্য বোঝাই করে মংলা বন্দরে খালাসের জন্য নঙ্গর করেছে।
বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের মংলা শাখার সহ-সভাপতি মাইনুল হোসেনের মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক মামুন হাওরাদার বাচ্চু জানান, নৌযান শ্রমিকদের সাথে সরকার ও মালিক পক্ষ নানা ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। এর আগে শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ে কর্মবিরতি পালন করলেও সরকার ও মালিক পক্ষ দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন না করায় নৌযান শ্রমিকরা ফের বাধ্য হয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালন শুরু করেছে। তবে যতদিন পর্যন্ত নৌ শ্রমিকদের দাবি মানা না হবে, এবারের কর্মবিরতি লাগাতার চলবে। ইতোপূর্বে মালিক পক্ষ নৌ-শ্রমিকদের নিয়ে টালবাহানা করেছে কিন্তু এবার নৌ-শ্রমিকরা হয় চাকুরি করবে না হয় মালিক পক্ষের কাছে তাদের নৌযান বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাবে বলেও জানায় লাইটার শ্রমিক ইউনিয়নের এ নেতা।
নারায়ণগঞ্জে নৌ-যান শ্রমিক কর্মচারীদের কর্মবিরতি চলছে
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা: খাদ্যভাতা নির্ধারণ, নিয়োগপত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান, নদী পথে ডাকাতি ও চাঁদাবাজি বন্ধসহ ১৫ দফা দাবিতে নারায়ণগঞ্জে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছে পন্যবাহি জাহাজে কর্মরত নৌ-যান শ্রমিক কর্মচারীরা। বাংলাদেশ পন্যবাহি জাহাজে কর্মরত নৌ-যান শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ জাহাজি শ্রমিক ফেডারেশনের আহবানে সোমবার দিনগত রাত বারোটা থেকে সব ধরণের পণ্যবাহি নৌ-যান শ্রমিক কর্মচারিরা এই কর্মবিরতি কর্মসূচী পালন করছেন। নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা, বুডিগঙ্গা, ধলেশ^রী ও মেঘনা নদীর অন্তত পঁচিশটি ঘাট থেকে পন্যবাহি নৌ-যান চলাচল বন্ধ করে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক কর্মচারি এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। সকাল থেকেই নৌ-যান শ্রমিক ও কর্মচারিরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শীতলক্ষ্যা নদীর পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করেন। নৌ-যান শ্রমিকদের এই কর্মবিরতির কারণে সবগুলো ঘাটে পণ্যবাহি জাহাজ ও কার্গোতে লোড আনলোড বন্ধ রয়েছে।
শ্রমিকদের দাবি, ২০১৯ সালের এই দিনে খাদ্য ভাতা নির্ধারণসহ বেশ কয়েক দফা দাবিতে নৌ-যান শ্রমিকরা আন্দোলন করে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলো। সে সময় সরকার, বিআইডব্লিউটিএ এবং মালিকপক্ষ শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয় ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে নৌ-যান শ্রমিকদের খাদ্যভাতা প্রদান করবে। কিন্তু জাহাজ মালিকরা করোনাসহ নানা অজুহাত তুলে তাদের খাদ্য ভাতা প্রদান করছেন না। যে কারনে শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে এই কর্মসূচি পালন করছেন। দাবি না মানা পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক।