DailySangram-Logo

ফুটবল

নারী ফুটবলারদের বিদ্রোহের অবসান ছুটি কাটিয়ে অনুশীলনে ফিরবে

অবশেষে জটিলতা কেটে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। প্রধান কোচ পিটার জেমস বাটলারের বিরুদ্ধে চলমান বিদ্রোহ থেকে সরে এসেছেন সাবিনা খাতুনসহ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের ১৮ ফুটবলার।

Printed Edition

অবশেষে জটিলতা কেটে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। প্রধান কোচ পিটার জেমস বাটলারের বিরুদ্ধে চলমান বিদ্রোহ থেকে সরে এসেছেন সাবিনা খাতুনসহ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের ১৮ ফুটবলার। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের সঙ্গে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাবিনারা। রোববার বাফুফে ভবনে বিদ্রোহী মেয়েদের সঙ্গে সভা করেছেন কিরণ। সেখানেই বিদ্রোহের অবসান হয়েছে বলে বাফুফের এই প্রভাবশালী সদস্য জানিয়েছেন। তবে সাবিনাসহ অন্যরা এখনই বাটলারের অধীনে অনুশীলনে ফিরছেন না। আপাতত ছুটিতে যাবেন সবাই। তারপর ফিরে এসে নতুন করে অনুশীলনে যোগ দেবেন।

সাবিনাদের সঙ্গে সভা শেষে কিরণ বলেছেন, ‘আমাদের চেষ্টা অব্যাহত ছিল তাদের ফিরিয়ে আনার। তারই ধারাবাহিকতায় বসেছিলাম। বসার পর বলতে পারি মেয়েরা অনুশীলনে ফিরছে। তবে এখনই ফিরবে না। ২৪ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্প বন্ধ হয়ে যাবে। সবার জন্য বন্ধ হবে ক্যাম্প। সিনিয়র ফুটবলাররা ব্রেক চাইছে। ওদের জন্য ব্রেক হবে। ’বিরতি থেকে ফিরে এসে সাবিনারা অনুশীলনসহ কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আসবেন বলে কিরণ জানিয়েছেন। তার ভাষায়, ‘যেহেতু একসঙ্গে সবাই অনুশীলন করবে, মাঠে কারও প্রতি অসন্তোষ থাকলে ভালো কিছু হবে না। তাই আমরা একসঙ্গে বসে নিরসনের চেষ্টা করবো। মেয়েরা এদিন আমাকে বলেছে ফিরে এসে চুক্তি করবে। অনুশীলনে ফিরবে। আমাদের জন্য এটা ইতিবাচক। যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল সেগুলো থেকে তারা সরে এসেছে।’

বৃটিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনেই অনুশীলনে ফেরার আগে ত্রিপক্ষীয় সভার কথা বললেন নারী উইংয়ের প্রধান, ‘যেহেতু একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে তাই পুনরায় ক্যাম্প শুরু হওয়ার পর কোচ, ফেডারেশনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং খেলোয়াড়রা বসা হবে।’ খেলোয়াড়রা যেমন এই কোচের অধীনের অনুশীলন করতে চাননি। তেমনি কোচও কয়েকজন খেলোয়াড়কে দলে রাখতে চাননি।খেলোয়াড়রা খানিকটা নমনীয় হলেও কোচের অবস্থান এখনো নিশ্চিত নন বাফুফের এই কর্মকর্তা, ‘মেয়েদের সাথে আজ (রোববার) আমার কথা হয়েছে সেটা বললাম। কোচের সাথে আজ (রোববার) কথা হয়নি।’

এদিকে ঝামেলা মিটে গেলেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে বাটলার যে নতুন একটি দল নিয়ে যাচ্ছেন, সেটি নতুন করে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

প্রসঙ্গত, বাটলার কা-ে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্থায়ী ছিল ১৮ নারী ফুটবলারের এই বিদ্রোহ। গত ৩০ জানুয়ারি বাফুফে ভবনের সামনে সংবাদমাধ্যমের কাছে কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে তিন পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগ তুলে ধরেন সাবিনারা। বাটলারকে কোচ রেখে দেওয়া হলে অনুশীলনে যোগ দেবেন না, এবং সবাই একযোগে অবসরের হুমকি দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমরুল হাসানকে চেয়ারম্যান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বাফুফে। সেই কমিটি তদন্ত শেষে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর কয়েক দফা বাফুফে সভাপতিও এই বিদ্রোহী ফুটবলারের অনুশীলনে ফেরার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

দ্বন্দ্বের দায় চাপালেন বাফুফের জরুরি কমিটির উপর

সাবিনাদের ও বাটলার দ্বন্দ্ব পুরনো বিষয় ছিল। এই দ্বন্দ্ব সমাধান না করেই বাফুফে কেন কোচ নিয়োগ করল সেটা বড় প্রশ্ন ছিল। এতে নারী উইংয়ের দায় ফুটবলাঙ্গন দেখছে প্রকটভাবে। মাহফুজা আক্তার কিরণ সেই দায় বাফুফের জরুরি কমিটির উপর চাপালেন, ‘নারী উইং নিয়ে ভুল তথ্য যাচ্ছে সেটা পরিষ্কার করে বলতে চাই। নারী উইং খেলোয়াড়দের সঙ্গে এককভাবে ও একসঙ্গে বসেছিল। নারী উইং থেকে এই কোচকে না রাখার সুপারিশ করা হয়েছিল। কোচ নিয়োগ হয়েছে জরুরি কমিটির সভায়। যেখানে সভাপতি ও সহ-সভাপতিরা (সিনিয়র সহ-সভাপতিও আছেন) রয়েছেন।’

এদিকে নারী ফুটবলাররা এব্যাপারে কোনো বিবৃতি বা বক্তব্য দেননি। ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল একুশে পদক গ্রহণ করবে। প্রধান উপদেষ্টা ও ক্রীড়া উপদেষ্টার ঐ পুরস্কার প্রদান অনুষ্টানে উপস্থিত থাকার কথা। একুশে পদক গ্রহণের পরই সাবিনারা এই সংকট নিয়ে আনুষ্টানিক অবস্থান ব্যক্ত করবেন।

বিদ্রোহীদের ফেরার খবরে যা বললেন কোচ বাটলার

দুই সপ্তাহের বেশি সময় পর কোচের সঙ্গে বিদ্রোহ করা ১৮ নারী ফুটবলার অনুশীলনে ফিরছে এমন সিদ্ধান্তের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কোচ পিটার বাটলার বলেছেন, এসব নিয়ে তিনিও আর ঝামেলা চান না। রোববার বিকেলে বাফুফে ভবন থেকে বেরিয়ে আসার পথে ১৮ ফুটবলারের ফেরা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কোচ বলেছেন, ‘দেখুন তারা ফিরলে ভালো। আমি এসব নিয়ে আর কোনো ঝামেলা চাই না।’

২৬ ফেব্রুয়ারি আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রথম প্রীতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ নারী দল। ২ মার্চ একই দলের সঙ্গে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচ। এই দুই ম্যাচ সামনে রেখে কয়েক দিনের মধ্যেই স্কোয়াড ঘোষণা করবেন পিটার বাটলার।তার আগে মেয়েদের ফিরে আসার খবরটা যে তিনি ভালোভাবে নিতে পারেননি, ইংলিশ কোচের কথায়ও তা অনেকটা স্পষ্ট। অবশ্য জানা গেছে, অনুশীলনের মধ্যে ছিলেন না বলে আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচে বিদ্রোহীদের বিবেচনা করা হবে না।

বিদ্রোহীদের ফেরা নিয়ে তেমন আপত্তি না তুললেও কিছুটা হতাশাই প্রকাশ করেছেন বাটলার, ‘একটা বিষয় বলতেই হয়, তারা কি ফিরে আসার মতো কাজ করেছিল! এই দলে এমন কয়েকজন আছে, যারা শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। আমি মনে করি, এই দিকগুলো আপনাদেরও মনে রাখা উচিত।’ এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি তদন্তের মধ্যেই বাটলার বলেছিলেন, ‘হয় ওরা, নয় আমি থাকব।’ তাঁর এই বিস্ফোরক মন্তব্যের পর কোচ–খেলোয়াড় দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়ে ওঠে। রোববার অবশ্য বাফুফের সঙ্গে বাটলারের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। এ বিষয়ে কিরণের মন্তব্য, ‘মেয়েদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কোচের সঙ্গে কথা হয়নি।’

বিদ্রোহের সময় ১৮ ফুটবলার যেমন বাটলারের অধীনে অনুশীলন করতে রাজি ছিলেন না, কোচও তাঁদের বেশ কয়েকজনকে দলে রাখতে চাননি। এখন বিদ্রোহীরা ফিরলেও বাটলার দলে তাঁদের কীভাবে স্বাগত জানান, সেটাই দেখার অপেক্ষা।