রূপসার পুটিমারী বিলে লোনা পানিতে বোরো ক্ষেত প্লাবিত
খুলনা অফিস : ভৈরব ও আতাই নদীর লোনা পানিতে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নের পুটিমারী বিলের অন্তত একশ’ বিঘা জমির বোরো ক্ষেত প্লাবিত হয়েছে। চলতি পূর্ণিমার গোনে প্রবল স্রোতের চাপে বিল সংযুক্ত অকেজো স্লুইসগেট দিয়ে পানি ঢুকে চাষিদের ফসলহানি ঘটতে চলেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের আশ্বাস দিয়েছেন।
স্লুইসগেটটির একটি কপাট নেই। আরেকটি কপাটের জরাজীর্ণ দশা। ভাঙা গেটসহ দু’পাশের ছোট-বড় অসংখ্য ছিদ্র দিয়ে লবণপানি ঢুকে ফলন্ত ধান ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়েছে। অঘটনের পর চাষিরা মাটি-বালির বস্তা দিয়ে কোনো রকমে পানি আটকেছেন। তবে জোয়ারের সময় স্রোতের তোড়ে ওই প্রতিরোধ ভেস্তে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
পুটিমারী বিলে আইচগাতী ইউনিয়নের শোলপুর, যুগিহাটী, শিরগাতী ও দুর্জনিমহল গ্রামের পাঁচ শতাধিক কৃষক বোরো ধানের আবাদ করেছেন। গোটা বিলে সবুজের সমারোহের মাঝে কাঁচা ধানের শিষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। কিন্তু নোনা পানির ঝাঁঝালো তেজে ক্ষেতে পচন ধরার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষকদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেছেন, লবণপানিতে প্লাবিত হওয়ার কারণে ওই বিলের নিচু অংশের অন্তত ১৫ হেক্টর জমির ফসল হুমকির মুখে পড়েছে। নোনা জলে ধান গাছে লাল বর্ণ ধারণ করবে। আগা শুকিয়ে আস্তে-আস্তে গাছ মারা যাবে। লবণপানির প্রবেশ আটকানোর পাশাপাশি বেশি করে মিঠা পানির সেচ দিয়ে বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব বলে তিনি জানিয়েছেন।
গত রোববার বিকেল চারটার দিকে আইচগাতী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শেখ মনিরুল ইসলাম (বুলু) কয়েকজন বোরো চাষিকে নিয়ে দুর্ভোগের কথা জানাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগীয় কার্যালয়ে হাজির হন। সে সময় পাউবো কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যশোর প ও র সার্কেল) অখিল কুমার বিশ্বাস এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জী ভুক্তভোগীদের সাথে বেঠক করেন।
তাদের সমস্যার কথা শোনেন। কর্মকর্তাবৃন্দ সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনপূর্বক ফসল রক্ষাকল্পে জরুরি ভিত্তিতে স্লুইসগেটটি সংস্কার করার ব্যাপারে কৃষকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রগুলো জানান, ৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময়ে পুটিমারী বিলের কৃষকদের ফসলি জমিতে সেচের পানির যোগান দিতে স্লুইসগেটটি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বহু বছরেও সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ এ গেটটি এখন চাষিদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত বোরো মওসুমে কৃষকেরা স্লুইসগেটের মুখে ইট-বালু ভর্তি প্লাস্টিকের বস্তা ফেলে পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করেছিলেন। জোয়ারের পানির ¯্রােতের মুখে ভেঙে যাওয়া বালির বস্তার ব্যারিকেড ১০-১২ দিন অন্তর নতুন করে দিয়ে তারা ধান কাটার কাজ সেরেছিলেন। তবে গেটের দু’পাশের ছিদ্রগুলো দিয়ে পানির প্রবেশ আটকানো যায়নি। এবার ছিদ্রের সংখ্যা আরও বেড়েছে। সেই অগণিত ছিদ্র দিয়ে ঢোকা নোনা জল চাষিদের জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
অপরদিকে, স্লুইসগেটটির ভাঙাচোরা অবস্থার কারণে গেট সংযুক্ত সড়কটির দু’পাশ ডেবে গেছে। রূপসা উপজেলার সেনের বাজার ঘাট থেকে তেরখাদা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী নড়াইল জেলায় যাতায়াতের এই রাস্তাটি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সড়কটি ভেঙে পড়লে বিপুল সংখ্যক মানুষ চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তির মধ্যে পড়বেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।