DailySangram-Logo

উত্তম চরিত্রের কথা

“চরিত্র মানুষের জীবনে যে কত বড় সম্পদ, তা একটু গভীরে গিয়ে চিন্তা করলেই বোঝা যায়। সমাজের ও আমার-আপনার চারপাশে তাকালেই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।” ‘চরিত্র’ একটি ব্যাপক শব্দ। মানুষের জীবনের সব দিকই এর অন্তর্ভুক্ত। মানুষ তার দেহটাকে কীভাবে ব্যবহার করলো,

Printed Edition
sadaff

অধ্যাপক মাযহারুল ইসলাম

ইংরেজিতে একটি কথা আছে-If money is lost, nothing is lost. If health is lost, something is lost. If character is lost, every-thing is lost. অর্থাৎ যদি টাকা-পয়সা হারায়, তাহলে কোনো ক্ষতি হয় না। যদি স্বাস্থ্য হারায়, তাহলে সামান্য ক্ষতি হয়। আর যদি চরিত্র নষ্ট হয়, তাহলে সবকিছুই বিনষ্ট হয় অর্থাৎ সবকিছু শেষ হয়ে যায়। কিছু আর বাকি থাকে না।

“চরিত্র মানুষের জীবনে যে কত বড় সম্পদ, তা একটু গভীরে গিয়ে চিন্তা করলেই বোঝা যায়। সমাজের ও আমার-আপনার চারপাশে তাকালেই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।” ‘চরিত্র’ একটি ব্যাপক শব্দ। মানুষের জীবনের সব দিকই এর অন্তর্ভুক্ত। মানুষ তার দেহটাকে কীভাবে ব্যবহার করলো, তার হাত দুটি, চোখ দুটি, পা দুটি, তার মুখ, তার জিহ্বা, তার নাক-কান, তার মন-মানসিকতা, তার ইচ্ছাশক্তি অর্থাৎ একজন মানুষ তার সকল কাজকর্ম কীভাবে এবং কোন নিয়মে সম্পন্ন বা সম্পাদন করে, সবটাই তার চরিত্রের প্রকাশ ঘটায়। আমরা গ্রামগঞ্জে, শহরে-বন্দরে যে কোনো নির্বাচনের সময় স্লোগানে স্লোগানে শুনতে পাইÑ অমুক ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র। কিন্তু চরিত্র কীরূপ, তা একমাত্র তার বাস্তব কাজকর্মেই বোঝা যায়। কথায় আছে “বৃক্ষের পরিচয় ফলে।”

শিশুকালে যখন বাল্যশিক্ষা বা শিশুশিক্ষা আমরা হাতে নিয়েছি, তখন কি পড়েছি? আমরা পড়েছিÑ “সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।” “সদা সত্য কথা বলিবে, কখনো মিথ্যা বলিবে না। গুরুজনকে শ্রদ্ধা করিবে। পরের সম্পদ অপহরণ করিও না।” “আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে। যেথায় যখন রবো, সে স্থান নিয়ত চরিত্র করিব উজ্জ্বল।” আরো কত শতসহস্র সুন্দর, সুন্দর কথা, বাক্য ও কবিতা মুখস্থ করেছি, যার সবকিছুই নির্মল ও পবিত্র চরিত্র গঠনের উপায়-উপাদান ও পাথেয়। আজ আমরা যারা বাবা-মা, সমাজের সর্বস্তরের অভিভাবক, তাদের সকলেরই জীবনের সেই বাল্যকালের প্রথম পাঠগুলো স্মরণ করা এবং বর্তমান ব্যবহারিক ও কর্মময় জীবনের সাথে মেলানোর প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

পৃথিবীতে যত ধর্ম আছে, সকল ধর্মই মানুষকে সৎ ও চরিত্রবান হতে শিক্ষা দেয়। মহাগ্রন্থ আলকুরআন এক সার্বজনীন চিরন্তন কল্যাণকর জীবনব্যবস্থা। মহানবী (সা.) তার জীবনের প্রতিটি কাজ, আচার-ব্যবহার, চাল-চলন তথা পার্থিব জীবনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নির্মল ও সর্বোত্তম চারিত্রিক গুণাবলী এবং বৈশিষ্ট্য ধারণ করে মানবজাতিকে পথ চলার বাস্তব দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। আজ জাতি-ধর্ম-দল-মত নির্বিশেষে নিজ নিজ চরিত্রকে পর্যালোচনা করা জরুরি এবং অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে।

বিশ্বজাহানের মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।’ (সূরা আহযাব : ২১)।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আরো বলেন, ‘অবশ্য তুমি এক মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সূরা কালাম : ৪)।

জাতি, ধর্ম, ভাষা, বর্ণ নির্বিশেষে সারা বিশ্বের ব্যক্তিবর্গ জানেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার জীবন ছিল অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এক পরিপূর্ণ জীবন্ত আদর্শ। শিশু বয়স থেকেই তার চারিত্র্যিক মাধুর্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অন্ধকার, বর্বর যুগের কাফের ও অবিশ্বাসী ব্যক্তিগণও মোহাম্মদ (সা.)-এর চরিত্র গুণে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিশ্বাস করে ধনসম্পদ তার হাতেই আমানত রাখত। তাকে দেয়া হয়েছিল ‘আলামিন উপাধি’। উল্লেখ্য, তখনো তিনি নব্যুয়ত প্রাপ্ত হননি। চরিত্র মাধুর্যই তাকে মহৎ এবং মহামানব করে তুলেছে।

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বণিত। তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো অশালীন কথাবার্তা মুখে আনতেন না। অশালীন কোনো কাজও করতেন না এবং অপর কোনো লোকের সাথে অসদাচরণ করতেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম, যে ব্যক্তি চরিত্রের দিকে উত্তম।” (বুখারী ও মুসলিম)।

উত্তম চরিত্রের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.) বলেন, “উত্তম চরিত্র হলো হাসিমাখা চেহারা। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ খরচ করা এবং কাউকে কষ্ট না দেয়া।”

উত্তম চরিত্রের সীমা যে কত বিস্তৃত ও সৌন্দর্যময়, তা এ সকল হাদীস ও ব্যাখ্যা থেকে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। আর অসচ্চরিত্রের কোনো সীমারেখা নেই, তা যে কত অধঃপতন, কত নিম্নে

+ ঘৃণিত ও জঘন্য স্তরের নিয়ে যায় তা অকল্পনীয়।

হজরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে ইয়েমেনে পাঠাবার সময় ঘোড়ার জিনে পা রাখার মুহূর্তে যে উপদেশ দিয়েছিলেন তা ছিলÑ “হে মুয়ায! মানুষের সাথে উত্তম ব্যবহার করো।” (মুয়াত্তা ইমাম মালেক)।

আবু উসামা (রা.) থেকে বর্ণিত। ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিঃসন্দেহে সরল ও অনাড়ম্বর জীবন ঈমানের অঙ্গ।’ (আবু দাউদ)।

যারা মুমিন, তারা দুনিয়ায় সরল এবং সাদাসিদে জীবনযাপন করে। তারা পরকালের চিন্তায় মশগুল থাকে। এই দুনিয়ার জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দের মোহে তারা ব্যস্ত থাকে না। পরের সম্পদ লুণ্ঠন করে না। ঘুষ খেয়ে, দুর্নীতি করে সম্পদশালী হওয়া তো দূরের কথা, বরং নিজের গায়ের ঘাম ফেলে যা আয়-উপার্জন করে, তা থেকেও গরিবের এবং দুস্থ মানবতার কল্যাণে ব্যয় করে। চারিত্রিক গুণাবলী, আদর্শ এবং নৈতিকতার কাছে ধন-সম্পদ অতি তুচ্ছ।

সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জিহ্বা এবং লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিন হবে, আমি তার জান্নাতের জামিন হবো।’ (বুখারী, শরিফ)।

মানুষের এ দুটি অঙ্গ খুবই বিপজ্জনক। এ দুটি অঙ্গ দ্বারা সর্বাধিক পাপ কাজ সংঘটিত হয়ে থাকে। যদি কোনো ব্যক্তি এই দুটি অঙ্গ হেফাজত করে, তাহলে হাজারো পাপ থেকে সে বাঁচতে পারে এবং জান্নাত লাভ করতে পারবে, ইনশাআল্লাহ।

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “নিঃসন্দেহে তার মুখ দিয়ে এমন কথা প্রকাশ করে, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ হয়ে থাকে। কিন্তু সে তার প্রতি গুরুত্বারোপ করে না। অথচ উক্ত কথার কারণে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। এভাবে মানুষ আল্লাহর অসন্তোষজনক কথাও বেপরোয়াভাবে মুখ থেকে বের করে বসে, যা তাকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়।” (বুখারী শরীফ)।

এ হাদীস থেকে এই শিক্ষা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, মানুষ যেন তার জিহ্বা লাগামহীনভাবে ব্যবহার না করে। এমন কথা মুখ দিয়ে যেন না বলে, যা তাকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়। অথচ আমরা বর্তমান সমাজে এর বিপরীত কাজ-কর্মই করতে দেখি, আর কথাবার্তা বলতে শুনি। ঘুষ, দুর্নীতি, খুন-খারাবি, অনৈতিক কার্যকলাপ, অনাচার, অত্যাচার দেখতে পাই। এই মুখের অর্থাৎ জিহ্বার দ্বারা কত অনৈতিক কাজ সংঘটিত হচ্ছে। আপনি একবার ভেবে দেখুন তো, ঘুষ খাবেন, দুর্নীতি করবেন, অশ্লীল কাজ করবেন, যত অন্যায়-অপকর্ম তার জন্ম হয় কথা থেকেÑ অর্থাৎ জিহ্বা বা মুখ থেকে অথবা হাত-পা থেকে।

আদালতে আখিরাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা শেষ বিচারের দিন প্রত্যেক ব্যক্তির আমলনামা দেখবেন। মুখ দিয়ে সেদিন অসত্য কথা বললেও ব্যক্তির, হাত-পা, কান-চোখ, তার দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর নির্দেশে সত্য কথা বলবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, আমি আজ তাদের মুখ সীলমোহর করে দিব এবং আমাদের সাথে কথা বলবে তাদেরহ হাত, আর সাক্ষ্য দেবে তাদের পা সে সম্পর্কে যা তারা কামাই করেছিল। (সূরা ইয়াসিন : ৬৫)। সেদিন দুনিয়ায় যে যাই করে থাকুক, তাদের ভালো ও মন্দ সব কর্মের প্রকাশ করে দেবে। সেখান থেকে পালাবার কোনো পথ পাবে না, কোনো ঘটনা বা কোনো কথাই গোপন করতে পারবে না। আজ যেভাবে নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, অশ্লীলতা-বেহায়াপনা চলছে, তা ভাবতে গেলে শরীর-মন শিউরে ওঠে। ঘুঁষ-দুর্নীতি, চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি, লুটতরাজ, পিয়ন, ড্রাইভার থেকে সর্বোচ্চ ব্যক্তি পর্যন্ত দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থপাচারসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা করা হচ্ছে না। রাব্বুল আলামিন সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নজরের বাইরে কিন্তু অতি ক্ষুদ্র বিন্দুমাত্রও কিছু নেই। তিনি সবকিছুই দেখছেন। মুখ দিয়ে কী কথা বলেছে, কান দিয়ে কী কথা শুনেছে, হাত দিয়ে কী কাজ করেছে, চোখ দিয়ে কী দেখেছে, পা দিয়ে কোথায় কোথায় গেছে, লজ্জাস্থান হেফাজত করেছে কিনা, সবকিছুই আল্লাহর হুকুমে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই সেদিন তা বলে দেবে। দুনিয়ায় যারা সচ্চরিত্রবান ও আদর্শ জীবনযাপন করেছে, তারা হবে জান্নাতবাসী, আর যারা অসচ্চরিত্র এবং অসৎ ও অপকর্ম করেছে, তারা হবে জাহান্নামবাসী। নর-নারী, যুবক-বৃদ্ধ, চাকরিজীবী ছাত্র-শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী ও কর্মীবৃন্দ, সমাজপতি, রাষ্ট্র পরিচালক ও প্রশাসনসহ সর্বস্তরের ব্যক্তিগণের নিজ অন্তরের দিকে তাকিয়ে হিসাব-নিকাশ ও বিশ্লেষণ করা উচিত। দুর্নীতিবাজ, চরিত্রহীন ও অসৎ লোকদের দুনিয়ার বিচারেই কত লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, সাজা আর শাস্তি ভোগ করতে হয়, আখিরাতের বিচারে কি হবে তা অচিন্তনীয়। দুনিয়ায় ব্যক্তির আমলই সেদিন তার গন্তব্যস্থল ও নিবাস নির্ধারণ করে দেবে।

নবী করীম (সা.)-এর জীবন, আদর্শ এবং তার পবিত্র চরিত্রই আমাদের চলার একমাত্র মানদণ্ড। আজ আমরা আমাদের চারপাশে যা দেখতে পাচ্ছি, শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত নরনারীর তথা সমাজের যেসব ঘটনাবলী আমাদের সামনে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে দেখতে পাই, তাতে বিবেকের দংশনে আমরা নিষ্পেষিত, বিবেকের কষাঘাতে জর্জরিত। তাই আজ সর্বস্তরের অভিভাবক আমাদের সকলকে এ টু জেড আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে। একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের জন্য শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, ছাত্র-ছাত্রী সকলের দিকে নজর দিতে হবে। নৈতিক শিক্ষায় এবং আদর্শে তাদের গড়ে তুলতে হবে। কারণ তারাই তো দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। আমরা যারা সর্বপর্যায়ের অভিভাবক, তাদের স্ব স্ব জীবনের কর্মকাণ্ড নিয়ে আত্মবিশ্লেষণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। মনে রাখতে হবে, জাগতিক এবং পারলৌকিক জীবনে মানুষের সুখ-শান্তির মূলেই হলো নির্ভেজাল আদর্শ, সচ্চরিত্র, নীতি-নৈতিকতা এবং মানবিকতার অনুশীলন। সচ্চরিত্র গঠনে আরো যে উপাদান আছে, তা ধারণ করেই আগামী দিনের নাগরিক হিসেবে সকলকে গড়ে তুলতে হবে।

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। “এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিল, ইসলামের কোন কাজটি উত্তম? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, গরিব-মিসকিনদের খাবার দেয়া। সকল মুসলমানকে সালাম দেয়া। তোমার সাথে তার পরিচয় থাকুক আর না থাকুক। অর্থাৎ পূর্ব থেকে বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক।”

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা মুমিন হবে। আর তোমরা মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একে অপরকে ভালো না বাসবে। আমি কি তোমাদের এমনি এক কাজের কথা বলবো, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসবে? তোমরা পরস্পর ব্যাপকভাবে সালাম বিনিময় করো।” (মুসলিম)।

সত্যবাদিতা, নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ এবং সচ্চরিত্র ও সামাজিকতার যাবতীয় কল্যাণ ও সর্বদিক থেকে ভালো এবং সর্বোত্তম তার একমাত্র মানদণ্ড হলো নবী করীম (সা.)-এর জীবনাদর্শ। তাই সার্বিকভাবে মহানবীর (সা.) অনুসরণ করার জন্য আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে এবং বাস্তব জীবনে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। সর্বোপরি মনে জাগরুক রাখতে হবেÑ পৃথিবীতে ধন-সম্পদ নয়, ভোগবিলাস-ঐশ্চর্য ও প্রতিপত্তি এবং ক্ষমতা নয়; বরং এই নশ্বর পৃথিবীতে এবং অবিনশ্বর পরপারে সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও মুক্তিলাভের একমাত্র উপায় হলো সচ্চরিত্র, নৈতিকতা, মানবিকতা পরোপকার এবং আল্লাহকে স্মরণ ও ভয় করা।

নবী করীম (সা.) বলেন, ‘চারিত্রিক সৌন্দর্য ও গুণাবলীর বিকাশ সাধনের জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালেক)।

তাই আসুন, আল্লাহ তথা পরকালের ভয় স্মরণে রেখে আমরা নিজে সৎকর্ম করি, অপরকে সৎকর্ম করার জন্য উদ্বুদ্ধ করি। নিজে ভালো হই এবং নিজ পরিবার, সমাজ তথা সকলকে আগামী দিনের আমাদের প্রিয়তম বংশধরদের সচ্চরিত্রবান ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলি। সত্যিকার অর্থেই ফুলের মতো নির্মল, পবিত্র ও সুন্দর করে নিজেদেরকে লালন করি। তাহলেই দিক থেকে দিগন্তে ছড়িয়ে পড়বে এর সৌরভ, সম্মোহনী শক্তি নিয়ে ভেসে বেড়াবে মনোরম সুবাস। পরম শান্তিতে অবগাহন করবে মানব সমাজ, ধন্য হবে মানবতা। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন এবং হিদায়াত নসিব করুন। আমীন।

লেখক : গ্রন্থকার ও অধ্যাপক