পদ্মবিলের উপর নির্ভরশীল ৭ গ্রামের মানুষের মানবেতর জীবনযাপন
অবিরাম ভারী বর্ষণে খুলনার রূপসা উপজেলার পদ্ম বিলের প্রায় সকল ঘেরসহ সবজি ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তিলক, পাথরঘাটা, গদাইখালী, সামন্তসেনা, দেবীপুর, উত্তর খাজাডাঙ্গা, দক্ষিণ খাজাডাঙ্গা গ্রামের চাষীরা। নদীর নাব্যতা হ্রাস ও পানি নিষ্কাশনের খালগুলি ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ বিলে সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। জমিতে পূর্বে ৩ ফসলী জমির আবাদ করা গেলেও বর্তমানে বছরে এক বার ধান চাষ করেই কৃষকরা বসে থাকে। এদিকে এ বিলের উপর নির্ভরশীল ৭ গ্রামের কয়েকশ’ কৃষক পরিবার অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটাচ্ছে। টানা বর্ষণে প্রায় ৫ শতাধিক একর জমিই এখন পানিতে একাকার। পদ্ম বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির দায়িত্বহীনতা ও খামখেয়ালীপনায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে কৃষকরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৬০ সালের দিকে পদ্মবিলের সব পানি নিষ্কাশন হতো খাজাডাঙ্গা-গদাইখালী হয়ে যুগিখালী (লকপুর) সীমান্ত দিয়ে ভৈরব নদে। তখনকার কতিপয় প্রভাবশালী লোকেরা খাজাডাঙ্গা ও গদাইখালী বিলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে মাছ চাষ পরবর্তীতে তা ভরাট করে ধান চাষ শুরু করে। সর্বশেষ উক্ত খালগুলো নিজ দখলে নিয়ে যায় প্রভাবশালীরা। পরে ১৯৯০ সালের দিকে পদ্ম বিলের কৃষকরা পানি নিষ্কাশনের জন্য আন্দোলনে নামে এবং পরবর্তীতে দেবীপুর কালভার্ট হতে সামন্তসেনার মধ্যে দিয়ে আঠারোবাকী নদীতে এসে পানি নিষ্কাশন শুরু হয়। পরবর্তীতে সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার প্রচেষ্টায় ওই এলাকায় সøুইজ গেট নির্মাণ করা হয়।
কৃষকদের অভিযোগ সøুইজ গেটের দুই পাশে দীর্ঘদিন ধরে পলি অপসারণের না করায় সেখানে পলি জমাট বেঁধে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের ফলে পদ্ম বিলের গলদা, বাগদা, সাদামাছসহ সকল মাছের ঘের পানিতে ডুবে গেছে। তেমনি বর্ষাকালীন সবজি ইতোমধ্যেই নষ্ট হয়ে কৃষকদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পদ্ম বিলের উপর নির্ভর করে সংসার চলে দেবীপুর গ্রামের ৪ সদস্যের পরিবার আব্দুল মুহিত বক্সের।
তিনি জানান, বিলের মধ্যে ঘেরের পাড়ে করল্লা, বরবটি, ঝিঙ্গা, শসা, লাউ, মিষ্টি কুমড়াসহ শাক-সবজি বর্ষাতে নষ্ট হয়ে তার প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে।
সামন্তসেনা গ্রামের সেলিম ফকির জানান, সাত বিঘা জমিতে ৪টি ঘের রয়েছে। ঘেরে চিংড়ি, গলদা ও সাদামাছের চাষ করেছেন। ঘেরগুলি ডুবে গিয়ে মাছ বেরিয়ে গেছে। সেলিম ফকিরের মতো তিলক গ্রামের ইন্তাজ আলী, আইয়ুব আলী, আ. হালিম, নওশের ও গোবিন্দ চন্দ্রের ঘেরের অবস্থা একই রকম। চাষীরা ঘেরের সীমানার উপর দিয়ে জাল ব্যবহার করে মাছ নিজ ঘেরে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।
পদ্ম বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি খান বজলুর রহমান জানান, পানি নিস্কাশনে স্লুইজ গেটের দু’পার্শ্বে গত এক বছরেও কোন পলি অপসারণ করা হয়নি। এর জন্য তিনি সমবায় সমিতিকে দায়ী করেন এবং বলেন পলি অপসারণ না করার কারনে সুইচ গেট থেকে নদী ৪ হাত উঁচু হওয়ায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়েছে।
পদ্মবিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির যুগ্ম-আহবায়ক চঞ্চল মিত্র জানান, স্লুইজ গেটের দু’পাশে পলি অপসারণের দায়িত্ব সমবায় সমিতির নয়। তবে আমরা কৃষকদের কথা চিন্তা করে সমিতির মাধ্যমে আমাদের আওতায় সøুইজ গেটের পার্শ্বে খালের পলি অপসারণের কাজ শুরু করেছি। তবে অপর পার্শ্বে পলি অপসারণের দায়িত্ব আমাদের নয় বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইলিয়াছুর রহমান বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য ইতোমধ্যে আমরা নৈহাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দিয়েছি এবং স্থায়ীভাবে পানি নিষ্কাশনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।