DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

শিক্ষার গুরুত্ব ও শিক্ষকের মর্যাদা

মানুষের মনের উৎকর্ষের জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষা মানুষকে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে অনুপ্রেরণা যোগায়। বলা হয়, শিক্ষাহীন মানুষ পশুর সমান। একজন মানুষ আর পশুর মধ্যে তফাত মূলত শিক্ষাই। আবার এভাবেও বলা যায়, যার শিক্ষা নেই বা যে মূর্খ সে পশুর চেয়েও অধম।

Printed Edition
Study

মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন

মানুষের মনের উৎকর্ষের জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষা মানুষকে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে অনুপ্রেরণা যোগায়। বলা হয়, শিক্ষাহীন মানুষ পশুর সমান। একজন মানুষ আর পশুর মধ্যে তফাত মূলত শিক্ষাই। আবার এভাবেও বলা যায়, যার শিক্ষা নেই বা যে মূর্খ সে পশুর চেয়েও অধম। সুতরাং ব্যক্তির বিকাশ ও সভ্য সমাজে বসবাসের জন্য শিক্ষা একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে শিক্ষা একটি অন্যতম প্রধান অধিকার। আর এ অধিকার থেকে কেউ কাউকে বঞ্চিত করতে পারে না। সমাজের মধ্যে আমরা বিভিন্ন স্তরের মানুষ বাস করি। এখানে নানান পেশার লোক যেমন বাস করে তেমনি বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, গোত্র এবং গোষ্ঠীও বসবাস করে। তাই শিক্ষা শুধু উঁচুবর্ণ বা গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে সবার রয়েছে তুল্যাধিকার। শিক্ষা অর্জনের জন্য চাই মনের মধ্যে যথার্থ কৌতূহল। কৌতূহল না থাকলে কেউ কোনো দিন প্রকৃত শিক্ষা লাভ করতে পারবে না। অনেকেই মনে করেন প্রাতিষ্ঠানিক বা আনুষ্ঠানিক শিক্ষাই হচ্ছে আসল শিক্ষা। কিন্তু তা সঠিক নয়। প্রতিষ্ঠান শিক্ষা লাভের একটি মাধ্যম মাত্র। নিজের প্রচেষ্টায় যে কেউ চাইলে প্রকৃত শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারেন। দৃষ্টান্ত হিসেবে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। তিনি ছিলেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরি বলেছেন, ‘সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত’। সুশিক্ষিত হওয়ার জন্য সবাইকে প্রতিষ্ঠানে যেতে হয় না বা প্রাতিষ্ঠানিক সনদ লাভ করতে হয় না। পৃথিবীর বড় বড় মনীষীগণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের চেয়ে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। সুশিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষিত হওয়াটাই হচ্ছে আসল শিক্ষা। অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাহিরে ঘটে থাকে যা নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমের অনুসরণ করে না। বিশেষ করে বাস্তবের পরিবর্তনের সাথে ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে এর উৎপত্তি ঘটতে পারে। এটা অপরিহার্যভাবে তথাকথিত শিক্ষাব্যবস্থাকে অনুসরণ করে না। এটা মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের সরাসরি অভিজ্ঞতা থেকে অর্জন করে।

শিক্ষার সংজ্ঞা: সাধারণ অর্থে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনই শিক্ষা। ব্যাপক অর্থে পদ্ধতিগতভাবে জ্ঞানলাভের প্রক্রিয়াকেই শিক্ষা বলে। তবে শিক্ষা হল সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন। শিক্ষা বা জ্ঞানকে আরবিতে ‘ইল্ম’ বলা হয়। ইল্ম শব্দটির একাধিক অর্থ রয়েছে। এগুলোর একটি অর্থ হলো জানা, অনুধাবন করা ও উপলব্ধি করা। অথবা ইল্ম অর্থ সত্যায়ন করাÑ চাই তা বিশ্বাসের ভিত্তিতে হোক বা অন্য কিছু।

বাংলা শিক্ষা শব্দটি এসেছে ‘শাস’ ধাতু থেকে। যার অর্থ শাসন করা বা উপদেশ প্রদান করা। অন্যদিকে শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ এডুকেশন এসেছে ল্যাটিন শব্দ এডুকেয়ার বা এডুকাতুম থেকে। যার অর্থ বের করে আনা অর্থাৎ ভেতরের সম্ভাবনাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা বা বিকশিত করা। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের ভাষায় “শিক্ষা হল মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের বিকাশ।” প্রাচীন গ্রিক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক এরিস্টটল বলেন “সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হল শিক্ষা”। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, “শিক্ষা হল তা-ই যা আমাদের কেবল তথ্য পরিবেশনই করে না বিশ্বসত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে।” তাই শিক্ষাকে বলা হয় ‘Education is the harmonious development of body, mind and soul..’ অর্থাৎ “শিক্ষা হলো শরীর, মন ও আত্মার সমন্বিত উন্নয়ন।”

শিক্ষার্জনের গুরুত্ব:

পবিত্র কুরআনের আলোকে শিক্ষার্জনের গুরুত্ব: পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে শিক্ষা বা জ্ঞানের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, “(হে রাসূল আপনি) বলুন, হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করো।’ (সুরা ত্বা-হা, ১১৪ আয়াত)

তিনি অন্যত্র বলেন, ‘‘বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান?’ (সুরা যুমার, ৯ আয়াত)

আল্লাহ আরও বলেন, ‘যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নত করবেন।’ (সুরা মুজাদালা, ১১ আয়াত)

পবিত্র হাদিসের আলোকে শিক্ষার্জনের গুরুত্ব: ইলম অর্জনের নির্দেশনা স্বরূপ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপর জ্ঞান অন্বেষণ করা ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ)

হজরত ইবনে মাসঊদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কেবল দু’জন ব্যক্তি ঈর্ষার পাত্র। এক. সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তাকে তা সৎপথে ব্যয় করার শক্তিও দিয়েছেন। দুই. সেই লোক যাকে আল্লাহ জ্ঞানবুদ্ধি দান করেছেন, যার বদৌলতে সে বিচার-ফায়সালা করে থাকে ও তা অপরকে শিক্ষা দেয়।” (বুখারী ও মুসলিম)

হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন পথে গমন করে; যাতে সে বিদ্যা অর্জন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন।” (মুসলিম)

হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন: “যে লোক জ্ঞানার্জন করার জন্য বের হয় সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের মাঝে) আছে বলে গণ্য হয়।” (তিরমিযী, হাসান)

হজরত আবূ মুসা (রা.) হতে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিস শরিফে মহানবী (সা) বলেছেন, “..... যে আল্লাহর দ্বিনের ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করল এবং আমি যে হেদায়াত ও জ্ঞান দিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার দ্বারা আল্লাহ তাকে উপকৃত করলেন। সুতরাং সে (নিজেও) শিক্ষা গ্রহণ করল এবং (অপরকেও) শিক্ষা দিল। আর এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তিরও যে এ ব্যাপারে মাথাও উঠাল না এবং আল্লাহর সেই হেদায়াতও গ্রহণ করল না, যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি।” (বুখারী ও মুসলিম)

অতএব, উপর্যুক্ত পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বাণীর আলোকে শিক্ষার গুরুত্ব যে কত বেশি তা আমরা অনুধাবন করতে পারি।

শিক্ষার্জনে বিভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি: ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে সর্বপ্রথমে চলে আসে পবিত্র কুরআনের প্রথম প্রত্যাদেশ, ‘পড়ো, তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’-এ চিরন্তন বাণীটি। এ বাক্যে শিক্ষা অর্জনের মৌলিক দিকটুকু চূড়ান্তভাবে ফুটে উঠেছে। আবার খ্রিষ্ট ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বাইবেল শব্দের অর্থ ‘বই’- ‘Per Excellence’, সর্বশ্রেষ্ঠ পুস্তক ‘The Book’ অর্থাৎ সম্মানিত পড়ার বই। হিন্দুধর্মে তো সরস্বতী নামক দেবীকে পূজা করা হয় যথার্থ বিদ্যা লাভের জন্য। দার্শনিক এরিস্টটল বলেন, Know thyself অর্থাৎ নিজেকে জানো। প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ উপনিষদের ভাষায় ‘আত্মানাং বিদ্ধি’ অর্থাৎ ‘নিজেকে জানো’-এর সার কথা হলো বিদ্যা অর্জন করা। সুফি ও দার্শনিক কবি আল্লামা রুমী বলেন, ‘যে নিজেকে চিনেছে সে প্রকৃতপক্ষে নিজের প্রভুকে চিনেছে।’ এই নিজেকে চেনা বা জানার মধ্যেই রয়েছে আসল সার্থকতা। সুতরাং এর থেকে বুঝা যায় শিক্ষা অর্জনের গুরুত্ব অপরিসীম।

শিক্ষক সমাজ: শিক্ষার কথা উল্লেখ করলেই সাথে সাথে চলে আসে শিক্ষকের কথাও। মহান শিক্ষার বীজ যারা শিক্ষার্থীদের কোমল মনোভূমিতে বপন করেন তাঁরাই হলেন শিক্ষক সমাজ। তাঁরা একটি জাতি গঠনের কারিগর। তাঁদের সুশিক্ষার ওপর নির্ভর করে পরবর্তী প্রজন্মের মনন ও মেধার বিকাশ। একজন আদর্শ শিক্ষক পরশ পাথরের মতো। যে অধ্যবসায়ী শিক্ষার্থী শিক্ষকের পরশলাভে ধন্য হবে, সে-ই জীবনে সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌঁছতে পারবে।

একজন শিক্ষক মানে বেশ কিছু গুণের সমষ্টি। শিক্ষকের এ গুণগুলোকে বিজ্ঞজনেরা ইংরেজিতে এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। TEACHER শব্দের বিশ্লেষণ: T-Tactful (কৌশলী), E-Efficient (দক্ষ), A-Amiable (বন্ধুসুলভ),C- Co-operative(সহযোগী), H-Honest (সৎ), E-Educated (শিক্ষিত), R-Regular (নিয়মিত)।

আমরা লক্ষ করছি উপর্যুক্ত গুণগুলোর সমন্বয়ে যে একজন আদর্শ ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক নিজ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করবেন, নিশ্চয়ই তিনি একটি সুন্দর ও সুশীল সমাজ গঠন করতে পারবেন। এ ব্যাপারে শিক্ষক একজন প্রকৃত সংস্কারকের ভূমিকা পালন করতে পারেন। আর একজন শিক্ষক পেডাগজি-তে (Padagogy শিক্ষা-বিজ্ঞান) যত পাদর্শী হবেন ততই তিনি দক্ষ হয়ে উঠবেন। গুণগুলো অবশ্যই আয়ত্ত করতে হবে। শিক্ষক হবেন দূরদর্শী ও যাবতীয় কুসংস্কার, সামাজিক ঘৃণ্য প্রথা ও ভ্রান্ত ধারণা ইত্যাদি সবকিছু থেকে মুক্ত। তিনি পুরানো ও বাপ-দাদার আমলের সেকেলে ধ্যানধারণা নিজে কখনো লালন করবেন না এবং শিক্ষার্থীদেরকেও এ ব্যাপারে সচেতন করে তুলবেন। তবেই তিনি ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন।

শিক্ষকের মর্যাদা: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আমি তোমাদের কাছে শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” তিনি ছিলেন বিশ্বমানবতার একজন মহান শিক্ষক এবং আমরা উম্মতে মুহাম্মদী সবাই তাঁর অনুগত শিক্ষার্থী। উপর্যুক্ত বাণী থেকে বুঝা যায় শিক্ষকের মর্যাদা কত উচ্চে এবং কত মহান।

“শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষাব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি। শিক্ষকতা কেবল চাকরি নয়, এটি একটি মহান পেশা। সমাজ গঠনে, দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নে, সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে একজন আদর্শ শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য। মেধা, প্রজ্ঞা ও জ্ঞান-দক্ষতায় পরিপূর্ণ শিক্ষক হচ্ছেন দেশ ও জাতির অমূল্য মানবসম্পদ। জাতির বুনিয়াদ গঠনে ও জাতীয় ঐতিহ্য-লালনে শিক্ষকের ভূমিকা যে কোনো পেশাজীবীর চেয়ে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য তাদের দেশের শ্রেষ্ঠ মানুষের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সংগত কারণে তাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। এ জন্য শিক্ষককে নিজ পেশার প্রতি নিবেদিত প্রাণ হতে হয়। একজন শিক্ষক সব সময়ের জন্যই শিক্ষক। তার কর্মক্ষেত্র কেবল শ্রেণিকক্ষেই ব্যাপ্ত নয়; সর্বত্র। একজন ছাত্র শিক্ষককে দেখে শিখবে, তার বক্তব্য শুনে শিখবে, তার আচার-আচরণ লক্ষ করে শিখবে। তাই শিক্ষকদের ন্যায়-নীতিবান মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন আদর্শ মানুষ হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। একজন শিক্ষককে তার পেশার উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিনিয়ত নব নব জ্ঞান ও কৌশলের সন্ধানে নিরলস প্রচেষ্টায় নিজেকে নিরত রাখতে হয় এবং পেশাগত মূল্যবোধ, আত্মপ্রত্যয় ও বোধগম্যতার সমন্বয় ঘটিয়ে শ্রেণি-পাঠদান সার্থক করতে হয়। এটা তখনই সম্ভব হয় যখন শিক্ষক নিজ পেশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, দায়িত্বশীল হন। ........ এখন প্রশ্ন হলো আমাদের দেশের শিক্ষক সমাজ সেই পেশাগত দায়িত্ব কতটুকু পালন করেন? পেশার প্রতি কতটুকু শ্রদ্ধা পোষণ করেন কিংবা দায়িত্বশীল? পাশাপাশি এই প্রশ্নও চলে আসে, শিক্ষকদের নিজ পেশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও দায়িত্ববান হতে পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও পরিবেশ কতটুকু সহায়ক? শিক্ষকগণ তাদের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা পান কতটুকু? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের মধ্যেই এ দেশের শিক্ষার প্রকৃত চিত্র ফুটে ওঠে।” (সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৫ অক্টোবর, ২০১৭)

শিক্ষকের মর্যাদা বুঝাতে আমরা এবার আমেরিকার ১৬তম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন কর্তৃক শিক্ষকের কাছে লিখিত সে ঐতিহাসিক চিঠিখানার চুম্বক অংশ এখানে উদ্ধৃত করছি। তিনি লিখেন:

মাননীয় মহাশয়, “আমার পুত্রকে জ্ঞানার্জনের জন্য আপনার কাছে প্রেরণ করলাম। তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন এটাই আপনার কাছে আমার বিশেষ প্রত্যাশা।

আমার পুত্রকে অবশ্যই শেখাবেন সব মানুষই ন্যায়পরায়ণ নয়, সব মানুষই সত্যনিষ্ঠ নয়। তাকে এও শেখাবেন মন্দ লোকের মাঝেও একজন বীর থাকতে পারে। আমার পুত্রকে শেখাবেন বিদ্যালয়ে নকল করার চেয়ে অকৃতকার্য হওয়া অনেক বেশি সম্মানজনক। সে যেন শিখে দুঃখের মাঝে কীভাবে হাসতে হয়। আবার কান্নার মাঝে লজ্জা নেই এ কথাও সে যেন বুঝে। তাকে এ শিক্ষা দিবেন নিজের প্রতি যেন সুদৃঢ় আস্থা থাকে, আর তখনই তার সুগভীর আস্থা থাকবে মানবজাতির প্রতি।” ইতি- আপনার বিশ্বস্ত আব্রাহাম লিংকন।

বাদশাহ্ আলমগীরের শিক্ষকের মর্যাদা দানের কথা আজ যুগ যুগ ধরে সকলের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে আছে। এ পর্যায়ে কবি কাজী কাদের নেওয়াজের বিখ্যাত ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ শীর্ষক কবিতাটি স্মরণ করা যেতে পারে-

বাদশা আলমগীর

কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর

একদা প্রভাতে গিয়া দেখেন বাদশা

শাহাজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া

ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে

পুলকিত হৃদে আনত নয়নে

শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজের পায়ের ধূলি

ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ সঞ্চারী অঙ্গুলি।

*** *** *** *** *** *** ***

আজি হতে চির উন্নত হল শিক্ষা গুরুর শির

সত্যিই তুমি মহান উদার বাদশা আলমগীর।

এই বিখ্যাত ব্যক্তিগণ শিক্ষককে মহান মর্যাদার আসনে আসীন করে গেছেন। তাই বুঝা যায় সমাজে একজন শিক্ষকের অবদান কোনো অংশেই কম নয়; বরং গর্বে বুক ফুলিয়ে বলতে পারি, মানব কল্যাণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষকের অবদান একজন রাষ্ট্রপ্রধানের চেয়েও বেশি।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও সহকারী অধ্যাপক

(বাংলা, অব:)।