ক্রিকেট
বরিশালই চ্যাম্পিয়ন
Printed Edition
মো: রফিকুল ইসলাম : বিপিএলে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জয় করেছে ফরচুন বরিশাল। গতকাল ফাইনালে চিটাগং কিংসে ৩ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখে দলটি। প্রাণপন চেষ্টা করেও প্রথমবারের মতো শিরোপা জয় করতে পারেনি চিটাগং। আগে ব্যাট করে চিটাগং কিংস ৩ উইকেটে ১৯৪ রান করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত শিরোপা জয় করেই মাঠ ছাড়ে বরিশাল। ১৯৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বরিশাল ৩ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে ১৯৫ রান করে ম্যাচ জিতে ৩ উইকেটে। এবারের বিপিএলে পুরো টুর্নামেন্টে ধারাবাহিক পারফরমেন্স করেছে তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন ফরচুন বরিশাল। গতকাল ফাইনালে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়ের দৌড়ে ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নামে দলটি। দ্বিতীয়বার ফাইনালে খেলতে আসা চিটাগং কিংসকে শেষ পর্যন্ত হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখে বরিশাল। ফলে ঢাকা ও কুমিল্লার পর তৃতীয় সর্বোচ্চ দু’বার বিএিল ট্রফি জয়ের নজির গড়ে বরিশাল। কুমিল্লা চারবার ও ঢাকা তিনবার শিরোপা জিতেছে। রংপুর, রাজশাহী একবার করে বিপিএল ট্রফি জিতেছে। ২০১৩ সালে ফাইনালে উঠলেও ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের কাছে হেরে যায় চিটাগং কিংস। সবশেষ ২০১৩ সালে ফাইনাল খেলেছিল চিটাগং। ১২ বছর পর তারা আবার ফাইনাল খেলতে এসেও শিরোপা জয় করতে পারেনি।
গতকাল ফাইনালে জয়ের জন্য ফরচুন বরিশালের সামনে টার্গেট ছিল ১৯৫ রান। শিরোপা জয়ের ম্যাচে টার্গেটটা চ্যালেঞ্জিংই ছিল বরিশালের জন্য। তবে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতেই দারূণ শুরু করে তামিম ইকবাল-তাওহিদ হৃদয় জুটি। এই জুটির উপর নির্ভর করে কোন উইকেট না হারিয়ে পাওয়ার প্লে’তেই বরিশাল তুলে নেয় ৫৭ রান। অবশ্য চিটাগং কিংসও টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লে’তে বিনা উইকেটে ৫৭ রান তুলেছিল। প্রথম ৭ ওভারে ৭০ রান তুলে ফরচুন বরিশাল। ২৪ বলে ঝড়ে গতিতে ফিফটি পূরণ করেছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তবে ইনিংসের নবম ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেন শরিফুল ইসলাম। দলীয় ৭৬ রানে তামিমের বিদায়ে প্রথম উইকেট হারায় বরিশাল। শরিফুলের বলে খালেদ আহমেদকে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ২৯ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন অধিনায়ক তামিম। যার মধ্যে ছিল ৯টি চার আর একটি ছক্কার মার। দলীয় ৭৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বরিশাল। এবার শরিফুলের বলে এলবি আউট হয়ে মাত্র ১ রানে ফিরেন ডেভিড মালান। প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৯৫ রান করে বরিশাল। দলীয় ৯৬ রানে আরো একটি উইকেট হারায় বরিশাল। এবার নাঈম ইসলামে বলে আরাফাত সানিকে ক্যাচ দিয়ে ৩২ রানে মাঠ ছাড়েন তাওহীদ হৃদয়। তার ৩২ রানের ইনিংসটি ছিল ২৮ বলে তিন চারে গড়া। তাওহীদের বিদায়ে দলের হাল ধরেন কাইল মায়ার্স আর মুশফিকুর রহিম। এই জুটি ভাংগার আগে দলটি পৌঁছে যায় ১৩২ রানে। মুশফিকের বিদায়ে ভাংগে এই জুটি। নাঈম ইসলামের বলে আউট হওয়ার আগে মুশফিক করেন ৯ বলে ১৬ রান। দ্রুতই তামিম, মালান, হৃদয় ও মুশফিকের মতো ব্যাটারকে হারিয়ে চাপে পড়ে দলটি। সেই চাপ সামলাতে অভিজ্ঞ কাইল মায়ার্স ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জুটি গড়েন। এই জুটির উপর ভর করে ১৫ ওভারে ৪ উইকেটে ১৫১ রান পায় দলটি। এই জুটিতে দলটি পৌঁছে যায় ১৭২ রানে। মায়ার্স এর বিদায়ে ভাংগে এই জুটি। শরিফুলের বলে আউট হওয়ার আগে মায়ার্স ২৮ বলে করেন ৪৬ রান। যার মধ্যে ছিল তিন করে চার আর ছক্কার মার। দলীয় ১৭৩ রানে আরো একটি উইকেট হারায় বরিশাল। এবারও শরিফুলের আঘাত। এবার তিনি বিদায় করে ৭ রান করা মাহমুদউল্লাহকে। ফলে ১৭৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দারূণ চাপে পড়ে বরিশাল। তবে দলকে এগিয়ে নিতে জুটি গড়েন মোহাম্মদ নবি আর রিশাদ হোসেন। শেষ পর্যন্ত তিন বল বাকি থাকতে ১৯৫ রান করে ম্যাচ জিতে বরিশাল। রিশাদ ৬ বলে দুটি ছক্কা মেরে ১৮ রান করে দলকে জয় এনে দেন। চিটাগং এর পক্ষে শরিফুল ইসলাম একাই নেন চার উইকেট। নাঈম ইসলাম নেন দুটি উইকেট। ফারনান্ডো এনন একটি উইকেট।
এরআগে, ফাইনাল ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান করে চিটাগং কিংস। ব্যাট করতে নামা চিটাগং করে উড়ন্ত সূচনা। উদ্বোধনী জুটি বেধে ছুটতে থাকেন পারভেজ হোসেন ইমন ও খাজা নাফে। বরিশালের বিপক্ষে খাজা নাফি ও পারভেজ হোসেনের উদ্বোধনী জুটি চমকে দিয়েছে সবাইকে। তারা গড়েছেন ১২১ রানের পার্টনারশিপ। যা বিপিএলের ফাইনালে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ। এর আগে বিপিএলের কোনো ফাইনালে শতরানের উদ্বোধনী জুটি ছিল না। ২০২৩ সালে বরিশালের হয়ে তামিম ইকবাল ও মেহেদি হাসান মিরাজ ৭৬ রানের জুটি গড়েছিলেন। এতদিন এটাই ছিল সর্বোচ্চ জুটি। ব্যাট করতে নেমে ৩০ বলে ফিফটির দেখা পান ইমন। আর নাফের ফিফটি করতে লাগে ৩৭ বল। বরিশালের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণ কোনোভাবেই ভাঙতে পারছিল না চিটাগংয়ে ওপেনিং জুটি। অবশেষে ১৩তম ওভারে এসে খাজা নাফাকে মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান এবাদত হোসেন। ৭৬ বলে ১২১ রানের এই দারুণ জুটি ভাঙেন এবাদত হোসেন। ৪৪ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন নাফে। পরে গ্রাহাম ক্লার্কও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন। তিনজনের ব্যাটে বিপিএল ফাইনালে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ৩ উইকেটে ১৯৪ রান করেছে চিটাগং কিংস। তিনে নেমে ইমনকে সঙ্গ দেন গ্রাহাম ক্লার্ক। লড়াই করতে থাকে তিনিও। গড়েন ৪০ বলে ৭০ রানের জুটি। পরে পায়ে আঘাত পেয়ে বেশ কিছুক্ষণ খুঁড়িয়ে ব্যাটিং করছিলেন ক্লার্ক। শেষমেষে শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে দুই রান নিতে গিয়ে রান আউটে কাটা পড়েন ২৩ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলে। পরের বলেই লম্বা শট খেলতে গিয়ে ২ রানে আউট হন শামীম হোসেন। তবে ব্যাটিংয়ে থেকে যান ইমন। ৪৯ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। বরিশালের বোলারদের মধ্যে একটি করে উইকেট নেন এবাদত ও মোহাম্মদ আলী। পাকিস্তানি এই পেসার চার ওভার বোলিং করে সবচেয়ে কিপ্টে বোলার। প্রথম তিন ওভারে ১৬ রান খরচ করা আলী শেষ ওভারে খরচ করেন মাত্র ৬ রান। তার শেষ ওভারে বোলিংয়ে দুইশ ছুঁতে পারেনি চিটাগং।
চট্টগ্রামের একাদশ : মোহাম্মদ মিঠুন (অধিনায়ক), পারভেজ হোসেন ইমন, খাজা নাফি, হোসাইন তালাত, শামীম হোসেন, গ্রাহাম ক্লার্ক, বিনুরা ফার্নান্দো, আরাফাত সানী, শরীফুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ ও নাঈম ইসলাম।
বরিশালের একাদশ : তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, ডেভিড মালান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, কাইল মায়ার্স, মোহাম্মদ নবী, রিশাদ হোসেন, এবাদত হোসেন, তানভীর ইসলাম ও মোহাম্মদ আলী।