শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পাহাড়ী ধস ও বন্যা উপদ্রুত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসুন

সপ্তাহব্যাপী ভারী বর্ষণ, পাহাড় ধস, বজ্রপাত, পাহাড়িয়া পানির প্রবল তোড় এবং বন্যায় চট্টগ্রামে মহানগরী বাঁশখালী, সিতাকুন্ড, বান্দরবানের লামা, নাইক্ষংছড়ি, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং সিলেটে শতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানা গেছে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরানুযায়ী প্রবল বর্ষণ ও বন্যার ফলে উপরোক্ত প্রাণহানি ছাড়াও উপদ্রুত এলাকাসমূহে হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, পুল-কালভার্ট ধ্বংস হয়েছে এবং রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অবস্থার এতই অবনতি ঘটেছে যে সরকারকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দিতে হয়েছে এবং সিতাকুন্ডের কাছে একটি রেলসেতু নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সারাদেশের সাথে চট্টগ্রামের সরাসরি রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে সেতু মেরামতের কাজ শুরু করলেও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে আরো কমপক্ষে ১৫ দিন সময় লাগবে বলে জানা গেছে। সিলেট শহরসহ আশপাশের উপজেলাসমূহের অবস্থারও মারাত্মক অবনতি ঘটেছে বলে জানা গেছে। এদিকে আবার উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির সংবাদও পাওয়া গেছে। বন্দর নগরী গোটা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আমরা পাহাড় ধস ও বন্যায় শতাধিক ব্যক্তির দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারসমূহের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। উল্লেখ্য যে, ২০০৭ সালের ১১ জুন স্মরণকালের ভয়াবহ এক পাহাড় ধসে ১২৭ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছিল এবং ঐ সময়ে দেশব্যাপী এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যে জনসচেতনতার সৃষ্টি হয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার পাহাড় ধস রোধ এবং ভবিষ্যতের বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য কিছু প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। জাতির দুর্ভাগ্য যে, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঐ সময়ে গৃহীত দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচিগুলোর বাস্তবায়ন বন্ধ করে দেয়। ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের বাস্তুহারা পরিবারসমূহ পুনরায় পাহাড়ের পাদদেশে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করে। সরকার যদি তার দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে এতগুলো জীবন অকালে ঝরে পড়তো না বলে আমরা মনে করি। একইভাবে পানিবদ্ধতা চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি পুরাতন সমস্যা হলেও সরকার এবং সিটি কর্পোরেশন তা দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। অভিযোগ উঠেছে যে, নর্দমা তৈরি ও পরিষ্কারের মাধ্যমে পানিবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য সরকার সিটি কর্পোরেশনের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ ছাড় করেননি। কর্পোরেশন ওয়াসাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতাও পায়নি। যদিও পয়ঃনিষ্কাশন ও ড্রেনেজের কাজ মুখ্যত ওয়াসার তথাপিও সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক ভূমিকা এখানে একেবারে ছোট নয়। সমন্বয়হীনতা, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা এবং অর্থ ছাড়ে বিলম্বের ফলে নগরবাসীর দুর্দশার দায়ভার আমরা মনে করি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপরই বেশি বর্তায়। এই অবস্থায় তাদের ভূমিকার মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই মুহূর্তে দুর্গত এলাকার মানুষের দুর্দশা লাঘবের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ। এ জন্য তাদের তাৎক্ষণিক ত্রাণ বিশেষ করে নিরাপদ আশ্রয়, খাদ্য-পানীয় এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এরপর আসে তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি। যারা বাড়িঘর হারিয়েছেন তাদের গৃহ নির্মাণের জন্য সরকারি এবং বেসরকারী উভয় প্রতিষ্ঠানসমূহকেই এগিয়ে আসতে হবে। আসন্ন আমন মওসুমে রোপা আমনের চারা তৈরির জমি এখন পানির নীচে। পানি সরে গেলে সেখানে চারা তৈরি করে জমিতে রোপণের আর সময় থাকবে না। কাজেই বিকল্প স্থানে ও বন্যামুক্ত এলাকায় আমনের চারা তৈরি করে উপদ্রুত এলাকায় সময়মত সরবরাহের ব্যবস্থা করা জরুরী বলে আমরা মনে করি। শাক-সবজি চাষের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। নগদ অর্থ ও দ্রব্যসামগ্রীর আকারে সাহায্য উভয়ই দরকার। দুর্গত মানুষকে এই সাহায্য প্রদানে এগিয়ে আসার জন্য দলমত নির্বিশেষে সকলের প্রতি আমরা আহবান জানাচ্ছি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ