DailySangram-Logo-en-H90

ক্রিকেট

বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড

Sports-- Rachin

মো: রফিকুল ইসলাম: বাংলাদেশকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে নিউজিল্যান্ড। গতকাল নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারায় দলটি। ফলে টানা দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে এক ম্যাচ আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ড। আর টানা দুই ম্যাচে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালের আগেই বিদায় নিশ্চিত হয় টাইগারদের। নিউজিল্যান্ডের এই জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ‘বি’ গ্রুপ থেকে ভারত আর নিউজিল্যান্ডের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায় বিদায় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ আর স্বাগতিক পাকিস্তানের। তবে ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে শান্তনার জয়ের জন্য মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-স্বাগতিক পাকিস্তান।

গতকাল আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে বাংলাদেশ করতে পারে মাত্র ২৩৬ রান। ফলে জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ড পায় ২৩৭ রানের সহজ টার্গেট। ব্যট করতে নেমে নিউজিল্যান্ডের শুরুটা ভালো না হলেও রাচিন রবীন্দ্রের সেঞ্চুরিতে ৪৬,১ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৪০ রান করে দলটি জয় পায় ৫ উইকেটে। দলের পক্ষে রাচিন সেঞ্চুরিসহ ১১২ রান করে দলকে ৫ উইকেটের বড় জয় এনে দেল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ভারতের কাছে বড় ব্যবধানে হার দিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সেমিফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকতে গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিলনা টাইগারদের। তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে টিকে থাকতে পারেনি টাইগাররা। জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের সামনে ২৩৭ রানের টার্গেটটা সহজই ছিল। তবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি নিউজিল্যান্ডও। দলটির রানের খাতা খোলার আগেই বাংলাদেশ উইকেটের দেখা পায়। প্রথম ওভারেই তাসকিনের সফল আঘাতে উইকেট হারায় দলটি। প্রথম পাঁচ বল ডট দেন ওপেনার উইল ইয়ং। কিন্তু শেষ বলটি সরাসরি আঘাত করে উইকেটে। ফলে শূন্য রানে ফেরেন ইয়ং। দলীয় ১৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। এবার সফল আঘাত নাহিদ রার্না। রানার গতির বলে পরাস্ত হয়ে উইকেট ছাড়েন কেন উইলিয়ামসন। জায়গায় দাঁড়িয়ে বল ড্রাইভ করার চেস্টা করছিলেন। কিন্তু বল ব্যাটের কানায় লেগে যায় উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে। ৪ বলে ৫ রান করেন উইলিয়ামসন। ১৫ রানে ২ উইকেট হারানোর পর রাচিন রবীন্দ্রকে নিয়ে ফিফটির জুটি গড়েন কনওয়ে। ধাক্কা সামলে পালটা আক্রমণে রানের চাকা সচল রাখে এই জুটি। অবশেষে মোস্তাফিজ জুটি ভেঙে স্বস্তি এনে দেন বাংলাদেশকে। দলীয় ৭২ রানে মোস্তাফিজের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন কনওয়ে। ৩০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ৭২ রানে তিন উইকেট হারানো দলকে এগিয়ে নিতে দায়িত্ব পড়ে রাচিন-লাথাম জুটির উপর। এই জুটির উপর ভর করেই জয়ের পথে এগিয়ে যায় দলটি। তাসকিনকে চার মেরে ফিফটির দেখা পান রাচিন। ৬টি চারের মারে সাজানো ছিল ইনিংসটি। কারন এই জুটি ভাংগার আগে দলটি পৌছে যায় ২০৮ রানে। সেঞ্চুরিয়ার রাচিনের বিদায়ে ভাংগে এই জুটি। অবশ্য নব্বইয়ের ঘরে রানার হাতে জীবন পেয়েছিলেন রাচিন। নিচুতে আসা ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি মিরাজ। এরপর ৯৫ বলে দেখা পান শতকের। ইনিংসটি সাজানো ছিল ১১টি চার ও ১টি ছয়ে। সেঞ্চুরির পর অবশ্য বেশিদূর এগোতে পারেননি। রিশাদের ঘূর্ণিতে ধরা পড়েন ইমনের হাতে। ১০৫ বলে ১১২ রান করেন তিনি। রাচিনের আউটের পর ফিফটির দেখা পান লাথাম। ফিফটি করে বেশি সময় টিকে থাকতে পারেননি তিনি। দলীয় ২১৪ রানে রান আউটের ফাঁদে পড়ে ৫৫ রানে বিদায় নেন এই ব্যাটর। তবে ফিলিপস ২১ রানে আর ব্রেসওয়েল ১১ রানে অপরাজিত থেকে ২৩ বল আগে দলকে জয়ী করেই মাঠ ছাড়েন। বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন, মোস্তাফিজ, নাহিদ রান আর রিশাদ হোনের নেন একটি করে উইকেট। ব্যাটে-বলে সমান পারফরমেন্স করে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হন মাইকেল ব্রেসওয়েল।

এরআগে, গতকাল টস হেরে আগে ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৩৭ রান করে নিউজিল্যান্ডকে ২৩৭ রানের টার্গেট দেয় টাইগাররা। আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা কিন্তু খারাপ ছিলনা বাংলাদেশের। দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও শান্ত মিলে তোলেন ৪৫ রান। ২৪ বলে ২৪ রান করে কিউই পেসার মিচেল ব্রেসওয়েলের বলে কেন উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে তানজিদ বিদায় নিলে প্রথম ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। এরপর তিনে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ ১৪ বলে ১৩ রান করে বিদায় নিলে বিপদ আরো বাড়ে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান তাওহিদ হৃদয়ও পারেননি বিপদে হাল ধরতে। ২৪ বল খেলে ৭ রান করতে পারেন হৃদয়। ব্রেসওয়েলের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেছেন তিনি। দুটি ক্যাচই ধরেছেন কেন উইলিয়ামসন। উইকেট পতনের মিছিল সেখানেই থামেনি। রানের গতিও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেন। দলীয় ১০৪ রানে বিপদ বাড়িয়ে ২৩তম ওভারে ব্রেসওয়েলের বলে স্লগ-সুইপ খেলতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন মুশফিকুর রহিম। ফিরেন মাত্র ২ রান করে। ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যেও অনেকটা সময় হাল ধরে ছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ২৪তম ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন শান্ত। এজন্য তাকে খেলতে হয়েছে ৭১ বল। ২৭তম ওভারে আসে আরও এক বড় ধাক্কা। এবার ব্রেসওয়েলের অফসাইডের বাইরের বল ডাউন দ্য ট্র্যাকে তুলে মারতে চেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু বল তার ব্যাট ছুঁয়ে শর্ট থার্ডম্যানে থাকা উইলিয়াম ও'রর্কের হাতে জমা হয়। ফলে দলীয় ১১৮ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। একদিনে উইকেট পতনের মিছিল, আরেকদিকে টিকে ছিলেন শান্ত। কিন্তু তিনিও হার মানেন ৩৮তম ওভারে। ও'রর্কের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ১১০ বলে ৭৭ রান করেন শান্ত। এরপর জাকের আলী ও রিশাদ হোসেন মিলে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। তবে ২৫ বলে ২৬ রান করে রিশাদ বিদায় নিলে ভাঙে প্রতিরোধ। অন্যপ্রান্তে জাকের ধরে খেলেন। শেষদিকে ফিফটি করেছেন জাকের আলী। দলকে ২৩১ রানে রেখে রান আউট হয়ে ফেরার আগে ৫৫ বলে ৪৫ রান করেন তিনি। শেষ ওভারে তাসকিনের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বল হাতে ৪ উইকেট পেয়েছেন ব্রেসওয়েল। ১০ ওভারে খরচ করেছেন মাত্র ২৬ রান। এটি ওয়ানডেতে তার সেরা বোলিং ফিগার এছাড়া ও'রর্কে ২টি এবং ম্যাট হেনরি ও কাইল জেমিসন ১টি করে উইকেট নিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশে দুটি পরিবর্তন এনে মাঠে নামে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার ও তানজিম সাকিবের জায়গায় এসেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও নাহিদ রানা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ--২৩৬/৯ (৫০ ওভার)

নিউজিল্যান্ড---২৪০/৫ (৪৬.১ ওভার)

নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী।