DailySangram-Logo-en-H90

টেক নিউজ

তিন দফা দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

বিভিন্ন অজুহাতে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের অভিযোগ গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে

কর্মক্ষেত্রে অবৈধ চাকরিচ্যুতির আদেশ বাতিল করে ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ চাকরিতে পুনর্বহাল এবং সেই সঙ্গে আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের চাকরিচ্যুত ও অধিকারবঞ্চিত কর্মীরা।

স্টাফ রিপোর্টার
Printed Edition

কর্মক্ষেত্রে অবৈধ চাকরিচ্যুতির আদেশ বাতিল করে ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ চাকরিতে পুনর্বহাল এবং সেই সঙ্গে আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের চাকরিচ্যুত ও অধিকারবঞ্চিত কর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘চাকরিচ্যুত ও অধিকারবঞ্চিত গ্রামীণফোন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’ এর ব্যানারে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের আহ্বায়ক আবু সাদাত মো. শোয়েব।

‎সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। অপর দুটি দাবি হচ্ছে- গত ২০১০-২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানের মুনাফার ৫ শতাংশ বিলম্ব বিতরণে জরিমানাসহ সকল বকেয়া অবিলম্বে পরিশোধ করা এবং শ্রমিকদের উপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালানোর দায়ে জড়িত গ্রামীণফোনের সিইও ও সিএমওসহ তাদের সকল অনুসারী অত্যাচারী ম্যানেজারসহ ইউনিয়নের বিতর্কিত নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

দাবি আদায় না হলে আরো কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হবে উল্লেখ করে সম্মেলনে বলা হয়, যতদিন শ্রমিকদের পাওনা ও দাবিগুলো মানা না হবে, ততদিন গ্রামীণ ফোনের বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচিসহ আরো কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বৈষম্যের শিকার বর্তমান এবং সাবেক শ্রমিকদের আইনগত পাওনা ‘অংশগ্রহণ তহবিল’ ও ‘কল্যাণ তহবিল’-এর বিলম্ব জরিমানার টাকা পরিশোধ না করে পরিকল্পিতভাবে আইন লঙ্ঘন করে টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা করছে। শ্রমিকদের বঞ্চিত করার হীন উদ্দেশ্যে গত ১৫ বছর মামলা ঝুলিয়ে রেখে এবং আইনগতভাবে পাওনা টাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে।

এতে আরও দাবি করা হয়, বিভিন্ন অজুহাতে গ্রামীণফোন লিঃ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের এই মেগা প্রকল্প হাতে নেয় এবং ছাঁটাইয়ের প্রকল্প ক্রমাগতভাবে বাস্তবায়ন করছে। নির্দিষ্ট সংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রকল্প হাতে নিয়ে সেই টার্গেট বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত গ্রামীণফোন অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। যেমন, ইচ্ছাকৃতভাবে ধরে রাখা, ফোন করে ভয়ভীতি প্রদর্শন, ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করে দেওয়া, যে কাউকে বদলি করা, অতিরিক্ত কাজের টার্গেট দেওয়া, জরুরি কাজের কথা বলে অফিসে তলব করা, কোড অফ কন্ডাক্ট ভঙ্গ করা, (জ) ট্রেনিং ও কাউন্সেলিং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা -যাতে করে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণে বাধ্য হয়। এতো কিছুর পর কেউ যদি স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তাৎক্ষণকি ছাঁটাইয়ের শিকার যার উদাহরণ কোন পূর্ব নোটিশ ছাড়াই গত ২০ জুন-২০২১ তারিখে শুধুমাত্র একটি আদেশের মাধ্যমে ১৫৯ জন দক্ষ ও অভিজ্ঞ স্থায়ী কর্মীকে আকস্মিকভাবে ছাঁটাই করা হয়।

এসব বেআইনি অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সাংবাদিক সম্মেলনে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গ্রামীণফোন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও তার শ্রমিকদের প্রতি দায়িত্বহীন আচরণ এবং শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত এক দশকে প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৭০% হ্রাস পেয়েছে, যা বর্তমানে মাত্র ১২০০ জন। এই ছাঁটাই প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের জোরপূর্বক স্বেচ্ছা অবসরে বাধ্য করা, মানসিক চাপ দেওয়া এবং আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

প্রেস কনফারেন্স শেষে জাতীয় প্রেস ক্লাব এর সামনে শতাধিক শ্রমিকের উপস্থিতিতে এক মানব বন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। সভা শেষে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ এর কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধ এবং সঙ্কট সমাধানের জন্য প্রয়োজনে আলোচনা করার আহ্বান জানানো হয়। সভায় বক্তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেন।