শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবসাবাণিজ্যে ধস

খুলনা অফিস : গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবসাবাণিজ্যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।  দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মংলায় মালামাল বোঝাই খালাস কাজ বন্ধ থাকার কারণে এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি ব্যাহত হচ্ছে। টানা বর্ষণের কারণে আমদানি-রফতানি, পাইকারি, খুচরা, ঈদবাজারে ব্যাপক মন্দাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী বর্তমানে ব্যবসায় চরম ধস নেমেছে। দুর্যোগ কেটে গেলে তারা কিছুটা হলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে জানিয়েছেন।

গতকাল বুধবার খুলনার পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে জানা গেছে, একটানা ৮ দিন টানা বৃষ্টির কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। প্রথম রমযান থেকে শুরু হওয়া একটানা ভারি বর্ষণ চলে গতকাল বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত। এরপর কয়েক ঘণ্টা আবহাওয়া ভালো থাকলেও মাঝেমাঝে বৃষ্টি হচ্ছিলো। সকাল থেকে আবহওয়া কিছুটা ভালো থাকায় অল্প স্বল্প বেচাকেনা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।

আক্তার চেম্বারের ড্রেস কটেজের মালিক মো. আবু জাফর বলেন, ১০ রমযানের মধ্যে অধিকাংশ টেইলার্সগুলোতে অর্ডার নেয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এবার একেবারেই অর্ডার নেই। গতকাল তারা দু-চারটি অর্ডার পেয়েছেন। একই মাকের্টের রেড রোজ টেইলার্সের মাস্টার গোবিন্দ বলেন, মোটামুটি অর্ডার পেয়েছি, তবে বৃষ্টির কারণে বাড়তি চাপ নেই। তাদের যথেষ্ঠ কারিগর রয়েছে। ২০/২৫ রমযান পর্যন্ত অর্ডার নেয়া যাবে। স্টুডেন্ট টেইলার্সের ম্যানেজার প্রণব মজুমদার বলেন, তারা আগামী এক সপ্তাহ অর্ডার নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন। কাপড় বিক্রেতা বিসমিল্লাহ ক্লথ স্টোরের মালিক শমসের আলি মিন্টু বলেন, বেচাকেনা খুবই খারাপ। বৃষ্টিতে ভীষণ ক্ষতি হয়েছে। হাজী মালেক চেম্বারের ত্বহা ফ্যাশনের মালিক সেলিম রেজা বলেন, দুর্যোগের কারণে ব্যবসায় সাময়িক ক্ষতি হয়েছে। তবে আজ (গতকাল) বাজার ভালো। একই মাকের্টের স্টুডিও ব্যাবসায়ী, ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন বিক্রেতারা জানান, তাদের ব্যবসা ভালো না। জুতা স্যান্ডেল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘এপেক্স' এর কর্মচারী সুফিয়ান বলেন, ৮ দিন পর আজ কিছু কাস্টমার আসছে। বিভিন্ন স্কুল ও ভ্যানিটি ব্যাগ, সুটকেস প্রস্তুতকারক ও পাইকারি বিক্রেতা শক্মখ মার্কেটের নিউ ঢাকা লেদার হাউসের মালিক মতিয়ার রহমান বলেন, এখন তাদের সিজেন নয় তার পরেও ঈদে ভ্যানিটি ব্যাগের যথেষ্ট চাহিদার কথা চিন্তা করে নতুন মডেলের ব্যাগ তৈরি করেছেন। বৃষ্টি থাকায় জেলা-উপজেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসছে না।

পবিত্র ঈদ উপলক্ষে নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে মাসব্যাপী ঈদ তাঁতবস্ত্র ও হস্ত কুটিরশিল্প মেলা শুরু করা যায়নি। গত ৬ রমযান থেকে এ মেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অতিবৃষ্টির কারণে চালু করা যায়নি। গতকাল বেলা ১২টার দিকে মেলায় দেখা যায় দুটি স্টল ছাড়া পুরো স্টলগুলো ফাকা পড়ে আছে। বৃষ্টির কারণে ওই দুটি স্টলে অল্প মালামাল ওঠানো হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী মার্কেটের গাজী ইলেকট্রনিক্সের মালিক জি এম আজম, দরবেশ চেম্বারের প্রাইম গার্মেন্টসের আব্দুর রাজ্জাক, দোলন গার্মেন্টেসের কৃষ্ণ বাবু, রাবিব শাড়ি হাউসের জিয়া বলেন, ব্যবসা ভালো নেই। তাদের মধ্যে অনেকেই মন্দার কারণে রাতে ঘুমুতে পারেন না বলে জানান। ঈদের আর ২০ দিন বাকি এ সময়ে তারা লস কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না বলে জানান। রব সুপার মার্কেটের ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী, বেকারি, কাঁচামাল, হোটেল, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কেউ ভালো নেই। ভালো নেই ভ্যানযোগে কাঁচামাল ও মাছ বিক্রেতারা। একটানা বৃষ্টি তাদের যাত্রা থামিয়ে দিয়েছে। খেটেখাওয়া মানুষের অবস্থা আরো শোচনীয়। নির্মাণশ্রমিক কাদের মিয়া বলেন, বৃষ্টির কারণে ৫ দিন কাজ বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্ট পোহাতে হয়। বড় বাজরের কাঁচামাল পাইকার আসাদুজ্জামানে বলেন, বৃষ্টির কারণে তার আড়তে থাকা পেঁয়াজ পচে গেছে। এ লস কাটিয়ে উঠতে তাদের সময় লাগবে। একইভাবে চাল, ডাল, তেল ব্যবসায়ীরা জানালেন তারা কেউ ভালো নেই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ