দেড় দশকের অকল্পনীয় দুর্নীতি এবং লুটপাট: একটি সমীক্ষা
গত ১৫ বছরে বিশেষ করে অর্থনৈতিক খাতে যে ধরনের দুর্নীতি হয়েছে তা অকল্পনীয় এবং সমাজের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাংক থেকে ডিপোজিট নিয়ে চলে গেছে, যার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে বিরল।
Printed Edition
![Untitled-5](https://static.dailysangram.com/images/Untitled-5_U2lAZWy.original.jpg)
মুহাম্মদ নুরুল হুদা
গত ১৫ বছরে বিশেষ করে অর্থনৈতিক খাতে যে ধরনের দুর্নীতি হয়েছে তা অকল্পনীয় এবং সমাজের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাংক থেকে ডিপোজিট নিয়ে চলে গেছে, যার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে বিরল। বিগত সরকারের আমলে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে প্রায় পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা অপচয় বা নষ্ট হয়েছে। অর্থনীতি নিয়ে সরকারের শ্বেতপত্রে প্রকল্পের নামে টাকা অপচয়ের এমন চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের পাশাপাশি এডিপির দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থের অপচয় -এসব বিষয় নিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে। গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি )মাধ্যমে খরচ করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এর ৪০ শতাংশ টাকা লুটপাট করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পে মূলত রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ এবং বাড়তি খরচ দেখিয়ে এই বিপুল অর্থ লুটপাট করেছেন বিদায়ী ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা ও সুবিধাভোগীরা।
উন্নয়নের প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি বিনিয়োগে বিপুল অর্থ অপচয় হয়েছে। আর্থিক সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই অনেক রাজনৈতিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এবং বাস্তবায়নের সময় নানাভাবে ‘নয়ছয়’ হয়েছে। সময়ে সময়ে প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে পছন্দের ব্যক্তিদের প্রতিযোগিতাহীনভাবে ঠিকাদারি দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। লুটপাটের টাকা পাচার হয়েছে বিদেশে। এতে সার্বিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে ব্যাংক খাত। নয়টি ব্যাংক দখল করে লুটপাট করার ফলে ওইসব ব্যাংক এখন আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব অন্য ব্যাংকগুলোর উপরও পড়েছে । এতে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার জুন ও সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করেছে। দুই প্রান্তিক মিলে খেলাপি ঋণ এক লাখ তিন হাজার কোটি টাকা বেড়ে মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকায়। যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, খেলাপি ঋণের হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আগামীতে তিনটি কারণে খেলাপি ঋণ বাড়বে। এক, আগে খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করা হতো, এখন সব তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। দুই, ব্যাংক খাতে গত ১৫ বছরে যে জাল -জালিয়াতি হয়েছে সেগুলোর সব তথ্য এখনো প্রকাশ হয়নি। এসব তথ্য প্রকাশিত হলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাবে। তিন, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা গঠন করার ফলে নিয়মিত ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এসব কারণে আগামীতে খেলাপি ঋণ বাড়বে।
অপর তথ্য মতে, বাংলাদেশ থেকে গত দেড় দশকে মোট কত অর্থ পাচার হয়েছে সে বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান তৈরি করা সম্ভব হয়নি। জিএফআইয়ের হিসেবে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৯ হাজার কোটি বা ৯০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থপাচার হয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে পাচার হয়েছে ৬৪০ কোটি ডলার। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এ গড় বেড়ে ৮২৭ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ২০১৯ সালের পর দেশ থেকে অর্থ পাচার আরো বেড়ে যায়।
পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠান নিযুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক খাতের নীতি নির্ধারকরা বিভিন্ন সময়েই পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে সরকারের জোর তৎপরতা শুরুর কথা জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে গত ২৮ অক্টোবর প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন,”শুধু ব্যাংক দখলের মাধ্যমেই বাংলাদেশ থেকে আনুমানিক ২ লাখ কোটি টাকা( ১৬. ৭০ বিলিয়ন বা বা ১৬৭০ কোটি ডলার )পাচার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন শেয়ারধারীদের ঋণ দেয়া ও আমদানির অতিরিক্ত খরচ দেখানোর মতো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। লোপাট হওয়া ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা দেশ থেকে যে অর্থ দুবাই, সিঙ্গাপুর বা অন্যান্য স্থানে পাচার করে নিজেদের আয়ত্তে রেখেছেন, তা উদ্ধারের চেষ্টায় আন্তর্জাতিক আইন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে শেখ হাসিনার সময়ে দখলকৃত প্রায় ১২টি ব্যাংকের অবস্থা নিরীক্ষা করার পর বাংলাদেশ চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারের পদক্ষেপ নেবে। আমরা এ নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেশে ও বিদেশের বাইরের আদালতে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই এমনই বলেন গভর্নর।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াটি বেশ কঠিন ও দুঃসাধ্য। তাদের মতে বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেল ছাড়াও চালান জালিয়াতি, দেশে কর্মরত বিদেশী কর্মীদের পাঠানো অর্থ, ভিসা ও অভিবাসন বাবদ, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস)এবং হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়েছে। পাচার হওয়া এর অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। তবে এটি অত্যন্ত কঠিন এবং প্রায় অসম্ভবের এর কাছাকাছি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একটি দৃষ্টান্ত আছে, সেটি হল সিঙ্গাপুর থেকে।
বিশ্বের যেকোন দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়াটি খুব জটিল ও সময় সাপেক্ষ বিষয়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার আরো বেশি কঠিন। অর্থ পাচারের নথিপত্র সংগ্রহ, পাচারের গতিপথ নির্ধারণ, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও পাচার হওয়া দেশের আইনগত প্রক্রিয়া শেষ করতে সর্বনিম্ন ৫ বছর সময় লাগবে আর বিষয়বস্তু ও প্রক্রিয়া জটিল হলে কোন কোন মামলা শেষ হতে ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
অর্থ পাচার বিষয়ে তদন্ত মামলা বিচার প্রক্রিয়া আপিল রিভিশনসহ অন্যসব প্রক্রিয়া শেষ করতে সর্বনিম্ন ৩ থেকে অগণিত বছর লাগতে পারে। দেশের প্রক্রিয়া শেষ করে তবে শুরু হবে বিদেশ থেকে অর্থাৎ ফেরত আনার কার্যক্রম। সেক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট দেশের আইনগত প্রক্রিয়া মানতে হবে। তবে সরকার চাইলে অধ্যাদেশ জারি করে মামলা ছাড়াই বিএফআইইউ কিংবা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আনার সুযোগ দিতে পারে। আবার পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে পৃথক আইন ও প্রণয়ন করতে পারে। এটি হলে দেশের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় কম লাগবে।
বাংলাদেশে অর্থ পাচারের মতো আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধ ও তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত অর্থ পাচার ঠেকাতে খুব একটা সাফল্য পায়নি সংস্থাটি। বরং সংস্থাটির কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে গত দেড় দশকে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হলেও এখন পর্যন্ত পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার নজির মাত্র একটি। সিঙ্গাপুরের আদালতের নির্দেশে ২০১২ ও ২০১৩ সালে ফেয়ারহিল নামের একটি পরামর্শ সংস্থার নামে ব্যাংকে গচ্ছিত থাকা প্রায় এক মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের আদালতের নির্দেশনার পরও মামলাটি নিষ্পত্তি হতে সময় লেগেছে প্রায় তিন বছর।
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার রুখতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবে সংজ্ঞায়িত হয়েছে ২৯টি অপরাধ। এর মধ্যে চতুর্দশ অবস্থানে রয়েছে দেশী ও বিদেশী মুদ্রা পাচার। মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধগুলোর অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে পারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), পরিবেশ অধিদপ্তর, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। আর সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব বিএফআইইউর।
দেশ থেকে কোন অর্থ পাচার হয়েছে কিনা সেটি খুঁজে বের করার প্রাথমিক দায়িত্ব বিএফআইইউর। আর্থিক এ গোয়েন্দা সংস্থাটির পক্ষ থেকে পাচারকৃত অর্থের গতিপথ সংক্রান্ত নথিপত্র চূড়ান্ত করতে হবে। এরপর সে নথিপত্রের ভিত্তিতে তদন্ত করবে দুদক, এনবিআর বা সিআইডি। তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হবে। মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষে আদালতের রায় পাওয়ার পরই বিদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার সুযোগ তৈরি হয়।
হাইকোর্টের আদেশে দুদক সব ধরনের মানি লন্ডারিং অপরাধ তদন্ত করতে পারে। পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনার জন্য আদালতের আদেশ লাগবে। নগদ অর্থ হলে ফ্রিজ ও সম্পদের ক্ষেত্রে ক্রোক আদেশ দেবেন আদালত। ফ্রিজ ও ক্রোক আদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠাতে হবে। আদালতের আদেশ ওই দেশ কার্যকর করবে। বিচার শেষে আদালতের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করবে। বাজেয়াপ্ত আদেশও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠাতে হবে।
তারপর টাকা ও সম্পদের মূল্য ফেরত পাঠাবে ওই দেশ। আদালতের আদেশ ছাড়া সংশ্লিষ্ট দেশ আমলে নেয় না। তবে সরকারের সঙ্গে সরকারের (জিটুজি) বোঝাপড়া থাকলে আদালতের আদেশ ছাড়াও অর্থ ফেরত আনা যায়।
আগে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোর মধ্যে ছিল সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ করস্বর্গ খ্যাত কিছু দ্বীপরাষ্ট্র। তবে গত কয়েক বছরে অর্থ পাচারের গন্তব্যে পরিবর্তন আসে। বাংলাদেশী পাচারকারীরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়া বা পূর্ব ইউরোপের মতো দেশগুলোকে অর্থের নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে বেছে নেন। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা, পুলিশসহ সরকারি চাকরিজীবী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান- পরিচালক, ঊর্ধ্বতন ও মাঝারি স্তরের কর্মকর্তাও দেশ থেকে অর্থ পাচার করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান জিএফআইয়ের হিসাবে ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৯ হাজার কোটি বা ৯০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। ইতিপূর্বে বিএফআইইউর পক্ষ থেকে অর্থপাচারসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে আদালতে ৪৯ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, জাপান, হংকং, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ভারত, শ্রীলংকা, কুয়েত, বেলজিয়াম তানজানিয়া।
টাকা ফেরত আনার ব্যাপারে নজির স্থাপন করেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু। দেশটি দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে সুইজারল্যান্ড থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত এনেছে। তবে এর আগে দেশটিকে প্রমাণ করতে হয়েছে এ অর্থ পাচারকৃত এবং তা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত। ক্যান্টন অফ জুরিখের এক্সামিনিং ম্যাজিস্ট্রেটস অফিস ফোরের এক অনুসন্ধানে উঠে আসে, পেরুভিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান ভ্লাদিমিরো মন্তেসিনো সামরিক কেনাকাটায় অনৈতিক সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে ঘুষের ৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলার সুইজারল্যান্ডে পাচার করেছেন। দুর্নীতি ও পাচার প্রমাণ হওয়ায় ২০০২ সালের জুনে সুইজারল্যান্ডের এক আদালত ওই অর্থ পেরুতে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরিশেষে বলা যায় বিএফআইইউ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে বিভিন্ন দেশে থাকা অর্থ সম্পদের তথ্য চেয়েছে মানি লন্ডারিং নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা এগমন্ট গ্রুপের কাছে। বাংলাদেশ এগমণ্ট গ্রুপের সদস্য। বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি টাকা পাচার হচ্ছে সেসব দেশও এ গ্রুপের সদস্য। বিভিন্ন ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহে বিএফআইইউর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তবে বিদেশে অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ ও পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে আইনি সীমাবদ্ধতা কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে সাফল্য কম সেহেতু এ ব্যাপারে জোরালো তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক