খুলনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলাকালীন কোচিং বাণিজ্য ॥ শিক্ষার্থীরা জিম্মি
খুলনা অফিস : খুলনা মহানগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান চলার সময়ে চলে কোচিং বাণিজ্য। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে রাখা হয় ওই কোচিংয়ে। তবে এসব কিছুকে তোয়াক্কা না করে নিয়মিতই শিক্ষকরা চালান কোচিং বাণিজ্য। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা কিছুটা হুমকির মুখে পড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ রয়েছে, খুলনা পাবড়লক কলেজের আইসিটি শিক্ষক বিপ্লব। তিনি বয়রা মডেল কলেজের পাশে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত একটানা কোচিং করেন। প্রতিটি ব্যাচে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী আছে এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিকট থেকে ৮০০ টাকা নেন। যার কোন রশিদ দেওয়া হয় না। তাছাড়া পাবড়লক কলেজের পদার্থ শিক্ষক রাকেশ, ইংরেজি শিক্ষক রাশেদ, রসায়ন শিক্ষক মন্টু, রায়েরমহল মহাবিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক পরিতোষ, মহিলা কলেজের ইংরেজি শিক্ষক হারুন,পদার্থ ও আইসিটি শিক্ষক সাদিক হোসেন, বয়রা সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের পদার্থ শিক্ষক শফিউল আলম, ইংরেজি শিক্ষক সোহেল, গণিত শিক্ষত কৃষ্ণ, আইসিটি শিক্ষক রাজেন, রসায়ন শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, নৌবাহিনী কলেজের গণিত শিক্ষক আলাউদ্দিন, রসায়ন শিক্ষক মামুন, জীববিজ্ঞান শিক্ষক হুমায়ুন, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজের গণিত শিক্ষক মো. তুহিন, রসায়ন শিক্ষক মেজবাহ উদ্দিন, সরকারি এমএম সিটি কলেজের জীববিজ্ঞান শিক্ষক নিগার সুলতানা, গণিত শিক্ষক মো. মনির।
খুলনা সরকারি পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী আবরার বলেন, আইসিটি শিক্ষক বিপ্লব স্যারের কাছে সপ্তাহে তিন দিন মাসে ১২দিন ব্যাচে পড়তাম। মাসিক ৮০০ টাকা করে স্যারের কাছে পড়তাম একটা কারণে। তিনি আমাদের কলেজের শিক্ষক একটু বাড়তি সুবিধা পেতাম। যা বলতে পারবোনা। আইসিটি শিক্ষক বিপ্লব বলেন, তার কলেজে ডে শিফটে কোনো ডিউটি নেই। তাই অফ টাইমে কয়েকজন শিক্ষার্থী পড়াশুনা করে তার নিকট। সবার কাছ থেকে ৮০০ টাকা নেওয়া হয় না। অনেকের নিকট থেকে একটু কম নেই। তাছাড়া সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষক নিয়ম মানেনা দেশে।
খুলনা বয়রা সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক সেনা সদস্য ইকাল মোল্লা বলেন, তার ছেলের জন্য প্রতি মাসে কোচিং ও শিট খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা প্রয়োজন। এখন কলেজেও তেমন কোনো ক্লাস হচ্ছে না। অথচ একই শিক্ষক কোচিং নিয়ে ব্যস্ত আছে কিছু বলবার বা করবার নেই। তাছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষকগণ স্কুল কলেজে অধিভূক্ত ক্লাস নিলে তাদের মতো অভিভাবকদের জন্য অনেক কষ্ট দূর হতো। বাংলাদেশ আইন থাকলেও মানে কয়জন বলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক কোচিং বাণিজ্য নীতিমালা বন্ধের নির্দেশনায় রয়েছে দেশের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ, নিম্ন মাধ্যমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাত্তক স্নাত্তকোত্তর, মাদরাসা দাখিল, ফাজিল, কামিল ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে এক শ্রেণির শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কোচিং পরিচালনা করে আসছে এবং এটি বর্তমানে এমন পর্যায়ে রয়েছে যে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কোচিং বাণিজ্য শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে । এছাড়া অনেক শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠাদানে মনোযোগ না দিয়ে বাণিজ্যিক ভিক্তিতে কোচিং সেন্টারে দিকে বেড়শ ঝুঁকেছেন। এতে করে দরিদ্র শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য এক প্রকার চরম আর্থিক ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হচ্ছেন। তাছাড়া আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণিকক্ষের পাঠদান কার্যক্রম সময়ের বাইরে এবং শুধুমাত্র অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত ক্লাস করাতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ে মেট্রোপলিটন শহরে মাসিক ৩০০ টাকা, জেলা শহরে ২০০ টাকা এবং উপজেলায় ১৫০ টাকা রশিদের মাধ্যমে অতিরিক্ত সময়ে ক্লাস পরিচালনার জন্য সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। মাসে ১২টি ক্লাস আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে নেওয়া যাবে। টাকা থেকে ১০% এ প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ,পানি গ্যাস ও অফিসের সহায়ক কাজে খরচ করতে হবে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. হেলাল হোসেন বলেন, আমারা কোচিং বাণিজ্যের জন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেছি এবং কোচিং বাণিজ্য যে শিক্ষক করবে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পেলে তার বিরদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।