চবি’র ছাত্রী চলন্ত বাসে যৌন হয়রানির শিকার
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী চলন্ত বাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। বুধবার ‘সোহাগ পরিবহন’র একটি বাসে করে পটিয়া থেকে নগরীতে ফেরার পথে বাসচালকের সহকারীদের হাতে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী।
ঘটনার পর নিজের ফেসবুক পাতায় সে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই ছাত্রী লিখেন- ‘পটিয়া গিয়েছিলাম বোনের বাসায় বেড়াতে। সাধারণত ট্রেনেই আসা যাওয়া করি আমি, বাসে ভমিটিং’র প্রব্লেম থাকার কারণে উঠাও কম হয়। দুলাভাইয়ের বাসা মুন্সেফবাজার গলি থেকে বের হলেই নাকি বাস পাওয়া যায় উনি বলেছিলেন, নতুন ব্রিজ কিংবা টার্মিনাল এর বাস। বাসা থেকে নেমে রিকশা নিয়ে মেইন রাস্তা অব্দি আসলাম। নেমে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই একটা সোহাগ’র বড় বাস আসছিলো, হাত নাড়ালাম। থামলো। বাসে অতটা ভীড় ছিলো না বললেই চলে, তবে খালিও কিন্তু ছিলো না। আমি কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞেস করলাম বহদ্দারহাট যাবে কিনা! উনি বললো যাবে, উঠলাম। জানালার পাশের সিট খুঁজছিলাম, মানুষ কম থাকলেও সবাই মোটামুটি জানালার পাশেই বসে ছিলো। অতঃপর সিট না পেয়ে একটি আন্টির পাশে গিয়েই বসলাম আমি। প্রথম থেকে ৩নং চেয়ারে। বাস চলছে। কন্ডাক্টর ছিলেন দুইজন। একজন দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিলো আরেকজন টাকা তুলছিলো। কিছুক্ষণ পর একজন আসে, বলে ভাড়া দেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম কত? আবারো জিজ্ঞেস করে কই যাবেন?
আমি বললাম : মামা আমি ২নং গেইট যাবো, কোথায় নামলে সুবিধে হয়। উনি বললেন টার্মিনাল। আমি বললাম তাহলে টার্মিনাল এর ভাড়াই নেন। উনি ৬০ টাকা নিলো, আর জিজ্ঞেস করলো একা কিনা, আমি বললাম জ্বি। ভেবেছিলাম হয়তো ভাড়ার জন্য বা ভাড়া নেয়ার জন্য জিজ্ঞেস করেছে। এরপর থেকে উনি বারবার তাকাচ্ছিলো আমার দিকে, আমি অত পাত্তা না দিয়েই আবারো কানে হেডফোন গুঁজে বসেছিলাম। আমার পাশের আন্টি নতুন ব্রিজ নেমে যায়, আমি জানালার পাশে গিয়ে বসি। এরপর বহদ্দারহাট কিনা জানি না একটা জায়গায় এসে বাস দাঁড়ায় এবং অনেকজন নেমে যায়, আমি উঠে নেমে যাচ্ছিলাম কন্ডাক্টর বলে আপনি না ২নং যাবেন? আপনাকে ওখানেই নামাই দিবো বসেন। আমি দরজার পাশে প্রথম সিটে আবারো বসলাম। বাস ড্রাইভার মিরর দিয়ে বারবার তাকাচ্ছিলো আমার দিকে, আমার সন্দেহ হতে থাকে, আমি পিছে তাকাই দেখি একটা মানুষও নাই। আমি বললাম, ভাই আমাকে নামাই দেন আমি ২নং গেইট যাবো না। যিনি দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন উনি দরজাটা খুব তাড়াতাড়ি আটকে দেয়। আমি চিল্লাই উঠে বললাম, ড্রাইভার বাস থামান আমি নামবো, উনি এমন ভান করছিলো যেন উনি আমাকে শুনতেই পাচ্ছে না। আমি ৯৯৯ টাইপ করছিলাম এ সময় কন্ডাক্টর এসে আমার ব্যাগ নিয়ে নেয়, আমি ব্যাগ আটকানোর জন্য উনার সাথে টানাটানি করছিলাম আর সারাক্ষণ চিৎকার করছিলাম জানালা দিয়ে। কন্ডাক্টর আমাকে ধাক্কা দেয়, আমি দরজার সাথে খুব জোরে বারি খাই। আমি পা দিয়ে দরজায় লাথি মারছিলাম আর চিৎকার করছিলাম। আমার হিজাব টানছিলো দুইজন কন্ডাক্টরের একজন। আমি কান্না করে করে লাথি মারছিলাম দরজায়, আর নিজেকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিলাম। রাস্তার কিছু মানুষ ব্যাপারটি হয়তো নোটিস করেছিলো, আমি জানি না। ড্রাইভার বলে ছেড়ে দে, সুবিধা নাই। বাস থামায়, আমি জিনিস নিয়ে নেমে পুলিশ বক্স খুঁজছিলাম ইভেন আমি চিনিওনা জায়গাটা। বাসের নাম্বার দেখতে পারিনি, সবকিছু ঝাঁপসা মনে হচ্ছিলো। একটা রিকশা নিলাম আর বাসায় আসলাম।