বৃহস্পতিবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Online Edition

মাটিতে প্রাণের বিকাশ

নূরুল আনাম (মিঠু) : পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ দুইশ’ কোটি বছরের হলেও এর সিংহভাগ সময়ই অতিবাহিত হয়েছে পানিতে। তাও শুধু আবার সাগরের পানি। উল্লিখিত দুইশত কোটি বছরের মধ্যে প্রায় একশ’ ষাট কোটি বছরের ইতিহাসেই সাগরের পানিতে প্রাণের বিকাশের উপাখ্যানে। সেই সময় স্থলভাগ প্রাণের অনুক’ল ছিল না। সেই সময় মাটিতে জীবের জন্য বেশ কিছু সমস্যা ছিল। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ছিল জীবের জন্য সর্বদাই ক্ষতিকর। একে প্রতিরোধের জন্য বর্তমান কালে যে ওজোন স্তর রয়েছে অতীতের আকাশে তা ছিল না। কিন্তু পানি অতিবেগুনী রশ্মি শোষণ করতে পারে। এ কারণেই অতীতে একমাত্র পানিতেই জীব বেঁচে থাকতে পেরেছে, ওজন স্তরের অনূপস্থিতিতে মাটিতে তা সম্ভব ছিল না। মূলতঃ অক্সিজেনের অভাবেই অতীতে বায়ুম-লে ওজোন স্তর গঠিত হতে সময় লেগেছিল। মাটিতে জীবের আর একটা সমস্যা ছিল শরীরে পানি শুকিয়ে যাওয়া। দেহ কোষে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে জীব বাঁচতে পারে না। পানির মধ্যে ডুবে থাকলে শুকিয়ে যাওয়ার ভয় নেই। মাটিতে এ সমস্যার সমাধান করতে যেমন পানি গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হয়েছে তেমনি পানিকে শরীরে ধরে রাখার জন্য পানিরোধক চামড়া সৃষ্টি করতে হয়েছেÑ যার মধ্যে দিয়ে পানি দ্রুত হাওয়া হয়ে যেতে পারে না। সেটির ব্যাবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তাই জীবের ভাঙ্গায় বসবাস সম্ভব হয়নি। এমন কি যখন থেকে উভচর পোকা-মাকড় অর্থা ট্রাইলোবাইরো মাটিতে আসা অভ্যস করেছে তখনো তারা পানির কাছাকাছিই থেকেছে এবং শুরুতে পানিতেই ডিম পাড়তে শুরু করেছে। যতদিন না ডিমের ভিতরেই বাচ্চার জন্য পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না হয়েছে ততদিন পর্যন্ত মাটিতে ডিম দেওয়া ওবাচ্চা ফোটানো সম্ভব হয়নি। অক্সিজেন নির্ভর হয়ে ওঠার পর থেকে জীবের আর একটি অপরিহার্য জৈবিক চাহিদা হল অক্সিজেনেও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বিনিময়। পানির সরাসরি সংস্পর্শে যথেষ্ট তল থাকায় সরাসরি পানি থেকে দ্রবীভূত অক্সিজেন নিয়ে সেখানে কার্বনডাই-অক্সইড ত্যাগ করা যায়। মাটিতে বাতাস থেকে এটি করতে হলে ফুসফুসের অনুরূপ কোন ব্যবস্থার প্রয়োজন। ফুসফুসের ভিতরে তল সৃষ্টি করে তবেই বাতাসের সঙ্গে গ্যাস বিনিময় সম্ভব। এরকম ব্যবস্থা বিকশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত মাটিতে বসবাস সম্ভব ছিল না। এছাড়াও স্থলবাসের পথে আরো বিন্দু সমস্যা ছিল। যেমন শরীরের বর্জ্য নিষ্কাশনের সমস্যা। পানির জীব খুব কম শক্তি ব্যায়ে এটা করতে পারে। এর প্রধান কারণ পানিতে বিবর্তীত জীবগুলোর দেহবজ্য এসেছে প্রধানত এ্যামোনিয়া রূপে। এটি শরীরের জন্য বিষাক্ত বটে কিন্তু এটি তৈরিতে কম শক্তি লাগে। কেননা বিষাক্ত রাসায়নিক ও পানিতে ধুয়ে মুছে যায়। অন্যদিকে মাটিতে জীবের এ ধরনের ঠোয়া মোছার সুযেগা নেই বললেই চলে। তাই তাকে কম বিষাক্ত বডঙ তৈরি করতে হয়। যেমন ইউরিয়া, ইউরিক এসিড ইত্যাদি যা মলমূত্র রূপে মাঝে মাঝে ত্যাগ করলেই চলে বাকি সময় শরীরেই রাখা যায়। কিন্তু সমস্যা হল এরকম জটিল বজ্য তৈরি করতে বেশি রকমের শক্তির দরকার। অর্থাৎ শরীরের বর্জ্য নিষ্কাশনে ভাঙ্গার জীবের আরও অধিক শক্তির প্রয়োজন। নিজের শরীরের ভারটি বহন করাও মাটির জীবের একটি সমস্যা বিশেষ করে শরীর যদি বেশি বড় ও ভারী হয়। পানিতে সেখানে ভর ও ওজনটি পানিকেই বহন করতে হচ্ছে সেখানে ডাঙ্গার জীবকে এ ক্ষেত্রে নিজের শরীরের উপরই নির্ভর করতে হয়। শরীরের ভর আয়তনের সঙ্গে সমানুপাতিক আর আয়তন বাড়ে দৈর্ঘের মন হিসাবে। ঠিক এই কারণেই ডাঙ্গার প্রাণীদের আয়তনের সীমাবদ্ধতা রয়েই গেছে। পানির সব চাইতে বৃহত্তম প্রাণী নীল তিমি কিংবা স্কুইড অতিকায় ডাঙ্গার সবচাইতে বড় প্রাণী হাতের থেকে অনায়াসে বিশগুন বড় হতে পারে। একই কারণ ভাঙ্গায় প্রাচীণ যুগে জীবের পক্ষে খাদ্য যোগাড়ও কঠিন ছিল বিশেষত বড় প্রাণীদের ক্ষেত্রে। কেননা সেই সময় ভূ-পৃষ্ঠে মাটির পরিমাণও এ যুগের তুলনায় কম ছিল এতসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই কিন্তু মাটিতে জীব এসেছে এবং  এখানেই এটি অধিকতর বিকশিত হয়েছে। মাটি থেকে একদল প্রাণী আকাশে উঠেছে এবং গাছেও চড়েছে। আর এ ক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা নিয়েছিল ইউরিস স্টেথিস নামে ট্রাইলোবাইটার একটি শাখা। অতএব সিলুরিয়নে যুগের মাঝামাঝি চল্লিশ কোটি খৃস্টপূর্বাব্দে জীবের বিকাশের সব বড় মোড় পরিবর্তন সংঘটিত হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ