DailySangram-Logo

ক্রিকেট

তামিম ইকবালকে বিদায়ী সংবর্ধনা

বিপিএলের মাঝপথে ১০ জানুয়ারী হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন দেশ সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল।

Printed Edition

স্পোর্টস রিপোর্টার : বিপিএলের মাঝপথে ১০ জানুয়ারী হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন দেশ সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। অবশ্য এটা ছিল তামিমের দ্বিতীয়বারের মতো অবসর নেয়া। এর আগে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিশ্বকাপ দল ঘোষণার আগে আচমকাই অবসর নিয়েছিলেন তামিম। পরে অবশ্য সেই অবসর প্রত্যাহার করে নেন তিনি। কিন্তু এবার তামিমের অবসর ঘোষণার পরেই তাকে মাঠ থেকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি। তখন থেকেই দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের কিংবদন্তি তামিমের জন্য বিদায়ী মঞ্চ প্রস্তুত করে রেখেছিল ক্রিকেট বোর্ড। বাকি ছিল শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা। অবশেষে সেই সঠিক সময়েই তামিমকে বিদায় দিতে পেরেছে বিসিবি। অবশ্য বিপিএল ফাইনালের আগের দিনই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জানিয়ে রেখেছিল, ম্যাচের পর পুরস্কার বিতরণীর আগে সম্মাননা জানিয়ে তামিম ইকবালকে বিশেষ স্মারক দেয়া হবে। তখন হয়তো কারোরই জানা ছিলনা, শিরোপা জিতেই সংবর্ধনা নিতে যাচ্ছেন তামিম। শেষ পর্যন্ত ভাগ্যে তার ফেভারেই ছিল। তাই চ্যাম্পিয়নের মুকুট জিতে সেই স্মারক নিলেন ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম। বিপিএলের ফাইনাল ম্যাচে চিটাগং কিংসকে হারিয়ে ফরচুর বরিশালকে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন করেই মাঠ থেকে বিদায় সংবর্ধনা পেলেন তামিম। ফাইনাল পুরস্কার বিতরণী মঞ্চেই দেশসেরা ওপেনারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ী সংবর্ধনা দিয়েছে বিসিবি। মঞ্চে তামিমের হাতে স্মারক জার্সি ও ক্রেস্ট তুলে দেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও বিসিবি প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ। তামিমের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী-সন্তানরাও। তামিম এই দিক থেকে যে ভাগ্যবান তা বলাই যায়। কারণ অনেক ক্রিকেটার ক্রিকেট বোর্ডের বিদায় সংবর্ধনা নেয়ার সুযোগই পাননি।

তামিমের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মিরপুর স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হয় তার ক্যারিয়ারের বিশেষ বিশেষ মুহূর্ত দিয়ে বানানো ভিডিওচিত্র। যেখানে দেখানো হয় লর্ডসের সেঞ্চুরি উদযাপন, এক হাতে ব্যাটিংসহ তামিমের আরও কিছু আইকনিক মুহূর্ত। এরপর তামিমের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা ও তাকে শুভকামনা জানান সতীর্থরা। এই পর্ব শেষে জাতীয় দলের তামিমের দীর্ঘদিনের দুই সতীর্থ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমকে ডেকে নেন উপস্থাপক। বরিশালেও তামিমের সতীর্থ হওয়া এ দুজন জানান দেশসেরা ব্যাটসম্যানের সঙ্গে নিজেদের খেলার অভিজ্ঞতার কথা। এরপর তামিমের টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি জার্সি দিয়ে বানানো একটি ফ্রেমসহ সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয় জাতীয় দলের সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ককে। এছাড়া তামিমের প্রতি শ্রদ্ধা জানান জাতীয় দলের তরুণ ক্রিকেটার জাকের আলী, জাকির হাসান, তানজিম হাসান ও ইয়াসির আলী রাব্বি। তামিমকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তার সাবেক সতীর্থ মোহাম্মদ আশরাফুল। তামিমকে ক্যারিশম্যাটিক আখ্যা দেন রিয়াদ এবং মুশফিক জানান, তামিমই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ব্যাটার। এসময় তামিম ইকবাল তার ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে জানা-অজানা অনেক কথাই বলেন। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জেতা বাংলাদেশ দলের উদযাপন দেখেই যে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন বুনেছিলেন, সেকথা আরও একবার বর্ণনা করেন তিনি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন চাচা আকরাম খানের প্রতি। এরপর তামিম বলেন, ‘তামিবিয়ান, সাকিবিয়ান বা মাশরাফিয়ান বলে কিছু নেই। সবাই বাংলাদেশের সমর্থক। এসব আসলে দেশের ক্রিকেটকেই ধ্বংস করে দিয়েছে। দয়া করে এসব বন্ধ করুন। যে কেউ যে কারও সমর্থক হতে পারি, কিন্তু আমরা সবাই বাংলাদেশী। আমার এটাই শেষ বার্তা।’ এ ছাড়া বিপিএলে বরিশালকে সমর্থন দেয়ায় ভক্ত-সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভক্ত-সমর্থকরা দুর্দান্ত ছিল। তাদের আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। কোনও সাকিবিয়ান, তামিমিয়ান বা মাশরাফিয়ান নেই। শুধু একটাই সমর্থনের বিষয় আছে, বাংলাদেশ।’

এর আগে, ২০২৩ সালের ৬ জুলাই আবেগঘন সংবাদ সম্মেলনে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ফিরে সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ওয়ানডে খেলে চলে যান দলের বাইরে। ২০২২ সালের জুলাইয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিক অবসর নিলেও টেস্ট ও ওয়ানডে খেলার দরজা খোলা রেখেছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। তাতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাকে পাওয়ার আশা করছিল বিসিবি। তার মতামত জানতেই তার সঙ্গে সভায় বসেছিল নির্বাচক কমিটি। সভা শেষ হওয়ার দুই দিন পর গত ১০ জানুয়ারি নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। তামিমকে বিশেষ সম্মাননার জন্য এই বিপিএলের ফাইনালের দিনটিকেই বেছে নেয় বিসিবি। ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে বিসিবির সঙ্গে অম্লমধুর সম্পর্ক ছিল তামিমের। বিভিন্ন সময় বিসিবির সঙ্গে তার অনৈক্যের বিষয় সামনে এসেছে। এ সময় বিসিবির প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেছেন পাঁচজন- আব্দুল আজিজ, সিনা ইবনে জামালি, আ হ ম মোস্তফা কামাল, নাজমুল হাসান পাপন ও ফারুক আহমেদ (বর্তমান)। তবে তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তামিম। তামিম বলেন, ‘আমাদের সাথে বিসিবির সম্পর্ক সব সময়ই অম্লমধুর। তবে আমি এটাও বলবো, আমারসহ আমাদের সবাইকে বিসিবিই লালন করেছে। আমি বিসিবির এই কমিটি শুধু নয়, অবশ্যই বর্তমান বিসিবিপ্রধানকে ধন্যবাদ। পাশাপাশি যিনি তার আগে সভাপতি ছিলেন, তারও আগে বোর্ডপ্রধান ছিলেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। তারা আমাকে একজন অভিভাবকের মতোই ১৭ বছর খেলার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন সম্মাননা হতে পারতো কিনা, তার চেয়ে বড় কথা এমন একটা পরিবেশে মাঠ থেকে আমি বিসিবির কাছ থেকে এমন সম্মাননা পেয়েছি। সেটা দারুণ অনুভূতি।’ ১৭ বছর আগে ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। ২০০৭ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। বাংলাদেশের জার্সিতে ২৪৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৪টি সেঞ্চুরি ও ৫৬টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৬.৬৫ গড়ে ৮ হাজার ৩৫৭ রান করেছেন তামিম। তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান, যার নামের পাশে ৮ হাজারের বেশি ওয়ানডে রান আছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ওয়ানডে ম্যাচটিই ১৭ বছরের ক্যারিয়ারের শেষ হয়ে থাকলো। ২০০৭ সালে ওয়ানডে অভিষেকের বছর সেপ্টেম্বরে টি-টোয়েন্টি ক্যাপ পান তামিম। পরের বছর জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে পা রাখেন। ৭০ টেস্টের ১৩৪ ইনিংসে ১০টি সেঞ্চুরি ও ৩১টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৮.৮৯ গড়ে ৫ হাজার ১৩৪ রান করেছেন তামিম। যা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের হয়ে তিনি সর্বশেষ টেস্ট খেলেন ২০২৩ সালের এপ্রিলে। এ ছাড়া ৭৮ টি-টোয়েন্টিতে একটি সেঞ্চুরি ও ৭টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৪.৬৫ গড়ে তামিমের রান ১ হাজার ৭৫৮। সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র সেঞ্চুরিটি তার। তামিম সর্বশেষ দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলেন ২০২০ সালের মার্চে। এই ফরম্যাটকে বিদায় জানান ২০২২ সালের জুলাইয়ে।