পথের শোভা ভাঁটফুল
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে মাড়ানো আমাদের এই বাংলাদেশ। এ দেশের প্রতিটি ঋতুই নতুন সৌন্দর্য ও সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়। প্রতিটি ঋতুই থাকে ভিন্ন বৈচিত্র্যের। সেই বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের একটা অংশ ফুল। ফুল মানুষের মনে নতুন নতুন ভাবনা ও কল্পনার সৃষ্টি করে। প্রাণে জাগায় ছন্দের দোলা। এই ভালো লাগার জগতে বুনোফুলের অবদানও অনেক। এ দেশের বনে জঙ্গলে পথের ধারে পতিত জমিতে অযতেœ অবহেলায় বেড়ে ওঠে এই সব বুনোফুল।
Printed Edition

নূরজাহান নীরা
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে মাড়ানো আমাদের এই বাংলাদেশ। এ দেশের প্রতিটি ঋতুই নতুন সৌন্দর্য ও সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়। প্রতিটি ঋতুই থাকে ভিন্ন বৈচিত্র্যের। সেই বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের একটা অংশ ফুল। ফুল মানুষের মনে নতুন নতুন ভাবনা ও কল্পনার সৃষ্টি করে। প্রাণে জাগায় ছন্দের দোলা। এই ভালো লাগার জগতে বুনোফুলের অবদানও অনেক। এ দেশের বনে জঙ্গলে পথের ধারে পতিত জমিতে অযতেœ অবহেলায় বেড়ে ওঠে এই সব বুনোফুল। তেমনি এক বুনোফুল হলো ভাঁটফুল। এক এক এলাকায় এক এক নামে এটি পরিচিত। বনজুঁই, ভাটফুল,ভাটিফুল, ঘন্টাকর্ণ, ঘেটুফুল ইত্যাদি। যে নামেই ডাকা হোক না কেনো এ ফুলের সৌন্দর্য ও মিষ্টি গন্ধে মুগ্ধ হতেই হয়। বসন্তের পাতাঝরা দিনে গাছের ডালগুলো যখন আকাশপানে চেয়ে থাকে পাতাহীন তখন পথের ধারে সৌন্দর্যের দ্যুতি ছড়ায় এই ভাঁটফুল। শীতের শেষ দিকেই ফুল আসা শুরু হয়। বসন্তের হাওয়া লাগতেই ফুলে ফুলে ভরে যায় গাছ। গুল্মজাতীয় ছোট গাছ এটি। দুই থেকে চার মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর পাতাগুলো দেখতে অনেকটা পানপাতার বা হৃৎপি-ের মত ডিম্বাকার।পাতা ৬- ৮ ইঞ্চি লম্বা হয়।পাতা গাড়সবুজ, মোটা ও খসখসে। গাছের শাখা প্রশাখা লম্বা ও খাড়া। শাখা প্রশাখা মেলে অনেকটা ঝোপের মতো হয়। প্রতিটা শাখা প্রশাখায় ফুল আসে।প্রতিটি ডালের পুষ্পদন্ডে ভরে ওঠে ফুলে। পুষ্পদন্ডে ফুলগুলো এমন ভাবে সাজানো মনে হয় এক একটি ফুলের তোড়া। সাদা পাপড়ি বিশিষ্ট মনোরম এই ফুলে মন আকৃষ্ট হবে সবারই। পথিকের চোখ আটকে যাবেই।পাঁচটি সাদা পাপড়ি,তার মাঝে হালকা লাল বেগুনি রঙের ছোঁয়া। মনে হয় সাদার মাঝে একটু আলতো তুলির আঁচড় পড়েছে। গুচ্ছ মঞ্জুরী। মঞ্জুরীগুলো বেশ লম্বা ও একটু কোকড়ানো।গাড় সবুজ গাছ তার মাথায় এই রূপের কারুকাজ। বসন্তকে রাঙিয়ে তোলে বুনো মমতায়। গ্রাম বাংলার মেঠোপথ বন জঙ্গল রেললাইনের পাশে ছড়িয়ে পড়ে ভাটফুলের মনমাতানো মিষ্টি সৌরভ। সৌন্দর্যের পাশাপাশি এই ফুলের কিছু ঔষধী গুণও আছে। কীটপতঙ্গের কাপড় এমনি সাপের কামড়েও এই গাছের পাতার রস ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও এই পাতার রস জ্বর ও কৃমিনাশক। কচিপাতার রস উদরাময়ে ব্যবহার করা হয়।
এ্যাজমা, টিউমার সহ কয়েকটি রোগে এর পাতা, ফুল,মূল সবই কার্যকরী।এই গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। রূপ ও গুনের অধিকারী এই ভাটফুলের আদিনিবাস এশিয়া মহাদেশের ভারত, বাংলাদেশ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্লোরোডেনড্রাম ভিসকোসাম। ইংরেজি নাম এষড়ৎু ইড়বিৎ।ভাঁটফুলের প্রায় ৪০০ প্রজাতি আছে। তবে বাংলাদেশে তিনটি প্রজাতি দেখা যায়। প্রকৃতির মায়ায় প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ও বেড়ে ওঠা এই গাছগুলোর বিস্তৃতি হোক আরো বেশি। ফুলের মোহনীয় রূপ দৃষ্টিগোচর হোক সব ফুলপ্রেমি মানুষের।