কম্পিউটার বিজ্ঞানে অনাগ্রহ নারীদের
প্রযুক্তি জগতে কমে আসছে নারীদের অংশগ্রহণের হার। বর্তমান সময়ে মার্ক জাকারবার্গ কিংবা বিল গেটসের সমতুল্য তেমন নারী কোডার নেই বললেই চলে।
অনেকের ধারণা, ৮০ এর দশক কিংবা এর কাছাকাছি সময়ে কম্পিউটার সায়েন্সে নারীদের অবস্থান খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য বর্তমানের তুলনায়। কিন্তু সেটা একেবারেই সত্য নয়।
১৯৮০ সালের প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত এএমসি’র টিভি সিরিজ ‘হল্ট অ্যান্ড ক্যাচ ফায়ার’ এর গল্পটা এগিয়েছে দুই বন্ধু ক্যামেরন এবং ডোনার ‘মিউটিনি’ নামের একটি কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে। পরিচিত নারী কোডার-এর কোনো মুখোচ্ছবি মনে করার চেষ্টা করলে এই দুই চরিত্রের কথাই মনে পড়বে, তবে বাস্তব কোন ব্যক্তিত্বকে খুঁজে পাওয়া কষ্টকর।
এর মধ্যে ডোনা চরিত্রে অভিনয় করা কেরি বিশে জানালেন ৮০ এর দশকে নারীদের অবস্থা, “বর্তমানের তুলনায় সেসময়েই বরং অনেক নারী কম্পিউটার টেকনলজির উপর ডিগ্রি নিয়েছেন, যেটা আসলেই অবাক করে দেয়।”
বাস্তবেই যে কম্পিউটারবিষয়ক জ্ঞান চর্চায় নারীদের আগ্রহ কমে গিয়েছে, সেটি বের করে এনেছে একটি জাতীয় বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে ৩০ বছর আগেও কম্পিউটার সায়েন্স পাঠে আগ্রহ ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ নারীর, সেটা এক লাফে এখন কমে এসে দাঁড়িয়েছে ১৮ শতাংশে।
কম্পিউটার সায়েন্সে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়লেও কমছে নারীদের কম্পিউটারে সায়েন্সে ক্যারিয়ার গড়ার সংখ্যা, এমনটাই জানান উচ্চশিক্ষা এবং প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণায় নিযুক্ত লেখিকা জেনিফার কোবেলে।
কম্পিউটার কোডিং অনেকের কাছেই দুর্বোধ্য এবং বিরক্তিকর মনে হতে পারে। ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, পুরুষরা কম্পিউটারকে দেখেন একটি খেলনা হিসেবে- যেখানে নারীদের চোখে এটি শুধুই একটি ‘যন্ত্র’। আরও জানা গেছে, ১৯৮০ এর পর থেকেই কম্পিউটার ব্যবহার করে গণ বিপণন-এ অংশগ্রহণের ব্যাপারে আকর্ষণ বৃদ্ধি করা হয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষদেরই।
এ ছাড়াও নিয়মতান্ত্রিক পুরুষশাসিত গবেষণাগার পরিবেশে নারীকে একজন বহিরাগত হিসেবেই মনে করা হয়। কিছু সময়ে তাদের মুখোমুখি হতে হয় ভয়ঙ্কর প্রতিকূল পরিবেশের।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণা মতে, বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলিবিদ্যার চেয়ে প্রযুক্তিবিষয়ক জায়গা থেকে নারীদের প্রস্থানের সংখ্যা বেশি। এবং প্রায় ৫৬ শতাংশ নারী এরকম প্রতিষ্ঠান থেকে নিজের ক্যারিয়ারের মাঝামাঝি অবস্থায় চলে যান।
কম্পিউটার সায়েন্সে নারীদের অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধির জন্য এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, জানালেন কোবেলে। ‘বিটস অ্যান্ড বাইটস’ প্রোগ্রামটির মাধ্যমে মাধ্যমিক স্কুলের বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে নিয়ে আসা হয় ইউনিভার্সিটি অফ বাল্টিমোরে, কম্পিউটার সায়েন্সে তাদের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলার জন্য। এ ছাড়াও মেয়েদের জন্য গণিত এবং বিজ্ঞানলে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বিশেষ ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে বিভিন্ন স্কুল এবং কলেজ।
এমনকি মেয়েদের জন্য নির্মিত খেলনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোতেও বাজারজাতকরণ করা হয়েছে কম্পিউটার সায়েন্স। ‘গোল্ডিবক্স’ এবং এমসিটু’ এমনই কিছু খেলনার উদাহরণ।
আশার জায়গাটা এখানেই, ‘হল্ট অ্যান্ড ক্যাচ ফায়ার’ এর মত নারী কোডার চরিত্রগুলো একসময় বাস্তবে রূপ লাভ করবে কম্পিউটার সায়েন্সে নারীদের প্রতিনিধিত্ব রূপে।- বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম