ক্রিকেট
পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর্দা উঠছে আজ
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নবম আসরের পর্দা উঠছে আজ। হাইব্রিড মডেলের অনুষ্ঠিত হবে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এবার মূল আয়োজক পাকিস্তান। তবে ভারতীয় দল সরকারের কাছ থেকে পাকিস্তান সফরে অনুমতি না পাওয়ায় টিম ইন্ডিয়া তাদের ম্যাচগুলো খেলবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে।
Printed Edition
মো: রফিকুল ইসলাম : চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নবম আসরের পর্দা উঠছে আজ। হাইব্রিড মডেলের অনুষ্ঠিত হবে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এবার মূল আয়োজক পাকিস্তান। তবে ভারতীয় দল সরকারের কাছ থেকে পাকিস্তান সফরে অনুমতি না পাওয়ায় টিম ইন্ডিয়া তাদের ম্যাচগুলো খেলবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে। আর ভারত টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল খেললেও ম্যাচগুলো পাকিস্তান থেকে সরে আসবে। পাকিস্তানের তিনটি ভেন্যু করাচি, রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোর পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে হবে কিছু ম্যাচ। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টে ১৫টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ৯ মার্চ হবে ফাইনাল। সব ম্যাচই দিবা-রাত্রির। বাংলাদেশ সময় ম্যাচ শুরু হবে দুপুর ৩টা থেকে। উদ্বোধনী ম্যাচে আজ বুধবার নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে স্বাগতিক পাকিস্তান। এই ম্যাচ দিয়েই মাঠে গড়াবে ময়দানের লড়াই। এবারের টুর্নামেন্টে অংশ নিবে ৮টি দল। দলগুলো হলো-স্বাগতিক পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। আট দল দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মাঠে নামবে। পাকিস্তানসহ ‘এ’ গ্রুপে রয়েছে বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড ও ভারত। আর ‘বি’ গ্রুপের চার দল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তান। দুই গ্রুপ থেকে দুটি করে দল খেলবে সেমিফাইনালে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্বাগতিক হওয়ায় মাঠে নামার আগেই নিজেদের উচ্ছ্বাসে ভাসাচ্ছে পাকিস্তান। আলোয় সাজানো হয়েছে লাহোর ফোর্টকে। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অবশ্য আয়োজন হয়নি এই ইভেন্ট। শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ের প্রস্তুতিটা তাই ভালোভাবেই শুরু করছে তারা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গত আসরে ভারতকে ১৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছিল পাকিস্তান। সেই চ্যাম্পিয়ন হওয়া যারা দলের সদস্য ছিলেন তারাই এবার পালন করবেন গুরুদায়িত্ব। আলো ঝলমলে সেই লাহেরা ফোর্টে হওয়া অনুষ্ঠানে এসেছেন পিসিবি সভাপতিও। ক্রিকেটপ্রেমীদের জানিয়েছেন প্রত্যাশার কথাও। ১৯৯৬ সালের পর পাকিস্তানে আবার বসছে আইসিসি ইভেন্ট। ২৯ বছর পর ঘরের মাঠে পাকিস্তান খেলবে আইসিসির শীর্ষ প্রতিযোগিতা। আয়োজক হিসেবে পাকিস্তানের জন্য এই প্রতিযোগিতা অনেক বড় পরীক্ষা। নিরাপত্তা কারণে একটা সময়ে পাকিস্তান সফর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল সবদেশ। বিশেষ করে শ্রীলংকা ক্রিকেট দলের ওপর হামলার পর সব ধরনের আন্তর্জাতিক সিরিজ লম্বা সময়ের জন্য পাকিস্তানে বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে সেই অচলায়তন ভেঙে পাকিস্তান আবারও বিশ্বাস স্থাপন করা শুরু করে। কিন্তু বড় কোনো ইভেন্ট আয়োজন করতে পারছিল না। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপ আয়োজন করেছিল তারা। তাতে কিছুটা মুখরক্ষা হয়। এবার সাত দলকে আতিথেয়তা দিয়ে তাদেরকে দিতে হবে রুদ্ধশ্বাস পরীক্ষা। প্রথমত, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। এরপর মাঠের ক্রিকেট, আয়োজক হিসেবে ব্যতিক্রমী ও উদ্ভাবনী ভাবনা, দর্শকদের প্রত্যাশাসহ আরো কতো কিছু। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান মোহসীন নাকভী সেসব দিকে নিজের বাড়তি নজর রেখেছেন বলেই মনে হচ্ছে। তিনি বলেন,‘আয়োজক হিসেবে পাকিস্তান কতোটা গোছানো, কতটো উচুঁ পর্যায়ে আমরা সেটাই বিশ্বকে দেখাব। প্রথমবারের মতো আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পাকিস্তানে ফেরত এসেছে ২৯ বছর পরে। এই আসর ক্রিকেটে থেকেও বেশি কিছু। পাকিস্তানের আতিথেয়তা ও ক্রিকেটের প্রতি প্রেম দেখানোর এটাই সুযোগ।’ ১৯৯৬ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর আয়োজক হিসেবে পাকিস্তান সাতটি বিশ্বকাপ, নয়টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ,আটটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও তিনটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নসশিপের (ফাইনাল) আসরের ম্যাচ মিস করে। ২৯ বছরের অপেক্ষার পর নতুন পথচলা শুরু করতে যাচ্ছে এশিয়ার অন্যতম সফল ক্রিকেট দলটি। মাঠের ক্রিকেটের সৌন্দর্যের জন্য আয়োজক হিসেবে কতটা ভালো করে সেটাই দেখার বিষয়। প্রায় আট বছরের বিরতির পর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নবম আসর শুরু হচ্ছে আজ থেকে। মাঝে ২০২১ সালে মহামারি করোনার কারণে একটি আসর বাতিল করা হয়।
১৯৯৮ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। টুর্নামেন্ট শুরুর ৬ মাস আগে র্যাঙ্কিংয়ের প্রথম আটটি দল এতে অংশ নেওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতো। তবে এবারের আসরের আটটি দল টিকিট নিশ্চিত করে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। ১০ দলের পয়েন্ট টেবিলে সেরা আটে (আয়োজক দেশসহ) থাকা দলগুলো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য নির্বাচিত হয়। যেখানে জায়গা হয়নি সাবেক দুই চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকাও ওয়েস্ট ইন্ডিজের। শ্রীলংকা ও ক্যারিবীয়দের মতো দল এবারের আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে না পারলেও, ২০২৩ বিশ্বকাপে স্মরণীয় পারফর্ম দেখানো আফগানিস্তান টুর্নামেন্টটিতে জায়গা করে নিয়েছে প্রথমবারের মতো। ওয়ানডে বিশ্বকাপে আফগানরা ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার মতো পরাশক্তিদের হারিয়েছিল। যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাদের অভিষেক আসরের দরজা খুলে দিয়েছে। দুটি ফরম্যাটের সর্বশেষ দুই বিশ্বকাপেই (ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি) দুর্দান্ত পারফর্ম করা আফগানদের জন্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি না খেললেই বরং বিস্ময়ের হতো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবার উঠেছিল সেমিতে। এবার চারটি করে দল নিয়ে দুটি গ্রুপে ম্যাচ হবে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে। গ্রুপপর্বে তিনটি করে ম্যাচ খেলবে প্রতিটি দল। এরপর পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুটি দল সেমিফাইনালে উঠবে। সর্বশেষ দুই সেমির লড়াইয়ে বিজয়ী দুই দল উঠবে ফাইনালে। আগামী ৯ মার্চ হবে ফাইনাল ম্যাচ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগের আসরের চেয়ে এবার মোট প্রাইজমানি বাড়ানো হয়েছে ৫৩ শতাংশ। সবমিলিয়ে প্রতিযোগী ৮টি দেশের জন্য আর্থিক পুরস্কার থাকছে ৬.৯ মিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৪ কোটি টাকা। যেখানে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলের জন্য বরাদ্দ ২২ লাখ ৪০ হাজার ডলার বা প্রায় ২৭ কোটি ৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। রানার্সআপ দল পাবে চ্যাম্পিয়ন দলের অর্ধেক অর্থ। অর্থাৎ, তারা পাবে ১১ লাখ ২০ হাজার ডলার বা প্রায় ১৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। বৈশ্বিক এই আসরের ম্যাচগুলো সরাসরি সম্প্রচার টিভিতে দেখা যাবে ১২টি দেশ ও অঞ্চল থেকে। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো কোনো আইসিসি ইভেন্ট ডিজিটাল প্লাটফর্মে সম্প্রচারিত হতে যাচ্ছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে মোট ১৬টি ফিডে ৯টি ভাষায় খেলা উপভোগ করতে পারবেন দর্শকরা। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, হারিয়ানাভি, ভোজপুরি, তামিল, তেলেগু এবং কন্নড় ভাষায় ধারাভাষ্য শুনতে পাবেন সমর্থকরা।